ধর্ম ডেস্ক
২৭ মে ২০২৪, ০১:৫৭ পিএম
আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রার্থনা কবুল করতে পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)। মুমিনের দায়িত্ব হলো—আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। ছোট-বড় সব প্রয়োজনে দোয়া করা। ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না তিনি তাঁর ওপর রাগান্বিত হন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৭৩)
হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব, তুমি যা-ই করে থাকো আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবু আমি তোমাকে ক্ষমা করব, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪০)
উল্লেখিত হাদিসে আল্লাহর অসীম দয়ার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মুহাদ্দিসরা দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার কিছু নিয়ম বর্ণনা করেছেন। যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ বেশি খুশি হন এবং তা দোয়া কবুলে সহায়ক হয়, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে দোয়া করা
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমার বান্দা আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, নিশ্চয় আমি তাদের নিকটবর্তী। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি, যখন সে আমার কাছে প্রার্থনা করে। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করুক। এতে তারা সঠিক পথে চলতে পারবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৬)
নিষ্ঠার সঙ্গে দোয়া করা
হাদিসের বর্ণনামতে, ইখলাস বা নিষ্ঠা দোয়া কবুলের শর্ত। ইখলাসহীন ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। তাই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করার আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে এছাড়া অন্যকোনো হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ‘ইবাদত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে। আর তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে আর জাকাত দিবে। আর এটাই সঠিক সুদৃঢ় দ্বীন।’ (সুরা বাইয়িনাহ: ০৫)
আল্লাহর গুণবাচক নামের সঙ্গে দোয়া করা
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে নামেই ডাকবে’ (সুরা আরাফ: ১৮০)। প্রিয়নবী (স.) আয়েশা (রা.)-কে এভাবে দোয়া করতে বলেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১১৯৫)। এখানে আল্লাহর ‘ক্ষমাশীল’ গুণ উল্লেখ করে দোয়া করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাতে যে নিয়মে দোয়া করলে আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না
দোয়ার আগে হামদ (প্রশংসা) ও সালাত (দরুদ) পাঠ করা
ফাজালা ইবনে উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (স.) বসে ছিলেন। এমন সময় একজন লোক এলো এবং নামাজ আদায় করল। এরপর সে বলল, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি দয়া করুন। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘হে নামাজি! তুমি তাড়াহুড়া করলে। নামাজ শেষে যখন তুমি বসবে, তখন তুমি আল্লাহর উপযুক্ত হামদ এবং আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। অতঃপর তুমি দোয়া করবে।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৪৭৬)
কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দোয়া করা
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বদরের ময়দানে আল্লাহর নবী (স.)-এর দোয়ার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘অতঃপর তিনি কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে স্বীয় প্রভুর কাছে বিনীত হয়ে বললেন ...’ (সহিহ মুসলিম: ১৭৬৩)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয় তোমাদের মহান প্রভু চিরঞ্জীব ও অতি দয়ালু। যখন তাঁর কোনো বান্দা তাঁর প্রতি হাত উঠায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (সুনানে আবি দাউদ: ১৩২০)
আশা নিয়ে দোয়া করা
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা ছিল সৎকাজে প্রতিযোগী, তারা আশা ও ভয় নিয়ে আমার প্রার্থনা করত। তারা ছিল আমার প্রতি বিনীত।’ (সুরা আম্বিয়া: ৯০) আল্লাহর প্রতি আশা নিয়ে দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে নবীজি বলেন, ‘দোয়া কবুল হওয়ার আশা নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৪৭৯)
আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়
অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করা
দোয়া ও প্রার্থনার আদব হলো একান্তে দোয়া করা এবং তা প্রকাশ না করা। দোয়ায় অশ্রুসজল হওয়াও দোয়ার অন্যতম শিষ্টাচার। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো গোপনে অশ্রুসিক্ত হয়ে।’ (সুরা আরাফ: ৫৫)
দৃঢ়তার সঙ্গে দোয়া করা
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন না বলে যে, হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমার প্রতি দয়া করুন। সে যেন দৃঢ়তার সঙ্গে চায়। কেননা কেউ আল্লাহকে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখে না।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩৩৯)
দোয়া কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা
নবী কারিম (স.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের দোয়া কবুল করা হয় যতক্ষণ সে তাড়াহুড়া না করে। যেমন সে বলল, আমি দোয়া করলাম কিন্তু তা কবুল হলো না’ (আল জামি বাইনাস সহিহাইন: ২২৯২)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী, যেভাবে দোয়া করলে তিনি খুশি হবেন, সে অনুযায়ী দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।