images

ইসলাম

শবে বরাতে নবীজি যে আমল করতেন

ধর্ম ডেস্ক

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২০ পিএম

শবে বরাতের অল্প কিছুদিন বাকি। ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ শবে বরাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরবি শাবান মাসের ১৫তম রাতই মূলত শবে বরাত। মুসলমানদের কাছে এই রাত অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ রাত। আরবি পরিভাষায় একে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়। এ রাতের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। মহানবী (স.) রাতটি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতেন। রাতভর নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তসবিহ-তাহলিল পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি আমলে মশগুল থাকতেন। শবে বরাতে রোজা রাখা ও কবর জেয়ারত করাও মোস্তাহাব আমল। 

আলী বিন আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘অর্ধ শাবানের রাত তোমরা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে এসে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছো কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করবো। আছো কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করবো। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮)

আরও পড়ুন: শবে বরাতে ৬টি দোয়া করতে ভুলবেন না

অনেকে শবে বরাতের ফজিলত বিষয়ক সকল হাদিসকে জয়িফ বলে থাকেন। এটি ঠিক নয়। সনদের বিচারে সবচেয়ে উত্তম বর্ণনা, যা ইবনে হিববান বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন— ‘অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ তাআলা সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৯০; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

আরো একাধিক হাসান হাদিসেও শবে বরাদের মর্যাদার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এছাড়াও শবে বরাতের রাতের আমল সম্পর্কে ‘শুআবুল ঈমান’ বায়হাকির নিম্নোক্ত হাদিসটি লক্ষণীয়। আয়েশা (রা.) বলেন—‘একবার রাসুলুল্লাহ (স.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো- তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না- হে আল্লাহর রাসুল। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। তখন নবী (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ (স.) তখন ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২-৩৮৩; তাবরানি: ১৯৪)

আরও পড়ুন: শবে বরাতে ইবাদত কবুলের শর্ত

উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে এ রাতের ফজিলত যেমন জানা যায়, একইভাবে এ রাতের আমল কেমন হওয়া উচিত তাও বোঝা যায়। অর্থাৎ এ রাতে দীর্ঘ নামাজ পড়া, সেজদা দীর্ঘ হওয়া, দোয়া ও ইস্তেগফার করা খুবই ফজিলতপূর্ণ আমল। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, বর্ণিত আছে, পাঁচ রাত্রিতে দোয়া কবুল হয়, তন্মধ্যে একটি লাইলাতুল বরাতের দোয়া।’ (কিতাবুল উম্ম-১/২৬৪)

তবে শবে বরাতে বিশেষ পদ্ধতির কোনো ইবাদত নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকেও এধরণের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং আমাদের সমাজে প্রচলিত শবে বরাতের বিশেষ পদ্ধতির যে নামাজের কথা বলা হয় তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট। এগুলো বিশ্বাস করা এবং এগুলোর ওপর আমল করা জায়েজ নেই। একাকীভাবে কবর জিয়ারতে কোনো সমস্যা নেই। রাসুল (স.) চুপিসারে একাকী জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন-এক রাতে রাসুল (স.)-কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন- কি ব্যাপার আয়েশা? তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তার রাসুল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? আয়েশা (র.) বললেন, আমার ধারণা হয়েছিল— আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) তখন বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত আসে, তখন আল্লাহ তাআলা এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরির পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৭৩৯)

আসুন, আমরা এই রাতে আল্লাহর দিকে মনোযোগী হই, বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং বিশুদ্ধ আমলের মাধ্যমে শবে বরাতের ফজিলত, বরকত ও মাগফিরাত হাসিল করি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ রাতের প্রভূত কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন এবং সর্বপ্রকার অকল্যাণ থেকে নিরাপদ রাখুন। আমিন।