images

ইসলাম

হাশরের মাঠ দেখতে কেমন হবে

ধর্ম ডেস্ক

২৬ মে ২০২২, ০১:৩৭ পিএম

পরজগতের প্রথম ধাপ কবর। কবরের পর হাশর। কেয়ামতের দিন যে মাঠে পৃথিবীর আদি-অন্ত সব মানুষকে সমবেত করা হবে ওই মাঠকে হাশরের মাঠ বা কেয়ামতের ময়দান বলা হয়। বিচারের জন্য কবর থেকে উত্থিত হয়ে সব প্রাণী ওই মাঠে দণ্ডায়মান থাকবে। পৃথিবীই হবে হাশরের মাঠ।

পৃথিবীর উপরিভাগে একটি চাদর আছে, একে পার্শ্ব ধরে টান দেওয়া হবে। ফলে গাছপালা, পাহাড়-পর্বত সাগরে পতিত হবে। অতঃপর সমতল হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি (আল্লাহ) জমিনের উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।’ (সুরা কাহাফ: ৮)

হাশরের ময়দানে মানুষ একটি নতুন পৃথিবী দেখতে পাবে, যার চিত্র ও দৃশ্য এই পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশও (পরিবর্তিত হবে) আর মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সামনে—যিনি এক, পরাক্রমশালী।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪৮)

আকাশ ও পৃথিবী পাল্টে দেওয়ার এমন অর্থও হতে পারে যে এগুলোর আকার ও আকৃতি পাল্টে দেওয়া হবে। সে সময় গোটা ভূ-পৃষ্ঠ একটি সমতল ভূমিতে পরিণত করে দেওয়া হবে। এতে কোনো গৃহের ও বৃক্ষের আড়াল থাকবে না। পাহাড়, টিলা, গর্ত ও গভীরতা কিছুই থাকবে না। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘অতঃপর পৃথিবীকে মসৃণ সমতল ভূমি করে ছাড়বেন। তুমি তাতে মোড় ও টিলা দেখবে না।’ (সুরা ত্বহা: ১০৬ ও ১০৭)

কেয়ামতের দিন জমিনের সবকিছু স্বচ্ছ ও পরিষ্কার হয়ে যাবে। সাহল ইবনে সাদ সাঈদ (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন মানুষকে সাদা ধবধবে রুটির মতো জমিনের ওপর একত্র করা হবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সেখানে কারো কোনো পরিচয়ের পতাকা থাকবে না। (বুখারি: ৬৫২১)

সেই মাঠে একজন দর্শক সবাইকে দেখতে পাবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমরা নবী (স.)-এর সঙ্গে এক খাবারের দাওয়াতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁর সামনে (রান্না করা) ছাগলের বাহু আনা হলো, এটা তাঁর খুব পছন্দনীয় ছিল। তিনি সেখান থেকে এক খণ্ড খেলেন এবং বললেন, আমি কেয়ামতের দিন মানবজাতির সরদার হব। তোমরা কি জানো? আল্লাহ কিভাবে (কেয়ামতের দিন) একই সমতলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব মানুষকে একত্র করবেন? যেন একজন দর্শক তাদের সবাইকে দেখতে পায় এবং একজন আহ্বানকারীর আহ্বান সবার নিকট পৌঁছায়। সূর্য তাদের অতি কাছে এসে যাবে। তখন কোনো কোনো মানুষ বলবে, তোমরা কি লক্ষ করোনি, তোমরা কি অবস্থায় আছ এবং কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছ...। (বুখারি: ৩৩৪০)

সেদিন সর্বপ্রথম হজরত মুহাম্মদ (স.) কবর থেকে উঠবেন। তিনি দেখবেন হজরত মুসা (আ.) আরশের এক পায়া ধরে আছেন। হাদিসে আছে, নবীজি জানবেন না, মুসা (আ.) এভাবেই ছিলেন নাকি দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার পর সেখানে গেছেন। মানুষ যখন কবর থেকে উঠবে তখন শরীরে কোনো পোশাক, জুতা বা টুপি কিছুই থাকবে না। 

এতে কেউ লজ্জিত হবে না, কারণ সেদিনের ভয়াবহতা এতই বেশি হবে যে, কেউ কারো দিকে সেভাবে তাকানোর কল্পনাও করবে না এবং খতনাবিহীন অবস্থায় সবাইকে উপস্থিত করা হবে। সেদিন সর্বপ্রথম কাপড় পরানো হবে ইবরাহিম (আ.)-কে।  সে ভয়াবহ দিনে যাকে সর্বপ্রথম সম্বোধন করা হবে তিনি মানবজাতির প্রথম সদস্য হজরত আদম (আ.)।

সেদিন হিসেবের জন্য তিন ব্যক্তিকে প্রথমে উপস্থিত করা হবে। সর্বপ্রথম একজন শহীদকে, তারপর আলেমকে, অতঃপর একজন  দানশীল ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে এবং নিয়ত ও আমলের ধরন দেখে ফয়সালা হবে। এভাবে অন্য শ্রেণির লোকদের উপস্থিত করা হবে। সর্বপ্রথম জিজ্ঞাসিত বিষয় হবে পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার নেয়ামত ভোগ করা সম্পর্কে। সর্বপ্রথম হিসাবের বিষয় হবে নামাজের আমল সম্পর্কে। সর্বপ্রথম ফয়সালা হবে রক্তপাতের। সর্বপ্রথম দুই প্রতিবেশীর ঝগড়ার মামলা নিষ্পত্তি হবে। এভাবে ধাপে ধাপে সকলের পার্থিব জীবনের হিসাব-নিকাশ শেষে জান্নাতে ও জাহান্নামে প্রেরণ করা হবে। জাহান্নাম বা জান্নাতে পাঠানোর আগে সবাইকে আমলনামা দেওয়া হবে। কাউকে দেওয়া হবে ডানদিক থেকে, কাউকে বামদিক থেকে, নেককাররা আমলনামা গ্রহণ করবেন ডান হাতে, পেছন দিক থেকে বাম হাতে নেবে বদকাররা। আমলনামা হাতে পেয়ে কার কী অবস্থা হবে এখানে পড়ুন (সূত্র: সুরা আম্বিয়া: ১০৪; সুরা হাক্কাহ: ১৯-২৯; বুখারি: ৪৮১৩, ৩১১২, ৬৫২৭, ৬০৮৫, ৪৮৬৪; মুসলিম: ২১৯৪, ৪৭৭০, ১৬৭৮; মিরকাতুল মাফাতিহ: ১০/২৫২, ১০/২৫৮; তিরমিজি: ৩৩৫৮, ৪১৩; আবু দাউদ: ৮৬৪; ইবনে মাজা: ১৪২৫; মুসনাদে আহমদ: ১৭৩৭২; আল-মুজামুল কাবির লিতাবরানি: ১৪২৫২; সহিহুল জামে: ২৫৬৩)।

সুতরাং ওই দিন আসার আগে অর্থাৎ বেঁচে থাকতেই মুমিন মুসলমানের সাবধান হওয়া উচিত। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়ে লক্ষ্য রেখে আমল করা উচিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর বিধি-বিধান পালনের একান্ত রহমত লাভের তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে ডান হাতে আমলনামা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।