ধর্ম ডেস্ক
২৮ মে ২০২৪, ০৮:২০ এএম
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের বেশি বেশি ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার তাগিদ দিয়েছেন। ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের জন্য তিনি পরম ক্ষমাশীল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ১৯৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও।’ (সুরা হুদ: ৩)
ইস্তেগফারের অনেক উপকার রয়েছে। বেশি বেশি ইস্তেগফার করলে অর্থাৎ ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ কিংবা ‘আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি..’ অথবা ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা..’ দোয়াগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ইহকাল-পরকাল যেমন সুন্দর হয়, তেমনি দুনিয়ার জীবনও সমৃদ্ধ হয়। পাপ থেকে মুক্তি ছাড়াও মানবজীবনের যাবতীয় সংকট ও বিপদাপদ থেকে মুক্তির হাতিয়ার এই ইস্তেগফার।
আল্লাহর ভালোবাসা লাভ হবে
যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে না, তাদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। যারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাদের তিনি পছন্দ করেন। সব নবী রাসুল ইস্তেগফার করতেন। প্রিয়নবী (স.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবা ও ইস্তেগফার করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তেগফার ও তাওবা করে থাকি।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩০৭)
গুনাহ মাফ হবে
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কেউ কোনো মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করে পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।’ (সুরা নিসা: ১১০)
বিপদ দূর হবে
ভয়াবহ বিপদ কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে বান্দাকে পাপের শাস্তি দেন। কিন্তু বান্দারা যখন ইস্তেগফারে রত হয়ে যায়, তখন তিনি আজাব উঠিয়ে নেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে (ইস্তেগফার করবে) অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন।’ (সুরা আনফাল: ৩৩)
আরও পড়ুন: দুঃখের সময় ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লে কী হয়
দুশ্চিন্তা দূর হয় জীবিকার ব্যবস্থা হবে
প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য ‘ইস্তেগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে।’ (সুনানে নাসায়ি: ৩৮১৯)
রিজিকে বরকত হবে
রিজিকের বরকতের জন্য ইস্তেগফার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৬৭৭)
দুনিয়ার সফলতা
ইস্তেগফারের মাধ্যমে বান্দা সফলতা লাভ করে। আল্লাহ তার শক্তি ও সম্মান বাড়িয়ে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থন করো, তারপর তার দিকেই ফিরে আসো। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরও শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (সুরা হুদ: ৫২)
আরও পড়ুন: সকালে ১০০ বার সুবহানাল্লাহ ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ার ফজিলত
আখেরাতের সফলতা
মহান আল্লাহ ইস্তেগফারকারীদের জন্য আখেরাতে যা রেখেছেন সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আমি কি তোমাদেরকে এসব বস্তু থেকে উৎকৃষ্টতর কোনো কিছুর সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর নিকট থেকে সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। যারা বলে, হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি; কাজেই আপনি আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থী। (সুরা আলে ইমরান: ১৫-১৭)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে। আমি তাকে তা দেবো। কে আছে এমন যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি: ১১৪৫)
অতএব যারা রাতের শেষাংশে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দেবে এবং ইস্তেগফার করবে, মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।