ধর্ম ডেস্ক
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২৩ পিএম
তাওবা মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহারস্বরূপ। যত গুনাহই করেন না কেন, দেরি না করে আন্তরিক তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন। কারণ আল্লাহ জানেন যে, বান্দা গুনাহ করবে। এ কারণে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা শিখিয়ে দিচ্ছেন, ‘তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো আল্লাহর কাছে; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল: ২০)
আসলে আল্লাহ তাআলা চান- বান্দা যেকোনো ভুলে বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহর কাছেই ধর্না দিক। কারণ এটাই অনুগত বান্দার পরিচয়। আর অনুগত বান্দাদের তিনি গুনাহমুক্ত রাখতে চান। এজন্য এটি তাঁর নির্দেশ যে, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও’। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার: ৫৩)
এমনকি শিরকের মতো ভয়াবহ গুনাহেরও ক্ষমা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি খালেস দিলে তাওবা করার মাধ্যমে শিরক থেকে ফিরে আসা যায়। এ বিষয়ে কোরআনের আয়াত— ‘আর মহান হজের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরিকদের থেকে দায়িত্বমুক্ত এবং তাঁর রাসুলও। অবশ্য যদি তোমরা তওবা করো, তবে তা তোমাদের জন্যও কল্যাণকর, আর যদি মুখ ফেরাও, তবে জেনে রেখো, আল্লাহকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সুরা তওবা: ৩)
আরও পড়ুন: যে দোয়া নবীজি বেশি বেশি পড়তেন
উল্লেখিত আয়াতগুলো থেকে সহজে অনুমেয়- পাপ কাজ থেকে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আর ‘গুনাহ থেকে তাওবাকারী ওই ব্যক্তির মতো, যার কোনো গুনাহই নেই।’ (সুনানে তিরমিজি, ইবনে মাজাহ: ৪২৫০)
তবে, মৃত্যুর সময়ে এসে কেউ তাওবা করলে, সে তাওবার মূল্য নেই, তা কোনো কাজে আসবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা— ‘আর (আজীবন) যারা মন্দ কাজ করে, তাদের জন্য তাওবা নয়; আর তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে- আমি এখন তাওবা করছি। আর তাদের জন্যও তাওবা নয়; যারা অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়। এরাই তো তারা, যাদের জন্য আমি কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেছি।’ (সুরা নিসা: ১৮)
অবিলম্বে তাওবা করা প্রকৃত মুমিনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাওবা করতে দেরি করা মানে অন্তরকে কলুষিত করা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বান্দা যখন কোনো গুনাহ করে, তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। সে তাওবা করলে দাগটি উঠে যায়। কিন্তু যদি সে গুনাহ করে যেতেই থাকে তাহলে সমগ্র দিলের ওপর তা ছেয়ে যায়। (তিরমিজি: ৩৩৩৪ ইবনে মজাহ: ৪২৪৪)
আরও পড়ুন: ৬ শ্রেণির বান্দাকে জান্নাত দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব
গুনাহে অন্তর ছেয়ে গেলে ইবাদতের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। নতুন নতুন গুনাহ করার জন্য শয়তান তাকে সহজে প্রলুব্ধ করে। এজন্যই দ্রুত তাওবা করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব মানুষের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তাওবা করে। এরাই তারা, যাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা: ১৭)
অতীত গুনাহের জন্য অনুশোচিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে ওই পাপকাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা করার নামই তাওবা। তাওবা করার পর একই গুনাহ আবারও করে ফেললে কী করবেন? আবারও তাওবা করতে হবে। এবার গুনাহ না করার দৃঢ় শপথ ও লজ্জিত হতে হবে। কখনও তাওবা থেকে বিরত থাকা যাবে না। কারণ, তিনি ছাড়া ক্ষমা করার তো কেউ নেই। দয়াবান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে আছে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তারা তার পুনরাবৃত্তি করে না।’ (সুরা ইমরান: ১৩৫)