ধর্ম ডেস্ক
১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ পিএম
আল্লাহ তাআলা সব বান্দাকেই রহমত করেন, দয়া করেন। আল্লাহর এই দয়ার শুকরিয়া করা ও সবক্ষেত্রে তাঁরই ওপর নির্ভর করা বান্দার কর্তব্য। আসলে আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করা ছাড়া বান্দার কোনো উপায়ও নেই। কারণ, তিনি বান্দাকে খাওয়ান, পরান, সার্বক্ষণিক হেফাজত করেন। তাঁর কোনো ঘুম নেই, বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না। তিনি অবিরত সৃষ্টিকূলকে রহমত ও দয়া করে যাচ্ছেন। তাঁর ওপরই তো ভরসা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর ভরসা করো সেই জীবিত সত্ত্বার (আল্লাহর) ওপর, যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না।’ (সুরা ফুরকান: ৫৮)
মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভরশীলতা মুমিনের অন্যতম গুণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে আল্লাহর ওপরেই ভরসা করো।’ (সূরা মায়েদা: ২৩)
আল্লাহর ওপর ভরসাকারীদের নগদ পুরস্কার হলো- তিনিই ওই বান্দার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বান্দার আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। ওই বান্দার জীবিকা, নিরাপত্তা সবকিছুর দায়িত্ব তিনি বিশেষভাবে গ্রহণ করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য বেরোনোর পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে জীবিকা দেন যা সে ভাবতেও পারে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে তিনি তার জন্য যথেষ্ট হন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার কাজ চূড়ান্তকারী। অবশ্যই আল্লাহ প্রত্যেক কাজের জন্য একটা পরিমাপ ঠিক করে রেখেছেন।’ (সুরা তালাক: ২-৩)
আরও পড়ুন: বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা কেমন?
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্ম বিধায়ক। এ কথা তিনি বলেন, যখন তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়।’ (বুখারি, রিয়াজুস সালেহিন: ১/৭৬)
ঈমানদারদের জন্য শিক্ষা হলো- পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, আল্লাহর ওপরই ভরসা করতে হবে। আর তাঁর ওপর ভরসাকারীদের জন্য চিন্তার কোনো কারণ নেই। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ভরসা করো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে এমনভাবে রিজিক দান করবেন, যেমন পাখিদের দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মেশকাত: ৫০৬৯)
হজরত আবু বকর (রা.) আল্লাহর রাসুল (স.)-এর সঙ্গে হিজরতের সময়কার ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমরা যখন গর্তে আশ্রয় নিলাম। তখন আমি নবীজি (স.)-কে বললাম, যদি কাফেররা তাদের পায়ের নিচের দিকে তাকায়, তাহলে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবু বকর! আপনি কি মনে করেন, তারা দু’জন? আল্লাহ তাদের তৃতীয়জন রয়েছেন।’ (বুখারি: ৩৬৫৩)
আরও পড়ুন: নবীজির প্রতি মুমিনের ভালোবাসা যেমন হওয়া উচিত
উল্লেখিত হাদিসটি আল্লাহর ওপর ভরসার সুন্দর উদাহরণ। নবীজি একেবারেই নিশ্চিত ছিলেন যে, শত্রু দেখতে পাবে না। অথচ শত্রু তখন মাথার ওপরে ছিল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘটনাটি তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, বিষণ্ণ হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা তাওবা: ৪০)
আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করার মানে এই নয় যে আসবাব ও উপকরণ গ্রহণ করা বৈধ। কেননা আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব তথা উপকরণের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন। তাই আসবাব বা উপকরণ গ্রহণ করতে হবে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন হজ করত কিন্তু সঙ্গে পাথেয় নিয়ে আসত না। আবু মাসউদ বলেন, ইয়েমেনের কতিপয় লোক হজে যেত; কিন্তু সঙ্গে পাথেয় আনত না এবং তারা বলত যে আমরা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি। অথচ মক্কায় পৌঁছার পর তারা ভিক্ষা করত। ফলে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমরা হজের সফরে সঙ্গে পাথেয় নিয়ে যাবে, আর জেনে রেখো, তাকওয়াই হলো উত্তম পাথেয়। (আবু দাউদ: ১৭৩০)
হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘রিজিক অন্বেষণের ক্ষেত্রে কোনো উপায়-উপকরণ অবলম্বন করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়। যেমন—কোনো যানবাহনে আরোহণ করেই গন্তব্যস্থলে কেউ নিরাপদে পৌঁছে যাবে তার নিশ্চয়তা নেই; বরং নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে।’ ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘তাওয়াক্কুল হলো ইমানের অর্ধেক। আর দ্বিতীয় অর্ধেক হলো, আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য শরিয়ত সমর্থিত বৈধ উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়।’
আরও পড়ুন: জান্নাতে প্রিয়নবীজির সান্নিধ্য লাভের আমল
তাই জীবনে চলার পথে আমাদের যেমন বৈধ উপায়-উপকরণ অবলম্বন করতে হবে। তেমনি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থাও রাখতে হবে। তাহলেই মিলবে আল্লাহ তাআলার বিশেষ দয়া ও রহমত।
তাওয়াক্কুলকারীদের জন্য আখেরাতেও বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। সহিহ বুখারির এক হাদিসে বর্ণিত আছে, তাওয়াক্কুলের পুরস্কার বিনা হিসাবে জান্নাত। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমার উম্মতের সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক, যারা ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেয় না, শুভ-অশুভ মানে না এবং তাদের প্রতিপালকের ওপরই ভরসা রাখে। (বুখারি: ৬৪৭২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবসময় সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার তাওফিক দান করুন। আামিন।