images

ইসলাম

অবৈধ সম্পর্ক থাকাবস্থায় ইবাদত কবুল হবে?

ধর্ম ডেস্ক

২৩ মে ২০২২, ০১:২৮ পিএম

ইসলামে গায়রে মাহরাম নারী-পুরুষের সম্পর্ক হারাম। শরিয়তের দৃষ্টিতে যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ তারাই গায়রে মাহরাম। ইসলামি শরিয়তে বিয়ের আগে ওসব তরুণ-তরুণীর বন্ধুত্বকে আখ্যায়িত করা হয় ব্যভিচারের প্রথম দরজা হিসেবে।

বেগানা নারীকে দেখা চোখের ব্যভিচার, তার সঙ্গে বেহুদা বা যৌন উদ্দীপক কথা হলো জিহ্বার ব্যভিচার, যৌন উদ্দীপক কথা শোনা কানের ব্যভিচার, স্পর্শ করা হাতের ব্যভিচার, পায়ের জেনা হলো ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (বুখারি: ৬২৪৩ ও মেশকাত: ৮৬)

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, নারী কিংবা ছোট বাচ্চাদের প্রতি আসক্তি কোনো ব্যক্তিকে এমন বিপর্যয়ে নিপতিত করতে পারে, যার থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা কারও নেই। এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ, তার পুণ্যের ভাণ্ডার একেবারে শূন্য হয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে কারও অন্তরে কারও চেহারার প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়, দ্বিতীয় পর্যায়ে সে তার প্রেমে মগ্ন হয়ে যায়, যার প্রভাবে সে ধীরে ধীরে নানা অপকর্ম ও অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে, যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। 

তবে সবচেয়ে বড় মসিবত হচ্ছে, আল্লাহর রহমত থেকে দূরে নিক্ষিপ্ত হওয়া। কারণ, বান্দা যখন আল্লাহর ইবাদত ও তার প্রতি নিবিষ্টচিত্ত থাকে, তখন তার কাছে আল্লাহর মহব্বতের চেয়ে মধুর ও সুখকর কোনো জিনিস হতে পারে না। (মাজমুউল ফতোয়া, খ- ১০, পৃষ্ঠা-১৮৭)

কোরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা হলো, মুসলিম নারী-পুরুষ উভয়ে অবৈধ সংস্পর্শ, হাসাহাসি, রসিকতা, কথা-বার্তা, দেখা-সাক্ষাৎ, আসক্তি ও সাজ-সজ্জা থেকে বেঁচে থাকা; নিজেদের দীন ও আত্মসম্মান রক্ষা করা।

অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জেনা তথা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। জেনা তথা অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক হারাম। (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩২)

জেনার কাছে যাওয়া মানে—যেসব জিনিস জেনার নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যাওয়াই নিষেধ। বিবাহপূর্ব প্রেম নর-নারীকে জেনার নিকটবর্তী করে দেয়। অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার শেষ পরিণতি আখেরাতে চরম অশান্তি। দুনিয়ায়ও এর পরিণাম ভালো নয়। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কেউ এসিড মেরে অপরের শরীর ঝলসে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে শেষ পরিণত হয় আত্মহত্যা। এসব ইসলাম অনুমোদন করে না। তাই হারাম সম্পর্ক থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি তরুণ-তরুণীর ঈমানি দায়িত্ব। 

দয়াময় আল্লাহ বৈধ উপায়ে বিয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ ও জৈবিক চাহিদা মেটানোর সুযোগ দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের কর্তব্য, বিয়ের পূর্বে হারাম সম্পর্কের দিকে পা না বাড়িয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিয়ে করা। 

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘হে যুবক সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ বিয়ে দৃষ্টিকে অবনমিত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোজা পালন করে। কারণ রোজা যৌন প্রবৃত্তি নিবৃত্ত করে।’ (বুখারি: ২৬৮৫;  মুসলিম: ৩৪৬৬)

তবে হারাম রিলেশন (অবৈধ প্রেম) গুনাহের কারণ হলেও তা শিরক, কুফরি বা মুরতাদ হওয়া মতো গুনাহ নয় যে, এ কারণে তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে কিংবা তার আমল কবুল হবে না। বরং এ অবস্থায়ও তার নামাজ, রোজা, দান-সদকা, দোয়া, কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য নেকির কাজ বরবাদ হবে না। এগুলো সে যদি খালেস নিয়তে যথানিয়মে সম্পাদন করে, তাহলে মহান আল্লাহ তা কবুল করবেন বলে আশা করা যায়। কারণ, ইবাদত কবুল হওয়ার মৌলিক শর্তগুলোর মধ্যে এটি নেই। কিন্তু হারাম রিলেশনের কারণে গুনাহগার হবে। এক্ষেত্রে করণীয় হলো, অনতিবিলম্বে তওবা করে এ পথ থেকে ফিরে আসা।

আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রকার পাপাচার থেকে তওবায়ে নাসুহার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবায়ে নাসুহা তথা আন্তরিক তওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা তাহরিম: ৮)

তওবায়ে নাসুহা অর্থ খাঁটি ও নির্ভেজাল তওবা, একনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতাপূর্ণ তওবা। অর্থাৎ এমন আন্তরিকতা ও দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে তওবা করা যে, তওবাকারী আর কখনও জেনে-বুঝে ওই গুনাহে লিপ্ত হবে না- মর্মে অঙ্গিকার করা।

সুতরাং নবী কারিম (স.)-এর সেই হাদিসের ওপর আমল করা জরুরি, যার বাস্তবায়নে তিনি মুসলিম উম্মাহকে দিয়েছেন জান্নাতের নিশ্চয়তা। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দুই উরুর মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থান) জামানত আমাকে দেবে, আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার।’ (বুখারি: ৬৪৭৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর নারী-পুরুষকে অবৈধ আসক্তি, সম্পর্ক, দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা ও যৌন লালসা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।