images

ইসলাম

বিয়ে না করলে কি জান্নাত হারাম হয়ে যায়?

ধর্ম ডেস্ক

৩১ মে ২০২৪, ০৮:৪১ পিএম

বিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। প্রথম মানব-মানবী হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর বিয়ের মাধ্যমে এই পবিত্র বন্ধনরীতির প্রচলন হয়। বিয়ে শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা পূরণের নাম নয়; বরং অন্তরের প্রশান্তি ও চরিত্র রক্ষার অনন্য উপায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তার এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে শান্তি লাভ করো এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর ভেতর নিদর্শন আছে সেসব লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সুরা রুম: ২১)

সক্ষমতা থাকলে দ্রুত বিয়ে করার উৎসাহ দিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—‘হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ (বুখারি: ৫০৬৬; মুসলিম: ১৪০০)

 হাদিস শরিফে আরও এসেছে, উসমান ইবনে মাজউন (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে চিরকুমার থাকার অনুমতি চাইলে রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে নিষেধ করেছেন। (তিরমিজি: ১০৮৩)

আরও পড়ুন: সহবাস না করলে কি বিয়ে ভেঙে যায়?

তবে, বিয়ে না করলে জান্নাত হারাম হয়ে যায়—এমন বক্তব্য কোরআন-হাদিসে নেই। বরং ওজরের কারণে বিয়ে না করার সুযোগ রয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় বিয়ে করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যদি কেউ সুন্নতের প্রতি অনীহা হিসেবে বিয়ে না করে, তাহলে ওই ব্যক্তি সুন্নতে মুয়াক্কাদা পরিত্যাগের কারণে গুনাহগার হবেন। 

মনে রাখতে হবে, বিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় সুন্নত হলেও কখনও তা আবশ্যক হয়ে যায়। যেমন- কোনো সামর্থ্যবান যদি গুনাহে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তার জন্য বিয়ে করা জরুরি। তখন তিনি বিয়ে করে ফরজ আদায় করবেন, এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।

সুতরাং বিয়ের সঙ্গে জান্নাত-জাহান্নামের সম্পর্ক নেই। আসলে একটি হাদিস বুঝতে ভুল করার কারণেই কিছু মানুষ মনে করেন- বিয়ে না করলে জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। বুখারি ও মুসলিমের এক হাদিসে কিছু মানুষের আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। ওখানে একজন বলছিল- আমি সারাজীবন রোজা রাখব, আরেকজন বলছিল আমি সারাজীবন রাতভর ইবাদত করব, আরেকজন বলছিল- আমি নারীদের থেকে দূরে থাকব, কখনও বিয়ে করবন। আল্লাহর রাসুল তখন (স.) তাদের কাছে এসে বললেন, ‘আমি তোমাদের সবার চেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করি। কিন্তু আমি রোজা রাখি, আবার ইফতারও করি। নামাজ পড়ি, আবার ঘুমও যাই। নারীকে বিয়েও করি করি। অতএব, যারা আমার সুন্নত ছেড়ে দেবে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (দেখুন- বুখারি: ৫০৬৩; মুসলিম: ১৪০১)

আরও পড়ুন: সহবাসে সাড়া না দিলে স্ত্রী কি গুনাহগার হবেন কি?

এই হাদিসে ‘আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়’ বাক্যের মাধ্যমে বলা হচ্ছে যে- সে আমার আদর্শের মধ্যে নেই। এছাড়াও বাক্যটি সুন্নত ও দ্বীন রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ আমল হিসেবে উৎসাহমূলক বাক্য। এর অর্থ এই নয় যে, বিয়ে না করলে অমুসলিম হয়ে যাবে কিংবা জাহান্নামে চলে যাবে।

আমরা জানি যে, ইমাম নববির মতো বিশ্ববিখ্যাত ইমামও বিয়ে করতে পারেননি। তিনি নিজেকে ইলম অর্জনের পেছনে এমনভাবে নিয়োজিত রেখেছিলেন যে বিয়ে করার সময়ই পাননি। নবীদের মধ্যে হজরত ইয়াহিয়া (আ.)-ও বিয়ে করেননি বলে পবিত্র কোরআনের দলিল রয়েছে। (সুরা আলে ইমরান: ৩৯)

তবে হ্যাঁ ইচ্ছাকৃত বিয়ে না করে থাকার মধ্যে কোনো উপকার বা কল্যাণ নেই। চরিত্র হেফাজতের জন্য, ইবাদতে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য বিয়ের বিকল্প নেই। বিয়ের মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূরণ হয় বলেও হাদিস রয়েছে। রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু: ৬১৪৮; তাবরানি: ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম: ২৭২৮)

অতএব, কেউ যদি দ্বীনের অন্যান্য আমল ঠিকমতো করেন এবং বিয়ের গুরুত্ব ও ফজিলত সব স্বীকার করেন, কিন্তু ওজরের কারণে বিয়ে করতে না পারেন, এ কারণে তাকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করা হবে না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীনি ইলমের ব্যাপারে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।