ধর্ম ডেস্ক
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৪ পিএম
কোরআন তেলাওয়াতের একটি আদব হলো তেলাওয়াতের সময় কান্না করা। বিশেষ করে মৃত্যু, পরকাল, আল্লাহর সীমাহীন দয়া ও আজাব সংক্রান্ত আয়াতে নবীজি (স.) ও সাহাবিরা কান্না করতেন। অনেক সময় কান্নায় লুটিয়ে পড়তেন। এটি মহান একটি গুণ। আগেকার নবী-রাসুলরাও তাঁদের ওপর নাজিলকৃত আল্লাহর আয়াত পড়ার সময় কাঁদতে কাঁদতে সেজদায় পড়ে যেতেন। এই গুণটি আল্লাহ তাআলার অনেক পছন্দের।
কোরআন তেলাওয়াতের সময় ক্রন্দনরতদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন- وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡکُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১০৯)
আরও পড়ুন: আল্লাহর কাছে বান্দার দুই ফোঁটা অশ্রুর মূল্য কত জানেন?
আরও ইরশাদ হয়েছে- أُولَئِكَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ مِنْ ذُرِّيَّةِ آدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِنْ ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْرَائِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَنِ خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا ‘এরাই আদম-বংশের অন্তর্গত নবীগণ; যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং যাদেরকে আমি নুহের সাথে কিশতিতে আরোহণ করিয়েছিলাম এবং ইবরাহিম ও ইসরাইল-বংশের অন্তর্গত এবং যাদেরকে আমি সুপথগামী ও মনোনীত করেছিলাম; যখন তাদের নিকট পরম দয়াময়ের আয়াত পাঠ করা হত, তখন তারা কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় পতিত হত। (সুরা মরিয়ম: ৫৮)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (স.) আমাকে বলেছেন, আমাকে তুমি তেলাওয়াত করে শোনাও। বললাম, আমি আপনাকে তেলাওয়াত শোনাব, অথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বলেন, আমি অন্যের তেলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি তাঁকে সুরা নিসা পড়ে শোনাতে লাগলাম। যখন আমি সুরা নিসার ৪১ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করলাম, তিনি বললেন, ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। (বুখারি: ৫০৫০; মুসলিম: ১৯০৩)
আয়াতটি হলো- فَکَیۡفَ اِذَا جِئۡنَا مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍۭ بِشَهِیۡدٍ وَّ جِئۡنَا بِکَ عَلٰی هٰۤؤُلَآءِ شَهِیۡدًا ‘যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের ওপর সাক্ষীরূপে, তখন কী অবস্থা হবে?’ (সুরা নিসা: ৪১)
আরও পড়ুন: হাশরের দিনের কঠিন তিন মুহূর্ত
কাসিম (রহ.) একবার আয়েশা (রা.)-এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি দেখেন, আয়েশা (রা.) একটি আয়াত বারবার আবৃত্তি করছেন আর কেঁদে কেঁদে দোয়া করছেন। আয়াতটি হলো- فَمَنَّ اللّٰهُ عَلَیۡنَا وَ وَقٰىنَا عَذَابَ السَّمُوۡمِ ‘অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং আগুনের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন।’ (সুরা তুর: ২৭)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) যখন এ আয়াত তেলাওয়াত করেন, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন। আয়াতটি হলো- وَ جَآءَتۡ سَکۡرَۃُ الۡمَوۡتِ بِالۡحَقِّ ؕ ذٰلِکَ مَا کُنۡتَ مِنۡهُ تَحِیۡدُ ‘আর মৃত্যুর যন্ত্রণা অবশ্যই আসবে, যা থেকে তুমি পলায়ন করতে চাইতে।’ (সুরা ক্বফ: ১৯)
আরও পড়ুন: নেককার বান্দার জান কবজ করা হয় যেভাবে
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখন এ আয়াতটি পড়তেন, তখনই তিনি কান্নাকাটি করতেন। আয়াতটি হলো- لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ اِنۡ تُبۡدُوۡا مَا فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ اَوۡ تُخۡفُوۡهُ یُحَاسِبۡکُمۡ بِهِ اللّٰهُ ‘...আর তোমাদের মনে যা আছে, তা যদি তোমরা প্রকাশ করো অথবা গোপন করো, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন...।’ (সুরা বাকারা: ২৮৪)
কোরআন তেলাওয়াতের সময় কান্নাকাটি করা এবং চোখে পানি আসা ঈমানের আলামত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘কোরআনের পাঠকদের মধ্যে ওই ব্যক্তির কণ্ঠ সর্বোত্তম, যার তেলাওয়াত কেউ শুনলে মনে হয় যে সে কাঁদছে।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৩৯)
আরও পড়ুন: প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত
আল্লাহর ভয়ে কান্না আসা নেককার বান্দার বৈশিষ্ট্য। তারা পরম সৌভাগ্যবান। এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে লোক কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার ওলানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তাআলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না (আল্লাহ তাআলার পথের পথিক জাহান্নামে যাবে না)। (তিরমিজি: ১৬৩৩)
রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবিদের বেশি বেশি কান্না করার উপদেশ দিতেন। এক হাদিসে তিনি বলেছেন—‘..আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব কম হাসতে, বেশি কাঁদতে...।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৯০; মেশকাত: ৫৩৪৭; সহিহাহ: ১৭২২)