images

ইসলাম

প্রথম তারাবিতে যা পড়া হবে

ধর্ম ডেস্ক

১১ মার্চ ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর কাছে আগমন করেছে পবিত্র রমজান। এ বরকতময় মাসেই নাজিল হয়েছে পবিত্র কোরআনুল কারিম।

রমজান মাসের অন্যতম আমল হলো কোরআনুল কারিম খতমের মাধ্যমে তারাবি নামাজ আদায়।

আজ প্রথম তারাবি। ইসলামি ফাউন্ডেশন নিধারিত প্রথম তারাবিতে দেশের প্রায় সব মসজিদে আজ পড়া হবে সুরা ফাতেহার শুরু থেকে সুরা বাকারার ২০৩ আয়াত পযন্ত।

সুরা ফাতেহা
এ সুরাটি কোরআনুল কারিমের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোত্তম সুরা। সুরাটি শুধুমাত্র তারাবি নামাজের প্রথম দিন তেলাওয়াত করা হবে এমন নয়; বরং জানাজা নামাজ ছাড়া সব নামাজের প্রত্যেক রাকাআতেই তেলাওয়াত করতে হয়।

সুরা ফাতেহার আয়াতসংখ্যা ৭। এ সুরাটি কোরআনুল কারিমের সর্বোত্তম দোয়া।

সুরাটির প্রথম তিন আয়াতে আল্লাহ পরিচয় এবং প্রশংসা রয়েছে। ৪র্থ আয়াতে আল্লাহর এবং বান্দার সম্পর্ক উল্লেখ করা হয়েছে। আর শেষাংশে আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁরই শেখানো ভাষায় পরকালের সফলতা লাভে সঠিক পথের সন্ধান লাভের আবেদন রয়েছে।

সুরা বাকারা
পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে বড় সুরার নাম সুরা বাকারা। এর আয়াতসংখ্যা ২৮৬। আজ এ সুরার ২০৩নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে।

সুরা বাকারা শুরুতেই আল্লাহ তাআলা সমগ্র কোরআনকে ঈমানদারদের জন্য হেদায়েত গ্রন্থ হিসেবে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অতঃপর মানুষের ঈমানে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

অতঃপর এ সুরায় তিন শ্রেণির মানুষের আলোচনা করা হয়েছে। তারা হলো- যথাক্রমে ঈমানদার, কাফের এবং মুনাফিক। সুরা বাকারার ২০৩নং আয়াত পর্যন্ত যে সব বিষয়গুলো পঠিত হবে, সংক্ষেপে তার বিবরণ তুলে ধরা হলো-

আয়াত ১-২০
মুত্তাকিদের পথনির্দেশিকা, সফলতা ও পরিচয়ের পর কাফেরদের পরিচয় এবং মুনাফিকের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রথম তারাবিতে যা পড়া হবে

আয়াত ২১-২৯
সমগ্র মানবজাতির প্রতি ইবাদতের আহ্বান করা হয়েছে। কোরআনের প্রতি সন্দেহপোষণকারীদের চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। মুমিনদের জন্য জান্নাতের বর্ণনার পাশাপাশি আল্লাহর অবাধ্যকারী কাফের-ফাসেকদের ক্ষতিগ্রস্তের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

আয়াত ৩০-৩৯
হজরত আদম (আ)-এর খেলাফত এবং মানুষের জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্বের আলোচনা করা হয়েছে। আদম (আ)-কে মর্যাদা ও সম্মান প্রদান এবং তাঁকে দুনিয়া প্রেরণপূর্বক মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধি নির্ধারণ করেন। শয়তানের দুশমনি ও কুমন্ত্রণা থেকে আত্মরক্ষায় তাওবার শিক্ষা প্রদান।

আয়াত ৪০-৭৪
ইহুদিদের ইতিহাস ও মুসলমানদের দুঃখ, দুর্দশা ও তার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহর দ্বীন জমিনে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি এবং অকৃতজ্ঞ ইহুদি জাতির হঠকারিতার বর্ণনাসহ সুরা নামকরণে ঐতিহাসিক গরু জবেহের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।

আয়াত ৭৫-৯৮
ইহুদিদের হেদায়েতে তৎকালীন সময়ের মুমিনদের অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। বনি ইসরাঈলের ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের পাপ-পূণ্যের বিচার, ইহুদিদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গ, বিশ্বনবীর সঙ্গে ইহুদিদের প্রতারণা, পরকালের সফলতা লাভে ইহুদিদের কুট কৌশলের মিথ্যা প্রচারণা, হজরত জিব্রাইল (আ) ও বিশ্বনবী (স)-এর সঙ্গে শত্রুতা পোষণের বিষয়টিও ওঠে এসেছে।

আয়াত ৯৯-১০৩
এ আয়াতে নবী (স)-এর প্রতি কোরআন নাজিল এবং তাঁর সত্যয়ন করা হয়েছে। আবার নিরূপায় অভিশপ্ত ইহুদি জাতির জাদুবিদ্যা বা জাদুপ্রীতির প্রতি ঝুঁকে পড়ার বিষয়টিও ওঠে এসেছে।

আয়াত ১০৪-১২৩
এ আয়াতগুলোতে ইহুদিদের শিষ্টাচারবর্হিভূত আচরণ, কোরআনের আয়াত রহিত সম্পর্কিত ব্যাখ্যা, ইহুদিদের ষড়যন্ত্র, মুসলমানদের চেতনাবোধকে জাগ্রত করা, শ্রেষ্ঠত্ব ও মুক্তিপ্রাপ্ত দল হিসেবে ইহুদি ও নাসারাদের মধ্যে কলহ ও গলাবাজি, ইহুদি-খ্রিস্টান পরস্পরের ঝগড়া বিষয়গুলো ওঠে এসেছে।

আবার মসজিদে আকসা থেকে কেবলা পরিবর্তনে ইহুদিদের অপপ্রচার, ইহুদি-খ্রিস্টান-মুশরিকদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের পর নির্ভেজাল তাওহিদের ঘোষণা এবং অন্যদের সঙ্গে ঈমানের সবচেয়ে বড় আদর্শিক সংঘাতের বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত ১২৪-১৪১
হজরত ইবরাহিম (আ) মুসলমানদের ইমাম এবং কাবাঘর নির্মাণসহ কাবাঘর সুন্দরভাবে নির্মাণ ও শেষনবী প্রেরণের দোয়া বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। হজরত ইয়াকুব (আ)-এর বংশধরদের আলোচনাও রয়েছে।

আয়াত ১৪২-১৫৭
পবিত্র কেবলা পরিবর্তনের রহস্য আলোচনা, মুসলিম জাতির গুণ ও পরিচয় এবং অমুসলিমদের কার্যাবলীর বিবরণের পাশাপাশি বিশ্বনবীর নবুয়ত ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের সঠিক ধারণা ও প্রাসঙ্গিকতা বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর ধৈর্য ও নামাজ দ্বারা আল্লাহর সাহায্য লাভ, ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা ও শহিদের মর্যাদার বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত ১৫৮-১৭৭
হজ ও ওমরা পালনে আল্লাহর নির্দশন সাফা ও মারওয়া প্রদক্ষিণের বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয়েছে। সত্য গোপনকারী অবিশ্বাসী নেতাদের ভয়াবহ পরিণতি ও হুশিয়ারি, তাওহিদের মূলনীতি, ঈমানি চিন্তাধারা, হালাল-হারাম সম্পর্কিত কোরআনি নীতিমালাসহ পূর্ব পুরুষদের অন্ধ অনুকরণের কুপ্রভাব ত্যাগ করে ইবাদত-বন্দেগিতে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করা নির্দেশ এসেছে।

আয়াত ১৭৮-১৮৮
ইসলামে কিসাস বা হত্যার শাস্তির বিধান, মুক্তিপণের আলোচনা রয়েছে। মৃতব্যক্তির অসিয়তের বিধান, রোজা বিধান, শিক্ষা ও তাৎপর্যসহ সেহেরি খাওয়ার বিধান, ইতেকাফের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।  অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ ও তার বিধান আলোচনার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে বান্দার সাহায্য কামনার বিষয়টিও ওঠে এসেছে।

আয়াত ১৮৯-২০০
চাঁদের আবির্ভাব, ক্রমবৃদ্ধি ও ক্রমহ্রাসের বিবরণ, কুসংস্কারের মুলোৎপাটন, পবিত্র মাসসমূহে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধের বিবরণ, জিহাদে লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও বিধান প্রণয়ন, আল্লাহর পথে ব্যয়সহ হজ ও ওমরা বিধি-বিধান এবং হজের সমাপ্তি ও পরবর্তী করণীয় আলোচনা করা হয়েছে।

২০১ নং আয়াত
আল্লাহ তাআলা দুনিয়া বান্দার জন্য সর্বোত্তম দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। যে দোয়া মুসলিম উম্মাহ পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত জায়গা অতিক্রমকারে তেলাওয়াত করে।

এ দোয়া হলো বান্দার জন্য সর্বোত্তম দোয়া। আর তা হলো- ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’

অর্থ- হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, পরকালের কল্যাণ দান করুন এবং আমাকে জাহান্নামের আগুণ থেকে হেফাজত করুন।

২০২ নং আয়াত
বান্দার অর্জন সম্পর্কে আল্লাহর হিসাব গ্রহণের বিষয়ের গুরুত্ব ওঠে এসেছে। আর এ দিনের তারাবির শেষ ২০৩নং আয়াতে হজের দিনগুলোতে মিনায় তিন দিন অবস্থানকালে আল্লাহর স্মরণ কেমন হবে তা তুলে ধরা হয়েছে।