images

ইসলাম

বালেগ না হলেও যে বয়সে পর্দা করা জরুরি

ধর্ম ডেস্ক

২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৬ পিএম

ইসলামে ছেলে-মেয়েদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার বয়স ও আলামত দুটোই রয়েছে। যদি কারো ক্ষেত্রে বয়সের আগে আলামত প্রকাশ পায়, তখন আর বয়সের অপেক্ষা করতে হবে না। আলামত বা নিদর্শন প্রকাশের পরই তাকে প্রাপ্তবয়স্ক ধরা হবে এবং সে পর্দার বিধানের আওতায় চলে আসবে। কিন্তু যদি নির্দিষ্ট বয়স অতিক্রম করার পরও আলামত প্রকাশ না পায়, তাহলে আর আলামতের অপেক্ষা নয়, বরং ওই বয়সেই তাকে প্রাপ্তবয়স্ক ধরা হবে এবং তখন থেকেই সে পর্দার বিধানের আওতাভুক্ত হয়ে যাবে। 

সেই বয়সটি হলো ১৫। এই বয়স পার হয়ে গেলেও কোনো ছেলের যদি স্বপ্নদোষ কিংবা নাভির নিচে পশম গজানো অথবা বীর্য নির্গত হওয়া—এ ধরণের কোনো আলামত প্রকাশ না পায়, তাকে ১৫ বছরেই প্রাপ্তবয়স্ক ধরা হবে। একইভাবে কোনো মেয়ের ১৬/১৭ বছরে পরে স্রাব শুরু হলেও তাকে ১৫ বছর থেকেই প্রাপ্তবয়স্ক ধরা হবে।

আরও পড়ুন: মসজিদে শিশুরা কোন কাতারে দাঁড়াবে?

সুতরাং প্রতীয়মান হলো যে, ১৫ বছর বয়স হওয়া বালেগ হওয়ার জন্য একটি নিদর্শন। তাই কোনো ছেলে এই বয়সে পদার্পণ করলে বালেগ হওয়ার কোনো নিদর্শন ছাড়াই তার ওপর এবং তার সামনে পর্দা মেনে চলা জরুরি।

কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের কর্তব্য হলো ৯ বছর থেকেই তাদের পর্দার আওতায় নিয়ে আসা। অর্থাৎ যখন শরীরের বাহ্যিক দিকগুলো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে তখন থেকেই তাদের ওপর পর্দা করা জরুরি হয়ে যায়। এ পর্যায়ে পর্দার বিধানটা গুনাহ ও ফেতনা থেকে মুক্ত থাকার জন্যে। ফিকাহবিদগণ ৯ বছর বয়স থেকেই শরীরের গড়ন অনুযায়ী এ হুকুম আরোপিত হতে পারে বলে মত ব্যক্ত করেছেন।

ছেলেদের সামনে পর্দার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে বেশি অবহেলা দেখা যায়। একেবারে ঢেকে থাকারও প্রয়োজন অনুভব করে না অনেকে। এটি উচিত নয়। পবিত্র কোরআনে কিন্তু পর্দার হুকুম থেকে মুক্ত ব্যক্তিদের আলোচনাও এসেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, সন্তান, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।’ (সুরা নুর: ৩১)

উক্ত আয়াতে শেষে দ্বাদশ নম্বরে ওসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালককে বোঝানো হয়েছে যারা এখনো সাবালকত্বের নিকটবর্তী হয়নি এবং নারীদের বিশেষ আকর্ষণ, কমনীয়তা ও গতিবিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ বেখবর, তাদেরকে পর্দার হুকুমের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এসব বালকের উপর পর্দা ফরজ নয়, কিন্তু নারীদের জন্য এদের সঙ্গে পর্দা করে চলা জরুরি। ফিকাহবিদগণ বালকের এ হুকুম অবস্থাভেদে ১০ বছর থেকে শুরু হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং বালেগ হয়নি কিংবা ১৫ বছর হয়নি বলেই এ বয়সের ছেলেদেরকে গায়রে মাহরাম মহিলাদের ভিতর যেতে দেওয়া অন্যায়। তদ্রূপ নারীদের জন্যও এ বয়সের ছেলেদের সামনে বেপর্দা চলাফেরা করা গুনাহ।

(রদ্দুল মুহতার: ৬/১৫৩-১৫৪, আলবাহরুর রায়েক: ৮/৮৫, তাবয়িনুল হাকায়েক: ৫/২০৩; মারেফুল কোরআন: ৬/৪০৫; তাফসিরে কুরতুবি: ১২/১৫৭; তাফসিরে মাহজারি: ৬/৫০১; আহসানুল ফতোয়া: ৩৬-৪০)