ধর্ম ডেস্ক
১২ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৬ পিএম
ইসলামে প্রত্যেক শিশুকেই তাঁর স্রষ্টা সম্পর্কে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া তার অধিকার। মুসলিম অভিভাবকদের অবশ্যই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। কেননা দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম অর্জনের ব্যবস্থা করতেই হবে।
তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। শিশুর প্রতিভাকে মূল্যায়ন করা, সাধ্যমতো তাকে সময় দেওয়া অভিভাবকদের উচিত। পাশাপাশি তাকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও মা-বাবার দায়িত্ব।
শিশুকে প্রতিপালন করতে হবে ইসলামের আদর্শ ও রূপরেখায়। শিশুর মন-মানসিকতায় ইসলামের প্রতি পরিচ্ছন্ন চিন্তা ও অগাধ ভালোবাসার বীজ রোপণ করতে হবে। তার আকিদা-বিশ্বাস পরিশুদ্ধ করতে হবে। আল্লাহ, নবী-রাসূল, ফেরেশতা, কেয়ামত, কবর, হাশর- এসবের প্রতি তাকে বিশ্বাসী করে তুলতে হবে। আদব-কায়দা, নম্রতা-ভদ্রতা ও সুন্দর শিষ্টাচারে প্রতিপালন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো পিতা তার সন্তানকে এর থেকে উত্তম উপঢৌকন প্রদান করতে পারেন না, যে উত্তম শিক্ষা তিনি তাকে প্রদান করেন।’ (তিরমিজি: ১৯৫২)
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ননা করেন রসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘শিশুর যখন কথা ফুটতে শুরু করবে তখন সর্বপ্রথম তাকে কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শিখাবে, আর মৃত্যুকালেও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র তালকিন দিবে। কেননা যার প্রথম বাক্য ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং শেষ বাক্য ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে সে যদি হাজার বছরও বেঁচে থাকে তাহলে তাকে কোনো গুনাহ ও পাপের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না।’ (বায়হাকি: ৮২৮২)
আরও পড়ুন: শিশুর ইসলাম-প্রীতি বিকশিত হোক মসজিদ থেকে
একজন মুসলমান হিসেবে মা-বাবার নিজ শিশুদের এতটুকু পরিমাণ ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করা গুরু দায়িত্ব, যাতে সে ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা বা জ্ঞান লাভ করতে পারে। যাতে সে আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দ, হালাল-হারাম, জায়েজ-নাজায়েজ, সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করে চলতে পারে। কেননা শিশু বা সন্তানের ভালো কাজের একটা অংশ যেমন মা-বাবা পেয়ে থাকেন, তেমনি শিশু বা সন্তানের পদস্খলনের দায়ভার মা-বাবার কাঁধেই বর্তায়। হাদিসে এসেছে, ‘জান্নাতে কোনো কোনো ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হলে তারা বলবে, কিভাবে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পেল? তখন তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার ফলে।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৬৬০)
শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। তা না করলে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যত্নবান হতে পারবে না। আর নামাজ এমন গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যে ব্যাপারে অলসতারও সুযোগ নেই। এমনকি হাদিস অনুযায়ী, কাফের ও মুসলমানের প্রধান পার্থক্য হলো নামাজ। তাই শিশুকে নামাজের পূর্ণ শিক্ষা দেওয়া ও এতে অভ্যস্থ করা শিশুর অধিকার। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যত্নবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ (সুনানে বায়হাকি: ৫০৯৪)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও। তাদের বয়স ১০ বছর হওয়ার পর (প্রয়োজনে) নামাজের জন্য প্রহার করো এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪৯৫)
আরও পড়ুন: শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বয়স সম্পর্কে যা বলছে ইসলাম
শিশুকে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে রূঢ় ব্যবহার করা যাবে না। শিশুর সঙ্গে রূঢ় আচরণ করা মহানবী (স.) পছন্দ করতেন না। তিনি শিশুর সঙ্গে স্নেহশীল আচরণ না করায় এক পিতাকে ভর্ত্সনা করেন। প্রহার ও বকাঝকার পরিবর্তে উত্তম আচরণ ও উপদেশের মাধ্যমে শিশুকে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও এই নীতি অনুসরণ করতেন। হজরত আনাস (রা.) তাঁর শৈশবের দীর্ঘ ১০ বছর রাসুল (স.)-এর সেবায় কাটিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য হলো, আমার কোনো কাজে আপত্তি করে তিনি কখনো বলেননি ‘এমন কেন করলে বা এমন কেন করলে না।’ (মুসলিম: ২৩০৯)
খোলা মাঠ, মুক্ত আকাশ ও বিশুদ্ধ বাতাস শিশুর মনকে প্রফুল্ল করে। তাই তাদেরকে মাঝেমধ্যে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া উচিত। শিশুদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও সমাজের সবার সঙ্গে মেশার সুযোগ দিতে হবে। সৃজনশীল কাজের চর্চা করাতে হবে। অনেকে অন্যের সন্তানের সঙ্গে তুলনা করে নিজের সন্তানকে সারাক্ষণ পড়ার টেবিলে আটকে রাখেন। অথচ পড়ালেখার চাপ সীমা ছাড়ালে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘শিশু যখন মক্তব (বিদ্যালয়) থেকে ফিরে আসে, তখন তাকে খেলাধুলার সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে দীর্ঘ সময়ের পড়াশোনার চাপ দূর হয়ে যায়। শিশুকে যদি খেলাধুলার সুযোগ না দেওয়া হয় এবং সারাক্ষণ বই-খাতা নিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তার স্বতঃস্ফূর্ততা বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। পড়াশোনা তার কাছে কারাগারের শাস্তি বলে মনে হবে। ফলে সে যেকোনোভাবে এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য অস্থির হয়ে উঠবে।’ (ইহয়াউ উলুমিদ দিন: ৩/৫৯)