ধর্ম ডেস্ক
১৩ মে ২০২৪, ০৩:৫৩ পিএম
তালবিয়া পবিত্র হজ ও ওমরার অন্যতম অনুষঙ্গ। এটি হাজিদের স্লোগান। এই পবিত্র স্লোগানের মাধ্যমে মূলত প্রভুর দরবারে অনুগত বান্দা হয়ে হাজির হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ইহরাম পূর্ণ হওয়ার জন্য শুধু নিয়ত করলে হয় না, একইসঙ্গে তালবিয়া পাঠ করা জরুরি। প্রথম বার তালবিয়া পড়া শর্ত। আর তারপর তালবিয়া পড়া সুন্নত। আরাফাতের ময়দান, মিনা-মুজদালিফা হাজিদের তালবিয়ার ধ্বনিতে থাকে মুখরিত।
তালবিয়া (আরবি)
لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ - لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ - اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ - لاَ شَرِيْكَ لَكَ
তালবিয়ার বাংলা উচ্চারণ
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’
তালবিয়ার অর্থ
‘আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আাপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নেয়ামত এবং সাম্রাজ্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই।’ (সূত্র: বুখারি: ১৫৪৯; মুসলিম: ২৮১১)
আরও পড়ুন:
হজে সাফা-মারওয়া সায়ি করবেন কেন?
সাফা-মারওয়া সায়ি করার সময় যে দোয়া পড়বেন
তালবিয়ার শব্দপুঞ্জের নিগূঢ় অর্থ
তালবিয়ায় ‘লাববাইক’ শব্দটি চারবার আছে। এটি একাধারে ভক্তি ও ভালবাসা এবং আনুগত্য ও সমর্পণের ভাব ধারণ করে। ‘লা-শারিকা লাক’ শব্দটি আছে দুইবার। এ হচ্ছে সকল প্রকার শিরক ও শরিককে বর্জনের ঘোষণা। আর তৃতীয় বাক্যটি অর্থাৎ ‘ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক’ হচ্ছে তাওহিদের এলান, তাওহিদের দলিল এবং আল্লাহর হামদ ও শোকর।
তালবিয়া কখন পাঠ করবে
ওমরা পালনকারী ইহরামের শুরু থেকে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করবে। তাওয়াফের আগ মুহূর্তে তালবিয়া বন্ধ করে দেবে। আর হজ পালনকারী ইহরাম বাঁধা থেকে শুরু করে ১০ জিলহজ কোরবানির দিন ‘জামরাতুল আকাবা’য় কঙ্কর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করবে। ফজল ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতেন।’ (বুখারি: ১৫৪৪)
নারী-পুরুষের তালবিয়া পড়ার আলাদা নিয়ম
পুরুষ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন এবং নারীরা পড়বেন নিম্নস্বরে। (গুনইয়াতুন নাসিক পৃষ্ঠা-৭৪, আদ্দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা- ৪৮৪)। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র.) বলেন, ‘নারীরা উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন না’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ১৪৮৮২)।
হজরত সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘আমার নিকট জিবরাইল (আ.) এলেন এবং বললেন, আমি যেন আমার সাহাবিদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশ দেই।’ (তিরমিজি: ১/১৭১)
আরও পড়ুন
হজ করার সময় শয়তানকে পাথর মারতে হয় কেন?
হজের যেসব স্থানে দোয়া করেছেন নবীজি
নারীরা বিশেষ অবস্থায়ও তালবিয়া পড়তে পারবেন
নারীরা বিশেষ অবস্থায় অর্থাৎ মাসিক ঋতুস্রাব, সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব ইত্যাদি থাকলেও তালবিয়া পাঠ ও ইহরাম গ্রহণ করতে পারবেন। হজের অন্যান্য কাজও করা যাবে। তবে এ অবস্থায় তাওয়াফ করা ও নামাজ পড়া জায়েজ নেই। কেননা, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন— নারীরা ঋতুস্রাব বা নেফাস অবস্থায় মিকাতে এলে গোসল করবেন এবং ইহরাম গ্রহণ করবেন। অতঃপর হজের আমল সম্পন্ন করবেন, তবে তওয়াফ ব্যতীত। (আবু দাউদ: ১/২৪৩)
যেভাবে তালবিয়া পড়তে হবে
তালবিয়ার বাক্য পুরোটা পাঠ করতে হবে। কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়া মাকরুহ। (আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড-০২, পৃষ্ঠা-৪৮৪, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড-০১, পৃষ্ঠা-১২৩; মানাসিক, পৃষ্ঠা-১০২)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, তালবিয়া শেষ পর্যন্ত পাঠ করো। কেননা এটি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর তালবিয়া। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ১৩৬৩৮)
তালবিয়ার পরিবর্তে অন্য জিকির কি জায়েজ?
তালবিয়ার স্থানে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, কালিমা তাইয়্যিবা বা কোনো জিকির পাঠ করলেও ইহরাম সম্পন্ন হবে। কিন্তু তালবিয়া ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করা মাকরুহ। তাই তালবিয়া পাঠ একান্ত অসম্ভব হলে আল্লাহ তাআলার কোনো জিকিরের মাধ্যমে ইহরাম গ্রহণ করবে। (মানাসিক: ১০২; গুনয়াতুন নাসিক: ৭৬; আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড-০২, পৃষ্ঠা-৪৮৩)
বিখ্যাত তাবেয়ি তাউস (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, এক ব্যক্তি তালবিয়ার জায়গায় ‘আল্লাহু আকবর’ বলেছে। তিনি বললেন, তার ইহরাম সম্পন্ন হয়েছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ১৪৯৩৫)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীপ্তকণ্ঠে হজের তালবিয়া পাঠ করার তাওফিক দিন। সকল প্রকার শরিককে অস্বীকার ও তাঁর আনুগত্য স্বীকার করার মাধ্যমে হামদ ও শোকর আদায় করার তাওফিক দান করুন। যথাযথ হজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।