images

ইসলাম

যে ২ আমলে গুনাহ নেকিতে পরিণত হয়

ধর্ম ডেস্ক

২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৪ পিএম

আল্লাহ তাআলার অনেকগুলো গুণের মধ্যে দুটি বিশেষ গুণ হলো- তিনি পরম করুণাময় ও ক্ষমাশীল। বান্দার গুনাহের বোঝা অতিরিক্ত হয়ে গেলে এমনকি আকাশ-জমিন ছেয়ে গেলেও দয়াময় আল্লাহ বান্দার জন্য রহমত ও ক্ষমার দরজা খোলা রাখেন। তবে, এজন্য বান্দাকে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে এবং তাঁর দিকেই ঝুঁকতে হবে। এখনে এমন দুটি আমল তুলে ধরা হলো, যার কারণে মহান আল্লাহ বান্দার গুনাহকে নেকিতে পরিণত করে দেন।

১. তাওবা 
গুনাহের বোঝা যত বড়ই হোক, হতাশ হয়ে বসে থাকা যাবে না। আন্তরিক তওবা করলে দয়াময় আল্লাহ বান্দার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এমনকি তাওবার কারণে কখনও অতীতের গুনাহগুলোকে নেকিতে পরিণত করে দেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—‘কিন্তু যারা তাওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। (সুরা ফুরকান: ৭০)

এর একটা অর্থ এই যে, মহান আল্লাহ তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। ইসলাম গ্রহণের আগে সে পাপাচার করত, এখন সে সৎকর্ম করে, আগে শিরক করত, এখন শুধুমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করে। আগে কাফেরদের সঙ্গে মিলিত হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়ত। আর এখন সে মুসলিমদের দলভুক্ত হয়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ইত্যাদি। এর অন্য একটি অর্থ— সত্যিই তার পাপগুলো নেকি দিয়ে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। এর প্রমাণ হাদিসে পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: তাওবা করার নিয়ম 

আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমি অবশ্যই চিনি— জাহান্নাম থেকে নাজাতপ্রাপ্ত সর্বশেষ জাহান্নামি এবং সর্বশেষ জান্নাতিকে। এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, অতঃপর আল্লাহ বলবেন, তার ছোট পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো। বড় পাপগুলো গোপন রাখো। অতঃপর তাকে বলা হবে- তুমি অমুক অমুক পাপ; অমুক অমুক দিন করেছ। অমুক অমুক পাপ; অমুক অমুক দিন করেছ। তিনি বলেন, অতঃপর তাকে বলা হবে- তোমার জন্য প্রত্যেক পাপের পরিবর্তে একটি করে নেকি। তিনি বলেন, অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব আমি অনেক কিছু (গুনাহ) করেছি, এখানে তা দেখছি না। তিনি বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে দেখেছি হাসতে। এমনকি তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। (মুসলিম, হাদিসে কুদসি: ৫৭)

২. জিকির
আল্লাহর জিকির অনেক বড় মাপের ইবাদত। হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশ করার পর জান্নাতবাসীরা দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস করবে না, শুধু ওই সময়ের জন্য আফসোস করবে, যা দুনিয়াতে আল্লাহর জিকির ছাড়া অতিবাহিত করেছে।’ (শুআবুল ঈমান: ৫১২; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১৬৭৪৬)

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহর জিকির এত বেশি করতে থাক যে, লোকেরা পাগল বলে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/৬৮, ৭১, হাদিস: ১১৬৫৩; ইবনে হিববান: ৮১৪)

আরও পড়ুন: সারাদিন ৬ জিকিরের অবিশ্বাস্য ফজিলত

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যখন কিছু মানুষ আল্লাহর জিকিরের জন্য একত্রিত হয় এবং  আল্লাহর সন্তুষ্টিই একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তখন আসমান হতে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, তোমাদেরকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের গোনাহসমূহ নেকিতে পরিণত হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/১৪২, হাদিস: ১২৪৫৩; শুআবুল ঈমান: ৫৩৪)

কোরআন ও হাদিসে জিকিরের আরও অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহর জিকিরের চেয়ে আজাব থেকে অধিক নাজাত দানকারী আর কোনো আমল নেই।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১৬৭৪৫)

আর আল্লাহ তাআলা তো বলেই দিয়েছেন- وَ لَذِكۡرُ اللّٰهِ اَكۡبَرُ ‘আর আল্লাহর জিকিরই সর্বশ্রেষ্ঠ’। (সুরা আনকাবুত: ৪৫) এবং মহাপুরস্কার কেবল জিকিরকারীদের জন্যই। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অধিক জিকিরকারী পুরুষ ও জিকিরকারী নারী, তাদের জন্য আল্লাহর প্রস্ত্তত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সূরা আহজাব: ৩৫)