ধর্ম ডেস্ক
২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০৫ পিএম
আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া এক বিন্দু পানির মতো। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহর শপথ! ইহকাল-পরকালের তুলনা অতটুকুই, যেমন তোমাদের কেউ তার এ আঙ্গুলটি সমুদ্রে পানিতে ভিজিয়ে দেখল যে, কতটুকু পরিমাণ এতে পানি লেগেছে। বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৮৫৮)
তাই মুমিনের একমাত্র চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত আখেরাত বা পরকাল। দুনিয়াবি জীবনের জন্য প্রয়োজনের বেশি সময় নষ্ট করা মুমিনের উচিত নয়। আয়েশি জীবনের নেশায় মত্ত হয়ে যারা আখেরাতকে ভুলে যায়, তারা বোকা ও চরম দুর্ভাগা। আর যাদের চিন্তার বিষয় পরকাল তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্র করে সুসংযত করে দিবেন, তখন তার নিকট দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দিবে। আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির গরিবি ও অভাব-অনটন দুচোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দিবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চাইতে বেশি পাবে না।’ (সুনানে তিরমিজি: ২৪৬৫)
আরও পড়ুন: যে আমল করলে জাহান্নামে যেতে হবে না
দুনিয়াকে আল্লাহ তাআলা মূলত পরীক্ষাস্বরূপ লোভনীয় করেছেন। যারা এর পেছনে লালায়িত হবে না এবং পরকালকে প্রাধান্য দেবে, তাদেরকেই আল্লাহ তাআলা জান্নাতের জন্য বেছে নেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নারী, সন্তান, সোনা-রুপার অঢেল ধনসম্পদ, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদি পশু, খেত-খামার এসব জিনিসের প্রতি মানুষের ভালোবাসা শোভনীয় করে তোলা হয়েছে। এসব মূলত দুনিয়ার জীবনের ভোগের সামগ্রী মাত্র। স্থায়ী জীবনের উৎকৃষ্ট আশ্রয় তো আল্লাহ তাআলার কাছেই রয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা কুফরি করেছে দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। তারা মুমিনদের উপহাস করে। অথচ কেয়ামতের দিন মুত্তাকিরাই তাদের ওপর থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অপরিমিত রিজিক দান করেন।’ (সুরা বাকারা: ২১২)
আরও পড়ুন: মুসলিম হয়েও জান্নাতে যাবেন না যারা
যারা আখেরাতকে ভুলে দুনিয়ার জন্য বেশি সময় ব্যয় করে, তারা মূলত ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য বৃহৎ স্বার্থকেই ধ্বংস করছে। উপরন্তু তার ক্ষুদ্র স্বার্থটাও আদায় হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। সেদিকে ইঙ্গিত করেই নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার সব চিন্তাকে একই চিন্তায় অর্থাৎ আখেরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে, সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। (ইবনে মাজাহ: ২৫৭)
অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করো, আমি তোমার অন্তর ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করব না। (তিরমিজি: ২৪৬৬)
আরও পড়ুন: নবীজি যাদের জাহান্নামে দেখেছেন
অতএব, মুমিন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত হবে- চিরস্থায়ী আখেরাতের জন্য কাজ করা। দুনিয়ার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, শুধু ততটুকু দুনিয়ার জন্য করা। অন্যথায় একুল-ওকুল দুকুল শেষ হয়ে যাবে। রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের নিয়ে দারিদ্র্যের ভয় করি না। কিন্তু এ আশঙ্কা করি যে, তোমাদের ওপর দুনিয়া এমন প্রসারিত হয়ে পড়বে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে। (সহিহ বুখারি: ৩১৫৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেকটি বিষয়ে নবীজির নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার পেছনে লালায়িত না হয়ে পরকালকে প্রাধান্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।