images

ইসলাম

আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে থাকলে যেসব উপকার পাবেন

ধর্ম ডেস্ক

২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৩৪ পিএম

আল্লাহওয়ালা লোকের সোহবত বা সংশ্রবে থাকতে পারা অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। এতে কল্যাণমুখী শিক্ষা ও সদুপদেশ লাভ হয়। সৎকাজ করা ও অসৎকাজ থেকে দূরে থাকা অভ্যাসে পরিণত হয়। এসবের প্রভাব পড়ে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে। জীবন হয় ধন্য। এককথায় আল্লাহওয়ালাদের সংসর্গ উত্তম চরিত্র গঠনের অন্যতম হাতিয়ার। 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! (চলা-ফেরা ও সব কাজে) তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং (যারা দ্বীনের ব্যাপারে অটল এরূপ) সত্যবাদীদের সংসর্গ গ্রহণ কর।’ (সুরা তাওবা: ১১৯) 

আরও পড়ুন: সত্য বলার পুরস্কার

অপরদিকে চরিত্রহীন ও মন্দলোকের সংশ্রব গ্রহণ করলে দ্বীনের পথে থাকা খুব কঠিন হয়ে যায়। আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলোর প্রতি উদাসীনতা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে নিজের মধ্যেই মন্দ দিকগুলো ঢুকে পড়ে। বিষয়টি সাধারণ উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা সহজ। আতরের দোকানে বসলে সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। ডাস্টবিনের কাজ করলে, তার থেকে দুর্গন্ধ অনুভূত হয়—এটি স্বাভাবিক। হাদিস শরিফে ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীকে তুলনা করা হয়েছে আতর বিক্রেতা ও কামারের হাপর হিসেবে। কস্তুরী বহনকারী থেকে আপনি কিছু না কিনলেও সুবাস পাবেন। আর কামারের হাপর (কয়লার আগুনকে উস্কে রাখার পাখা) আপনার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, নয়তো দুর্গন্ধ দেবে।’ (দ্র: সহিহ বুখারি: ৫১৩৬)

যার বন্ধু-বান্ধব মাদকাসক্ত কিংবা নর্তকী, তার কখনো তাকওয়া বা পরহেজগারির শিক্ষা লাভ হবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহওয়ালার পাশে থাকে, তার মধ্যে কখনও মদ খাওয়া বা নাচ-গান করার চিন্তা উদয় হবে না। এজন্যই রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে সতর্ক করেছেন এভাবে—‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতি অনুসরণ করে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ: ৪৮৩৩)

আরও পড়ুন: ইসলামে বন্ধুত্বের বিশেষ মূল্যায়ন ও ফজিলত

যারা মন্দলোকের সঙ্গে থাকে, আবার জান্নাতে যাওয়ারও আশা করে তারা নির্বোধ। আল্লাহর রাসুলের সোহবতে হজরত ওমর (রা.), হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত ওসমান ও আলী (রা.)-এর মতো মানুষ তৈরি হয়েছে। ফেরাউন, নমরুদ বা কারুনের সঙ্গে থেকে হজরত আবু বকর কিংবা হজরত ওমর হওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি মন্দ মানুষের সঙ্গে জীবন কাটিয়ে দিলে জান্নাতি মানুষ হওয়া প্রায়ই অসম্ভব। আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, মানুষ যাকে ভালবাসবে (কেয়ামতের দিন) সে তারই সাথী হবে। (সহিহ বুখারি: ৬১৬৮, ৬১৬৯)

হাশরের দিন তারা আফসোস করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অপরাধী সেদিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম!’(সুরা ফুরকান: ২৭-২৮)

আরও পড়ুন: হাশরের মাঠে কার কী অবস্থা হবে?

অতএব, আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহণ করুন, তবেই প্রকৃত মানুষে পরিণত হবেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুলকে বলছেন, ‘আপনি দৃঢ়চিত্ত হয়ে তাদের সঙ্গে অবস্থান করুন, যারা সকাল-সন্ধ্যা তাদের প্রতিপালককে আহ্বান করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের সন্ধানে। পার্থিব জীবনের শোভা ও চাকচিক্য কামনায় আপনি তাদের থেকে আপনার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। আপনি তার আনুগত্য করবেন না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে উদাসীন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির আনুগত্য করে আর যার কার্যকলাপ সীমালঙ্ঘনমূলক।’ (সুরা কাহাফ: ২৮)

উল্লেখ্য, আল্লাহওয়ালা বা আল্লাহর সর্বোত্তম বান্দার অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন—১. যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। (ইবনে মাজাহ: ৪১১৯) ২. যে দ্বীনের সঠিক বুঝ রেখে ভালো আমল করে থাকে। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৭৯০) ৩. যার অন্তর পাপমুক্ত, পরিষ্কার, কারও প্রতি কোনো আক্রোশ ও বিদ্বেষ নেই এবং সত্যবাদী। (ইবনে মাজাহ: ৪২১৬) ৪. যে নিজ জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।’ (সহিহ বুখারি: ২৭৮৬) ৫. যে উত্তমভাবে পাওনা আদায় করে।’ (সহিহ বুখারি: ২৩০৫) ৬. যার থেকে সবাই মঙ্গলের আশা করে এবং তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে। (তিরমিজি: ২২৬৩) ৭. যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি সুন্দর।’ (সহিহ বুখারি: ৩৫৫৯) ৮. যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’ (সহিহ বুখারি: ৪৬৮৯) ৯. যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি: ৫০২৭) ইত্যাদি আল্লাহওয়ালা ও উত্তম বান্দাদের বৈশিষ্ট্য।