images

ইসলাম

মানুষকে সদুপদেশ দিয়ে নিজে আমল না করার পরিণতি

ধর্ম ডেস্ক

৩১ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৫ পিএম

পরকালে এমন কিছু মানুষকে শাস্তি দেওয়া হবে যারা ভালো কথা বলত, মানুষকে সদুপদেশ দিত, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। অন্যকে ভালো কাজের আদেশ দেওয়া নিঃসন্দেহে ভালো আমল। যেমনটি আল্লাহ তাআলার নির্দেশ— ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ দল, মানবজাতির জন্য তোমাদের অভ্যুত্থান হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের জন্য নির্দেশ দাও, অসৎ কাজ নিষেধ করো ও আল্লাহয় বিশ্বাস করো।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১০) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) ভালোর দিকে ডাকবে ও সৎ কর্মের নির্দেশ দেবে এবং অসৎ কর্ম থেকে বিরত রাখবে। আর এসব লোকই হবে সফলকাম।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৪)

কিন্তু সদুপদেশ দেওয়াই মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। নিজেকেও তা পালন করতে হবে। অন্যকে উপদেশ দিয়ে নিজে পালন না করলে এর পরিণতি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ইসরার (মিরাজ) রাতে আমি এমন একশ্রেণির মানুষের কাছ দিয়ে গমন করলাম, যাদের জিহ্বাকে জাহান্নামের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে। আমি জিবরাঈলকে (আ.) জিজ্ঞাসা করলাম, ওরা কারা? তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের স্বার্থপূজারি উপদেশদাতা, যারা অন্যকে সৎ কাজের নির্দেশ দিত, কিন্তু নিজের খবর রাখত না। (মারেফুল কোরআন: ৩৭, মুসনাদে আহমদ: ১২২১১)

আরও পড়ুন: ১৪ পাপের শাস্তি ‍দুনিয়ায় দেওয়া হয়

অন্য হাদিসে ইবনে হারেসাহ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’’ (বুখারি৩২৬৭, ৭০৯৮, মুসলিম ২৯৮৯, আহমদ ২১২৭৭, ২১২৮৭, ২১২৯৩, ২১৩১২)

আরও পড়ুন: মেরাজে নবীজির দেখা কিছু পাপের ভয়ঙ্কর শাস্তি

এ সম্পর্কে আলেমরা বলেন, ভালো কাজের আদেশ একটি বিষয় এবং ভালোর ওপর আমল করা অন্য বিষয়। প্রতিটি কাজের জন্য পৃথক পৃথক বিনিময় রয়েছে। তবে ইসলাম মনে করে, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ হতে বারণকারীকে অবশ্য অধিকতর পরহেজগার হওয়া বাঞ্ছনীয়। মুত্তাকি ব্যক্তির দাওয়াত ভালো ফল বয়ে আনে। কিন্তু এ ধরনের ব্যক্তিদের দাওয়াত ফলদায়ক নয়। আর এ শ্রেণির মানুষের জন্যই জাহান্নামের কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে।

এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা এমন কথা কেন বলো, যা তোমরা করো না? আল্লাহর নিকট বড় ক্রোধের বিষয় এই যে তোমরা বলো এমন কথা, যা তোমরা করো না।’ (সুরা আস সাফ: ২-৩)

অতএব, নিজে আমল করার পাশাপাশি অন্যকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিলে তাতে দুনিয়া ও পরকালে সফলতা লাভ করা সম্ভব হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অন্যদেরকে নেক আমলের নসিহত করার পাশাপাশি নিজেকেও বেশি বেশি নেক আমলের তাওফিক দান করুন। আমিন।