images

ইসলাম

৬ জিনিস আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাইবেন

ধর্ম ডেস্ক

০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৬ পিএম

আল্লাহ তাআলারর দয়া অসীম। তিনি তাঁর সৃষ্টিকূলের প্রতি বড়ই মেহেরবান। চাইলেও তিনি দেন, না চাইলেও দেন, মুসলিম-অমুসলিম সবাইকে দিয়ে তিনি ধন্য করেন। তবে, মুমিনদের জন্য শোভনীয় হলো- আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়া; যেকোনো বিষয়ে তাঁর শরণাপন্ন হওয়া। এটিই অনুগত বান্দার আদব ও বৈশিষ্ট্য। কারণ, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কেউ কিছু অর্জন করতে পারে না, আবার তাঁর কাছে চাওয়ার জন্য তিনি আদেশ করেছেন। এতে তিনি দিতেই থাকেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে  ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (‘সুরা মুমিন:  ৬০)

কোরআন-হাদিসের আলোকে আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়ার মতো ৬টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো।

১. শারীরিক সুস্থতা
শারীরিক সুস্থতা মহান আল্লাহর অপার নেয়ামত। আবার সুস্থ শরীর আল্লাহর দেওয়া আমানতও বটে। এই নেয়ামত ও আমানতের যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘দুইটি নেয়ামত এমন আছে, যে দুইটিতে (অবহেলার কারণে)  অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর তা হলো, সুস্থতা আর অবসর সময়।’ (বুখারি: ৬৪১২) 

স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে অবহেলা করা বা স্বেচ্ছায় শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষত করা ইসলামে নিষিদ্ধ। উবাদা বিন সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ফায়সালা দেন অনুমোদিত নয় নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং অন্যকেও।’ (ইবনে মাজাহ: ২৩৪০) শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো, পরিমিত আহার, শরীরচর্চা, হাসিখুশি থাকা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশনা রয়েছে হাদিসে। (বুখারি: ৫০৮১, ৫৪৩১; আত-তারগিব: ২৬১৬; তিরমিজি: ১৩৮১; সুরা আনফাল: ৬০; মুসলিম: ২৬৬৪; তিরমিজি: ৩৬৪৮)

আরও পড়ুন: সবসময় সুস্থ থাকতে যে দোয়া ৩ বার পড়বেন

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন নবীজি। হাদিসে বর্ণিত এরকম একটি দোয়া হলোা- اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ ‘আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি সাম-ই, আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি বাসারি, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।’ আবু দাউদ:  ৫০৯০)

২. হালাল রিজিক
ইসলামে হালাল উপার্জন জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানবজাতি। পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা হতে তোমরা খাও ও শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্যে শত্রু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৮)

ইবাদত কবুল হওয়ার জন্যও হালাল উপার্জন গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে কোনও পেশাকে ছোট করা হয়নি। প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারও পক্ষে এক বোঝা লাকড়ি সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেওয়া কারো কাছে চাওয়ার চেয়ে উত্তম। কেউ দিতেও পারে, না-ও দিতে পারে।’ (বুখারি: ২০৭৪)

পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত হালাল রিজিকের একটি দোয়া হলো- اللهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ،وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহু লাতিফুম বি-ইদিহি ইয়ারজুকু মাই ইয়াশায়ু ওয়া হুয়াল ক্ববিউল আজিজ।’ অর্থ: আল্লাহ নিজ বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ, যাকে ইচ্ছা তিনি রিজিক দেন, তিনি শক্তিশালী, পরাক্রান্ত । (সুরা আশশুরা: ১৯)
এ সংক্রান্ত হাদিসে বর্ণিত আরেকটি দোয়া হলো- اَللّهُمَّ اكْفِنِى بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَاغْنِنِى بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম মাকফিনি-বিহালালিকা ‘আন হারামিকা ওয়াগনিনী- বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান ওয়াকা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হালাল কামাই যেন আমার জন্যে যথেষ্ট হয় । হারামের যেন দরকারই না হয়। আর তোমার অনুগ্রহের মাধ্যমে আমাকে অভাবমুক্ত কর, যাতে অন্য কারও মুখাপেক্ষী হতে না হয়।’ (তিরমিজি: ৩৫৬৩; মুসনাদে আহমদ: ১৩২১)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে হালাল রিজিক বেড়ে যাবে 

৩. নিরাপদ বাসস্থান
নিরাপত্তা মানুষের অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। সুন্দর-স্বাধীনভাবে ইবাদত বন্দেগী করার জন্য, নিরাপদ রিজিকের জন্য, ঈমান হেফাজতের জন্য এবং বিভিন্ন রকম জুলুম থেকে বাঁচার জন্য নিরাপদ বাসস্থানের বিকল্প নেই। ইবরাহিম (আ.) শিশুসন্তান ও স্ত্রীকে মরুভূমিতে রেখে যাওয়ার সময় আল্লাহর কাছে দু’হাত ‍তুলে এ দোয়া করেছিলেন- رَبَّنَا لِیُـقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ فَاجۡعَلۡ اَفۡئِدَۃً مِّنَ النَّاسِ تَهۡوِیۡۤ اِلَیۡهِمۡ وَارۡ زُقۡهُمۡ مِّنَ الثَّمَرٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَشۡكُرُوۡنَ অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের কাছে; হে আমাদের প্রতিপালক! এজন্য যে তারা যেন নামাজ কায়েম করে। অতএব কিছু লোকের অন্তর তাদের অনুরাগী করে দিন এবং ফল দ্বারা তাদের জীবিকা দান করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’ (সুরা ইবরাহিম: ৩৭)

এ সংক্রান্ত হাদিসে বর্ণিত একটি দোয়া হলো- اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، عَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَأَنْتَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، ‌مَا ‌شَاءَ ‌اللهُ ‌كَانَ، ‌وَمَا ‌لَمْ ‌يَشَأْ ‌لَمْ ‌يَكُنْ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ، أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا، إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা আলাইকা তাওয়াক্কালতু ও আনতা রাব্বুল আরশিল আজিম, মাশাআল্লাহু কা’না, ওয়ামা লাম ইয়াশা’লাম ইয়াকুন ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যি আজিম, আলামু আন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাই ইন ক্বাদীর ও আন্নাল্লাহা ক্বাদ আহাতা বিকুল্লি শাই ইন ইলমা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি নাফসি ওয়ামিন শাররি কুল্লি দাব্বাতিন; আনতা আখিজুম বিনাসিয়াতিহা ইন্না রাব্বি’আলা সিরাতিম মুস্তাকিম।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ্‌ ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া অন্যকোনো ইলাহ্‌ নাই, আপনার ওপর ভরসা করলাম, আপনি সম্মানিত আরশের মালিক। আল্লাহ তাআলা যা ইচ্ছা করেন, তাই হয়; আর তিনি যা ইচ্ছা করেন না তা হয় না, আল্লাহ তাআলার শক্তি ও সামর্থ্য ছাড়া অন্যকোনো শক্তি বা সামর্থ্য নেই, জেনে রেখো যে আল্লাহ তাআলা সমস্ত জিনিসের উপর শক্তিশালী, ক্ষমতাবান এবং তার জ্ঞান সমস্ত জিনিসব্যাপ্ত। হে আল্লাহ! আমার নফসের মন্দ হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই এবং প্রত্যেক প্রাণীর মন্দ হতে যার ঝুঁটি আপনি ধরে রেখেছেন; নিশ্চয়ই আমার প্রভু সরল পথে অধিষ্ঠিত আছেন।’ (ইবনুস সুন্নি: ৫৭, তাবারানি, মুজামে কাবির: ৩৪৩)

৪. নেককার স্বামী-স্ত্রী
নেককার স্বামী-স্ত্রী পৃথিবীর মহামূল্যবান সম্পদ। স্বামী বা স্ত্রী খারাপ হলে জীবনটাই নরক হয়ে যায়। এজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে নেককার জীবনসঙ্গী চেয়ে দোয়া করার শিক্ষা রয়েছে ইসলামে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এ সংক্রান্ত আরেকটি সুন্দর দোয়া হলো- ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ উচ্চারণ: ‘রাব্বি ইন্নি লিমা- আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।’ অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী।’ (সুরা কাসাস: ২৪)

আরও পড়ুন: হাদিসের আলোকে ‘নেককার স্ত্রী’ চেনার উপায়

৫. নেক সন্তান
নেক সন্তান অনেক বড় নেয়ামত। নেক সন্তান চেয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত একটি দোয়া হলো- رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا উচ্চারণ: ‘রব্বানা হাব্লানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুর্রিয়াতিনা কুর্রাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে (পুরুষদেরকে) মুত্তাকি লোকদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (সুরা ফুরকান: ৭৪) আরেকটি সুন্দর দোয়া আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর কাছে নেক সন্তানের জন্য করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করেন। দোয়াটি ছিল এ রকম—‘রাব্বি হাবলি মিনাস সলিহিন।’ অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে এক সুপুত্র দান করুন।’ (সুরা সাফফাত: ১০০)

৬. ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু
একজন মুমিনের জন্য ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু সবচেয়ে বড় পাওয়া। সারাজীবন নেকআমল করে যদি কেউ ঈমানহীন হয়ে মারা যায়, তাহলে তার চেয়ে হতভাগা কেউ হতে পারে না। সেজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি ঈমানি মৃত্যু চেয়ে দোয়া করা উচিত। ঈমানি মৃত্যু চেয়ে অনেক দোয়া করা যায়। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এ সংক্রান্ত একটি দোয়া হলো- رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ উচ্চারণ: ‘রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমিন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের ধৈর্যদান করুন এবং মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দান করুন।’ (সুরা আরাফ: ১২৬)