images

ইসলাম

নতুন বছরে বর্জনীয়

ধর্ম ডেস্ক

৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৩৭ পিএম

ইংরেজি নববর্ষ-২০২৪ উদযাপনে বিশ্বের অমুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি অনেক মুসলিম দেশও জমকালো আয়োজন ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে। রাত ১২টা বাজলেই সারাবিশ্বে শুরু হবে এক আধুনিক বর্বরতা। ভোর পর্যন্ত থাকবে আতশবাজি-পটকার উচ্চ আওয়াজ, কোথাও উড়বে ফানুসের অগ্নিশিখা।

এভাবে নতুন বছরকে বরণ করার সংস্কৃতি অমুসলমিদের তৈরি। আর মুসলমানদের অনেকে দুর্ভাগ্যবশত নিজেদের ঐতিহ্যকে ভুলে গা ভাসিয়ে দিয়েছে বিজাতীয়দের সংস্কৃতির মধ্যে। অথচ এ বিষয়ে নবীজির হুঁশিয়ারি রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কেয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আবুদাউদ, মেশকাত: ৪৩৪৭)

আতশবাজি, পটকার কারণে জনসাধারণকে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হয়। এতে রোগী, শিশু-বৃদ্ধদের কষ্ট হয়। আমাদের মনে আছে তানজিম উমায়েরের কথা। ২০২১ সালের শেষরাতে ঢাকা তিলোত্তমা নগরীতে তরুণ-তরুণীরা যখন নতুন বছর বরণে মাতোয়ারা, ঠিক তখন ১৮ মাসের শিশু উমায়ের তাদের আতশবাজি-পটকার আওয়াজে ছটফট করছিল। এক পর্যায়ে হৃদরোগের সমস্যা বেড়ে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শিশুটিকে বাঁচাতে তার বাবা হাসপাতালে নিয়ে ছোটেন। কিন্তু বাঁচানো সম্ভব হয়নি। দীর্ঘক্ষণ পটকার আওয়াজ তার এমন ক্ষতি করে ফেলেছিল যে, বাঁচার সকল সম্ভাবনাই তখন শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরকম শত মায়ের কোল খালি করেছে বর্ষবরণের নামে উচ্চ আওয়াজের হৈ-হুল্লোড়। 

আরও পড়ুন: থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে ডিএমপির ১২ নির্দেশনা

পিপলস ফর এনিমেল ফাউন্ডেশনের (পিএডাব্লিউ) চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল বলেন, প্রতিবছর আনন্দের নামে যে আতশবাজি ফুটিয়ে উচ্চ শব্দ তৈরি করা হয় এ থেকে আমরা মুক্তি চাই। বিকট শব্দে আনন্দ প্রকাশ করা বর্বরতা। এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই বর্বরতা থেকে মুক্তি মিলবে। 

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) নামের একটি সংগঠন জানিয়েছে, আতশবাজির উচ্চশব্দে প্রাণী ছাড়াও শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী মা এবং রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের দেশেই বর্ষবরণের বাজির শব্দে শিশু প্রাণহানি ঘটেছে, অনেকেই হার্ট অ্যাটাক করেছেন এবং অসুস্থ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা বারংবার ঘটেছে। পাখিরাও প্রচণ্ড আওয়াজের কারণে কষ্ট পায়। অনেকসময় গাছে বা বিল্ডিংয়ের দেয়ালে আঘাত পেয়ে নিচে পড়ে যায় ফলে আহত হয় এবং মারাও যায়। রাস্তার কুকুর-বিড়াল, গৃহপালিত প্রাণী এমনকি বন্যপ্রাণীরাও শব্দের কারণে ভয়ে বিভ্রান্ত হয়ে দিক-বিদিক ছোটাছুটি করতে গিয়ে মারা যায়। এছাড়াও গত দুই বছরে দেখা গেছে, শুধুমাত্র ফানুসের আগুনে ২০০ স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

মূলত এসব কারণেই ইসলামে তা ক্ষতিকর ও অপসংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এবং নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও  প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব: ৫৮) 

আরও পড়ুন: শয়তানের শেষ অস্ত্র বিদআত

এছাড়াও অর্থের অপচয় হয় বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে। যাকে পবিত্র কোরআনে শয়তানের কাজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কারণ যেসব অর্থ হৈ-হুল্লোড়ের জন্য অপচয় হয়, তা ছিল মূলত গরিবদের অধিকার। অপচয়কারীদের প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের বড়ই অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৭)

‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ বা ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বিভিন্ন নামে কোনোরকম অশ্লীল আয়োজন করা হারাম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আপনি বলুন, আমার রব প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপকাজ, অন্যায় ও অসংগত বিদ্রোহ ও বিরোধিতা এবং আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা, যার পক্ষে আল্লাহ কোনো দলিল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা, যা সম্বন্ধে তোমাদের কোনো জ্ঞানই নেই, (ইত্যাদি কাজ ও বিষয়) নিষিদ্ধ করেছেন। (সুরা আরাফ: ৩৩)

বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে নববর্ষ উদযাপনের নামে সবরকম বর্বরতা, অপসংস্কৃতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ডিএমপি জানিয়েছে, উন্মুক্ত স্থানে সভা-জমায়েত বা উৎসব, অনুষ্ঠান, সমাবেশ, নাচ, গান ও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। কোথাও কোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো বা ক্রয় বিক্রয় করা যাবে না। 

নতুন বছরের আগমনে মুসলমানদের করণীয় হবে- ফেলে আসা দিনগুলোর ভালো-মন্দ হিসাব করা এবং আগামীর জন্য পরিকল্পনা করা। কারণ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেকের উচিত আগামীর জন্য সে কী করেছে তা খতিয়ে দেখা..।’ (সুরা হাশর: ১৮)

আরও পড়ুন: নতুন বছরে যা করতে বলে ইসলাম

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে।’ (তিরমিজি: ২৪৫৯)

নতুন বছরটি যেন সুন্দর ও কল্যাণকর হয় সেজন্য দোয়া করাই হবে মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমল বা করণীয়। সাহাবিরা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া করতেন—اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ، وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ، وَالْإِسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ ‘আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের ঈমান ও ইসলামকে নিরাপদ করুন। আমাদের সুরক্ষা দিন। দয়াময় রহমানের কল্যাণ দান করুন। শয়তানের কুমন্ত্রণার মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।’ (আল-মুজাম আল-আওসাত: ০৬/২২১)

অথবা এই দোয়া করা— اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ ، وَالإِيمَانِ ، وَالسَّلامَةِ ، وَالإِسْلامِ ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ ‘আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমান।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের ঈমান ও ইসলামকে নিরাপদ করুন। আমাদের সুরক্ষা দিন। শয়তানের কুমন্ত্রণার মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন। দয়াময় রহমানের কল্যাণ দান করুন। (মু’জামুস সাহাবাহ: ০৩/৫৪৩; আল-ইসাবাহ: ০৬/৪০৭-৪০৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নববর্ষের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। সকল রকম অপসংস্কৃতি, অকল্যাণকর বিষয় থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।