শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

দুনিয়ার মোহ যেভাবে সফলতার পথে বাধা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জুন ২০২২, ০২:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

দুনিয়ার মোহ যেভাবে সফলতার পথে বাধা

দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতি লালায়িত হওয়ার মধ্যে উন্নতি নেই, বরং আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর ওপর ভরসা করে পরিশ্রম করার মধ্যে নিহিত চূড়ান্ত সফলতা। দুনিয়ার মোহ আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে সে মৃত্যুর সময়ের অসহায়ত্ব, অন্ধকার কবরের ভয়াবহতা, হাশর, জাহান্নাম সম্পর্কে গাফেল হয়ে পড়ে। আল্লাহর আদেশ নিষেধের গুরুত্ব তার মধ্যে কাজ করে না।

এমনকি ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করার সৌভাগ্য থেকেও সে বঞ্চিত হয়। ফলে চিরস্থায়ী উন্নতি লাভ তো হয় না, উপরন্তু দুনিয়াবি সফলতা থেকেও তাকে মহান আল্লাহ বঞ্চিত করেন। আখেরাত ভুলে দুনিয়ার প্রেমে যারা পাগল, তাদের ব্যাপারে আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে—


বিজ্ঞাপন


 যে ব্যক্তি তার সব চিন্তাকে একই চিন্তায় অর্থাৎ আখেরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে, সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। (ইবনে মাজাহ: ২৫৭)

অতিশয় কর্মব্যস্ত লোককে আল্লাহ কর্মের মধ্যেই ডুবিয়ে রাখেন। নিমজ্জিত রাখেন হতাশায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মহাপবিত্র আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর হতাশা দিয়ে পূর্ণ করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব না। (ইবনে মাজাহ: ৪১০৭)

অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করো, আমি তোমার অন্তর ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করব না। (তিরমিজি: ২৪৬৬)

অতএব আমাদের উচিত দুনিয়া অর্জনের পেছনে জীবনটা নষ্ট না করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। দুনিয়ার জন্য যতটুকু দরকার, শুধু ততটুকুই করা। তবেই, আল্লাহ আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ফলে জীবনে স্থিরতা ফিরে আসবে এবং আসল সফলতা অর্জন হবে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—


বিজ্ঞাপন


যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্র করে সুসংহত করে দেবেন, তখন তার কাছে দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দেবে। আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির গরিবি ও অভাব-অনটন দুই চোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়ায় সে এর চেয়ে বেশি পাবে না। (তিরমিজি: ২৪৬৫)

রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের নিয়ে দারিদ্র্যের ভয় করি না। কিন্তু এ আশঙ্কা করি যে, তোমাদের ওপর দুনিয়া এমন প্রসারিত হয়ে পড়বে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে। (সহিহ বুখারি: ৩১৫৮)

আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা কেবল আমার ইবাদত করবে’ (সুরা জারিয়াত: ৫৬)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হেদায়াত দান করুন। দুনিয়ার মরীচিকার মোহ ত্যাগ করে পরকালকে প্রাধান্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর