images

ইসলাম

ইবাদতে আগ্রহ না থাকা কি আল্লাহর শাস্তি?

ধর্ম ডেস্ক

২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম

মুসলিম হয়েও নামাজ-রোজা-জাকাতের মতো মহান ইবাদতের মূল্য নেই অনেকের কাছে। নেই হালাল-হারামের পার্থক্য। আল্লাহ কত মহান জানার পরও, দিনে পাঁচবার তাঁকে সেজদা করতে হবে—এ জরুরি নির্দেশনা অবগত থাকা সত্ত্বেও সরাসরি অমান্য করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে। ৩০ দিন রোজা রাখার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহর, তা জেনেও মান্য করছে না। জাকাত দেওয়া যে ফরজ, এ কথা সে বুঝেও বুঝে না। এভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে, কিন্তু তাওবা করার ইচ্ছাও মনে জাগে না। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরণের মানুষ আসলে গাদ্দার ও অহংকারী। তাদের প্রথম শাস্তিটাই হলো- আল্লাহর ইবাদত করতে তাদের মন চাইবে না। মজা অনুভব করবে কেবল গুনাহের কাজে। 

বস্তুত যে অন্তর গুনাহের কাজে মজা পায়, সে অন্তরে নেক আমলের আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে যায়। তওবা না করলে একসময় নেক আমলের প্রতি অনীহা প্রবল হয়ে যায়। হৃদয়ে তখন মরিচা পড়ে। এসব হতভাগাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘কখনো না, বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয় মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।’ (সুরা মুতাফফিফিন: ১৪)

আরও পড়ুন: যে দোয়া ১০ বার পড়লে গুনাহ করার ইচ্ছা জাগবে না

গুনাহ করার ইচ্ছা বেড়ে যাওয়া এবং ইবাদতের আগ্রহ কমে যাওয়াকেই আল্লাহর একটি আজাব বলে চিহ্নিত করেছেন আলেমরা। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ) বলেছেন, ‘আজাব হিসেবে এতটুকুই যথেষ্ট যে, গুনাহের কারণে আপনি আল্লাহর ইবাদত করতে পারছেন না, যদিও আপনার মন চাচ্ছে।’ (ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ, আদ-দাউ ওয়াদ-দাওয়া: ৮৭)

অনেকে আবার আখেরাতকেই বিশ্বাসই করে না। ফলে নেক আমলে তাদের আগ্রহ জাগে না। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকার প্রদর্শন করেছে।’ (সুরা নাহল: ২২)

প্রবৃত্তির ফাঁদে পা দিয়ে গুনাহে লিপ্ত হওয়া মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। কিন্তু গুনাহের পর গোঁ ধরে বসে থাকা, অনুতপ্ত ও লজ্জিত না হওয়া অনুচিত। এরাই নিজেদেরকে শাস্তির উপযুক্ত করে নেয়। আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তি অনিবার্য করে নেয়। কোরআন-হাদিসের ভাষ্যমতে, এধরনের লোক নিতান্তই অজ্ঞ। তাদের হৃদয়ে আল্লাহ তাআলা মোহর মেরে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এমনিভাবে আল্লাহ জ্ঞানহীনদের অন্তরে মোহর মেরে দেন।’ (সুরা রুম: ৫৯)

আরও পড়ুন: তাওবার পর আবারও গুনাহ করলে করণীয়

পক্ষান্তরে যারা গুনাহের পর স্বীয় কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং একনিষ্ঠভাবে তাওবা করে আল্লাহ তাদের প্রতি নিজ সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার কথা ঘোষণা  দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা: ২২২)

আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করা, আল্লাহকে ভয় করা এবং সবসময় তাঁরই অনুগত থাকা লোকদের জন্য আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার দরজা সবসময় খোলা। তাদেরকেই আল্লাহ তাআলা ইবাদতের সুযোগ দিয়ে ধন্য করেন। মৃত্যুর আগে তাদেরকে বেশি বেশি নেক আমলের সুযোগ দিয়ে পবিত্র করে নেন। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর বান্দা সম্পর্কে কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন তাকে আমল করতে দেন। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (স.)! কীভাবে তিনি আমল করতে দেন? তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে তিনি তাকে নেক আমলের তাওফিক দান করেন’। (তিরমিজি: ২১৪২; মেশকাত: ৫২৮৮)

আরও পড়ুন: ১৪ পাপের শাস্তি ‍দুনিয়ায় দেওয়া হয়

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাকে মৃত্যুর আগে পবিত্র করেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, পবিত্র করেন কীভাবে? তিনি বললেন, মৃত্যুর আগে তাকে নেক আমলের তাওফিক দেন। অতঃপর তার উপর তার মৃত্যু ঘটান’। (সহিহুল জামে: ৩০৬)

নবীজি (স.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণ চান, সেই বান্দাকে সুমিষ্ট করেন। জিজ্ঞেস করা হলো সুমিষ্ট কী? তিনি বললেন, মৃত্যুর আগে ভালো কাজ তার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। অতঃপর এর উপরই তার মৃত্যু হয়’। (আহমদ: ১৭৮১৯; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৪২; সহিহাহ: ১১১৪)