images

ইসলাম

হুসাইন (রা.)-এর শেষ কথাগুলো

ধর্ম ডেস্ক

১৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৩ পিএম

কারবালা প্রান্তরে হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা মুসলমানদের ইতিহাসের অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরির ১০ মহররম তথা আশুরার দিনে এই নির্মম ঘটনাটি ঘটেছিল। হুসাইন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ইয়াজিদের সেনাবাহিনী এবং কুফাবাসীর উদ্দেশে এক হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণটি ইতিহাসবিদ ও তাফসিরবিদ ইবনে জারির তাবারি (রহ.) কর্তৃক প্রণীত ‘তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক’ গ্রন্থের চতুর্থ খণ্ডে বর্ণিত হয়েছে।

সেদিন ফোরাত নদীর তীরে হজরত হুসাইন (রা.) বলেন, ‘হে জনগণ! একটু থামো। তোমরা মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনো। আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করতে চাই। তোমরা আমার কথা শুনলে তোমাদেরই কল্যাণ হবে। না শুনলেও আমার কোনো ক্ষতি নাই। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর তোমরা যা খুশি করতে পারবে। 

হে জনগণ! তোমরা একবার চিন্তা করে দেখো আমি কে? তোমরা গভীরভাবে চিন্তা করে দেখো, আমাকে হত্যা করা কিংবা আমার সম্মানে আঘাত হানা তোমাদের জন্য জায়েজ হবে কি না? আমি কি তোমাদের নবীর প্রিয় দৌহিত্র নই? আমি কি তাঁর পিতৃব্য আলীর সন্তান নই? সাইয়্যিদুশ শুহাদা হামজাহ (রা.) কি আমার চাচা ছিলেন না? শহীদ জাফর তাইয়্যার (রা.) কি আমার চাচা নন? আমি ও আমার সহোদর হাসান (রা.) সম্পর্কে কি মহানবী (স.) বলেননি যে হাসান ও হুসাইন হচ্ছে বেহেশতি যুবকদের সর্দার?

তোমরা মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনো। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যে আমি ছাড়া মহানবী (স.)-এর আর কোনো দৌহিত্র খুঁজে পাবে না। তোমরা কেন আমাকে হত্যা করতে চাচ্ছ? আমি কি তোমাদের কাউকে হত্যা করেছি? আমি কি তোমাদের কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছি? আমি কি তোমাদের কাউকে আহত করেছি?’

আরও পড়ুন
কারবালার ময়দানে কী ঘটেছিল
আশুরার দিনটি যেভাবে কাটাবেন

অতঃপর হজরত হুসাইন (রা.) কুফার কিছু নেতৃস্থানীয় লোকের নাম ধরে ডেকে বলেন, ‘তোমরা কি আমাকে এখানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে পত্র দাওনি?’ তারা বিষয়টি অস্বীকার করলে হুসাইন (রা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমরা তা দিয়েছ। কিন্তু এখন তা পছন্দ করছ না। সুতরাং তোমরা আমাকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে দাও।’ কুফাবাসীর মধ্য থেকে একজন বলল, আপনি কেন আবদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের প্রস্তাব মেনে নিচ্ছেন না? হজরত হুসাইন (রা.) বলেন, ‘আমি হীন-নীচ প্রকৃতির লোকদের মতো আমার হাত দুশমনদের হাতে সোপর্দ করতে পারি না।’

পরে কারবালা প্রাঙ্গণে ইয়াজিদের বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্বল্পসংখ্যক অনুসারী নিয়ে অসম যুদ্ধ শুরু হয়। শত্রুপক্ষের নিষ্ঠুর আঘাতে হুসাইন (রা.) মাটিতে পড়ে যান এবং সম্মিলিত আঘাতে তিনি শহিদ হন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শাহাদাতের পর নবীজির প্রিয় দৌহিত্রের দেহ মোবারকে মোট ৩৩টি বর্শার এবং ৩৪টি তরবারির আঘাত ছাড়াও অসংখ্য তীরের জখমের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। এবং তাঁর পক্ষের প্রায় ৭১-৭৩ জন শাহাদাতবরণ করেন।

কারবালার ঘটনা আমাদের এ কথার শিক্ষা দেয় যে, ঈমান-আকিদাবিরোধী কাজের সঙ্গে ঐক্য নেই। মুসলিম নামধারী ইয়াজিদ, ইবনে জিয়াদ ও সিমারের ভূমিকা যারা পালন করছে—তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সত্য ও ন্যায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বাতিলের মোকাবেলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব কাজে ত্যাগ এবং কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সুযোগ থাকার পরও যেমন হুসাইন (রা)-এর সাথীরা তাঁকে ছেড়ে না গিয়ে তাঁর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সঙ্গে থেকেছেন, তেমনি আমাদেরও উচিত সত্যপন্থীদের সমর্থন, সহযোগিতা ও সঙ্গে থাকা; প্রয়োজনে জীবন দেওয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কারবালার ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।