images

ইসলাম

শেষ যুগে যেভাবে চলতে বলেছেন নবীজি

ধর্ম ডেস্ক

০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ পিএম

সময় যত কেয়ামতের দিকে ঘনিয়ে যাবে ততই ফিতনা বেড়ে যাবে। ঈমান ও ইসলামের ওপর টিকে থাকা তখন সবার পক্ষে সহজ হবে না। এমন কঠিন সময়ে হাদিসের নির্দেশনা হলো- নিজেকে নেক আমলে ব্যস্ত রাখা এবং একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরের পরিবেশে না যাওয়া। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, অচিরেই এমন ফিতনার আত্মপ্রকাশ হবে, বসে থাকা ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি হতে উত্তম হবে। আর দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি হতে উত্তম হবে। আর চলমান ব্যক্তি দ্রুতগামী ব্যক্তি হতে ভালো থাকবে। (মুসলিম: ৭১৩৯)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘ফিতনার সময় ঈমানদারের করণীয় হলো- সর্বদা চুপ থাকা। এত পরিমাণ চুপ থাকা, যার কারণে কোনো ফিতনা তাকে আকৃষ্ট করতে না পারে। (আল ফিতান: ৭৩৫) হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে, ফিতনা তাকে ঘিরে ধরবে। তখন কেউ যদি কোনো আশ্রয়ের জায়গা কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন আত্মরক্ষা করে।’(বুখারি: ৭০৮১)

আরও পড়ুন: কেয়ামতের বড় ও ছোট আলামতগুলো জেনে নিন

এছাড়াও আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া করা উচিত। হুজাইফা (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, মানুষের ওপর এমন একটা যুগ আসবে যখন কেউ রক্ষা পাবে না, সে ছাড়া যে দোয়া করছে, ডুবন্ত মানুষের দোয়ার মতো। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৩৬৪৪৭)

অর্থাৎ নদীতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তি যেভাবে বাঁচার আকুতি নিয়ে দোয়া করতে থাকে, সেভাবে দোয়া করা। পাশাপাশি নিজের নজরের হেফাজত করা। ফিতনার বিষয় সম্পর্কে জানতেও বের না হওয়া। ফিতনার দিকে দৃষ্টি বা উঁকি না দেওয়া। সবসময় সৎ কাজ আঁকড়ে ধরা, অসৎ কাজ পরিহার করা, সর্বসাধারণকে এড়িয়ে মুত্তাকিদের সঙ্গে চলাফেরা করা এবং পাপাচারীদের সঙ্গ ত্যাগ করা ফিতনাকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ আমল। 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন ফিতনা তীব্র আকার ধারণ করবে তখন তোমরা সৎ কাজকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত থাকবে। তোমাদের মাঝে বিশেষ লোক যারা রয়েছে তাদের প্রতি মনোনিবেশ করবে এবং সর্বসাধারণকে এড়িয়ে চলবে।’ (আল ফিতান: ৭২১)

আরও পড়ুন: ‘দাসী তার মনিবকে জন্ম দেবে’ হাদিসের অর্থ কী?

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, ফিতনার যুগে কেউ যদি জান্নাতের উপযুক্ত হতে চায়, তার জন্য বিশেষ তিনটি করণীয় রয়েছে। হজরত উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহর (স.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, সেসময় নাজাতের উপায় কী? তিনি বললেন, নিজের জিহ্বা আয়ত্তে রাখবে, নিজের ঘরে পড়ে থাকবে এবং নিজের পাপের জন্য রোদন করবে। (মেশকাত: ৪৮৩৭)

সর্বযুগের অন্যতম বড় ফিতনা হচ্ছে নারীর ফিতনা। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, কোনো নারীর ওপর তোমার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি বারবার দৃষ্টিপাত কর না; বরং দৃষ্টি অতিসত্বর ফিরিয়ে নিও। কারণ তোমার জন্য প্রথমবার ক্ষমা, দ্বিতীয়বার নয়। (মুসনাদে আহমদ: ১৩৬৯) নবীজি (স.) আরও বলেছেন, পুরুষের জন্য নারী জাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোনো ফিত‌না আমি রেখে যাইনি। (বুখারি: ৫০৯৬)

এই উম্মতের আরও একটি বড় ফিতনা হচ্ছে- ধন-সম্পদের ফিতনা, যা আল্লাহর আনুগত্য থেকে মানুষকে গাফেল রাখে। হজরত কাব ইবনে ইয়াজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোনো না কোনো ফিত‌না ছিল। আর আমার উম্মতের ফিত‌না হলো ধন-সম্পদ। (তিরমিজি: ২৩৩৬)

আরও পড়ুন: দুনিয়ার মোহ যেভাবে সফলতার পথে বাধা

ফিতনার যুগে গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হচ্ছে কোরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা, যা না থাকলে যেকোনো সময় ফিতনা গ্রাস করে ফেলতে পারে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি তা আঁকড়ে ধরে থাকো, তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নত।’ (আত-তারগিব ওয়াত তাহরিব: ৪০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কঠিন ফিতনার দিনে ঈমান ঠিক রাখার তাওফিক দান করুন। হাদিসের নির্দেশনা যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।