ধর্ম ডেস্ক
২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৫ পিএম
দোয়া ইবাদতের মগজ। দোয়া কখনও বিফলে যায় না। হাদিস থেকে জানা যায়, আল্লাহ তাআলার কাছে ইখলাসের সঙ্গে বৈধ দোয়া করলে ৩ পদ্ধতিতে তিনি কবুল করেন। এক. হয়ত প্রত্যাশিত বিষয়টি দিয়ে দেন। দুই. দোয়ার বদৌলতে আল্লাহ তার ওপর থেকে সমপর্যায়ের বিপদ দূর করেন। তিন. পরকালে বিনিময় দেওয়ার জন্য জমা রাখেন। (আত-তারগিব: ১৬৩৩; তিরমিজি: ৫/৫৬৬; আহমদ: ৩/১৮) হাদিসে বর্ণিত বান্দার দোয়া পরকালের জন্য জমা রাখা বা প্রত্যাশিত বিষয়টার বাইরে অন্যকিছু দেওয়া—এসব আল্লাহ তাআলার প্রজ্ঞা। তিনি বান্দার জন্য উত্তমটাই করেন।
তবে হ্যাঁ কিছু কারণে দোয়া কবুল হয় না। আসুন, কারণগুলো জেনে নেই।
১. পানাহার ও পোশাক হালাল না হওয়া
হারাম খাওয়া ও হারাম উপার্জনের কারণে দোয়া কবুল হয় না। রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম: ২২৩৬)
রাসুল (স.) আরেক হাদিসে এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন—দীর্ঘ সফরের ফলে যার চুল উসকোখুসকো, চেহারা ধুলোবালিমাখা। সে হাত দুটো আকাশের দিকে উঠিয়ে বলছে, ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’, কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম আর তার পরিপুষ্টি হয়েছে হারাম দিয়ে; (এমতাবস্থায়) কীভাবে তার দোয়ায় সাড়া দেওয়া হবে?’ (সহিহ মুসলিম: ১০১৫)
আরও পড়ুন: যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ খুশি হন
২. দোয়ায় ইখলাস ও মনোযোগ না থাকা
ইখলাস অর্থ একনিষ্ঠতা, নিরেট খাঁটি বিশ্বাস, ভক্তিপূর্ণ ইবাদত। মহান আল্লাহর দরবারে ইখলাসের সঙ্গে দোয়া করতে হয়। ইখলাস না থাকলে সে দোয়া বিফলে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ইখলাসহীন ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। তাই তো মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করার আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে এছাড়া অন্যকোনো হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ‘ইবাদত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে। আর তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে আর জাকাত দিবে। আর এটাই সঠিক সুদৃঢ় দ্বীন।’ (সুরা বাইয়িনাহ: ০৫)
৩. গুনাহে অবিচল থাকা
দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো, গুনাহ ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা। অতএব, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য গুনাহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা উচিত। কারণ যারা নিজেকে বদলায় না, মহান আল্লাহও তাদের বদলান না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর কোনো সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন, তবে তা রদ হওয়ার নয়। এবং তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক নেই। (সুরা রাদ: ১১)
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দোয়া করে এবং দোয়ায় তাড়াহুড়া করে। (মুসলিম: ৬৮২৯)
আরও পড়ুন: রাতে যে নিয়মে দোয়া করলে আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না
৪. সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ না করা
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘শপথ সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দিবে ও অন্যায় কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। নতুবা, অচিরেই এর ফলে আল্লাহ তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন। এরপর তোমরা তার কাছে দোয়া করবে, কিন্তু তোমাদের দোয়া সাড়া দেওয়া হবে না।’ (তিরমিজি: ২১৬৯)
৫. ‘দোয়া কবুল হলো না’ বলা বা তাড়াহুড়ো করা
আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম, কিন্তু তিনি কবুল করলেন না—এধরণের কথা কারো কারো মুখে শোনা যায়। এসব কথা ঠিক নয়; বরং মূল্যহীন। এধরণের কথার কারণে উল্টো দোয়া বিফলে যায়। কেননা রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে এবং এ কথা না বলে যে আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না।’ (বুখারি: ৬৩৪০)
অতএব, উল্লেখিত বিষয়গুলো ঠিকঠাক রেখেই দোয়া করা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মহান আল্লাহ আমাদের সবার ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করুন। সবাইকে দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধক অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে সঠিকভাবে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।