images

ইসলাম

যে দান আপনাকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে

মো. মারুফুল আলম

১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৩১ পিএম

ইসলামে দান-সদকা উত্তম আমল এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনের মহিমান্বিত অভ্যাস ছিল উদারচিত্তে দান করা। দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানোকে বড় ইবাদত বলতেন তিনি। দান প্রকাশ্যে বা গোপনে উভয় অবস্থায় করা যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই।’ (সুরা বাকারা: ২৭৪)

তবে, গোপন দান আল্লাহ খুব পছন্দের আমল। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো ভালো। আর যদি গোপনে দান করো এবং অভাবগ্রস্তকে দাও তা তোমাদের জন্য অধিকতর ভালো। (সুরা আল বাকারা: ২৭১)

আরও পড়ুন: নেকি খেয়ে ফেলে যে ৬ গুনাহ 

আলেমদের মতে, প্রকাশ্যে দান করা সবার উচিত নয়। বিশেষ করে দান-সদকাকে যাদের ভিন্নখাতে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে— যেমন পার্থিব যেকোনো সুবিধা নেওয়া, খোঁটা দেওয়া, প্রশংসা কুড়ানোর মনোভাব ইত্যাদি লোভ যার মধ্যে কাজ করতে পারে তার উচিত গোপনে দান করা। আসলে প্রকাশ্যে দান করার ঈমানি দৃঢ়তা সবার থাকে না। বিশেষ করে নামাজ-রোজার মতো ফরজ ইবাদত নষ্টকারীদের মোটেও থাকার কথা নয়।

যদি কেউ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সুনাম কুড়ানোর জন্য দান-সদকা করে বা পার্থিব কোনো সুবিধা নেওয়ার নিয়তে তা করে, তাহলে ওই দানটি তার জাহান্নামের কারণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামে এ ধরণের আমলকে বলে রিয়া। মুমিনের ইবাদত ধ্বংস করে তাকে জাহান্নামি বানানোর জন্য এটি শয়তানের অন্যতম ফাঁদ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, দানের কথা প্রচার করো না এবং কষ্ট দিয়ে (খোঁটা দিয়ে) তোমাদের দান ওই ব্যক্তির মতো ব্যর্থ করো না, যে নিজের ধন সম্পদ কেবল লোক দেখানোর জন্যই ব্যয় করে..।’ (সুরা বাকারা: ২৬৪)

মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—‘আমি যে বিষয়টি তোমাদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই, তা হলো শিরকে আসগর (ছোট শিরক)। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! শিরকে আসগর কী? তিনি বলেন, রিয়া বা লোক দেখানো আমল। কেয়ামতের দিন যখন মানুষকে তাদের কর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে, তখন মহান আল্লাহ তাদের বলবেন, তোমরা যাদের দেখাতে তাদের কাছে যাও, দেখো তাদের কাছে তোমাদের পুরস্কার পাও কি না!’’ (আহমদ, আল-মুসনাদ ৫/৪২৮-৪২৯; হাইসামি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১/১০২। হাদিসের মান সহিহ)

আরও পড়ুন: নামাজের মধ্যেও মানুষ শিরক করে যেভাবে

লোক দেখানো ইবাদত পরকালে আক্ষেপের কারণ হবে। মুসলিম শরিফে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) কেয়ামতের দিন লোক-দেখানো আমলকারীদের বিচারের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন, যাতে একজন শহীদ (আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী), একজন কোরআনের শিক্ষক ও একজন দানবীরের আলোচনা এসেছে। যারা খ্যাতি ও সুনামের মোহে জিহাদ, কোরআন শিক্ষা ও দান করত। তারা তাদের আমলের প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ তাদের বলেন, ‘তোমরা যা চেয়েছ পৃথিবীতে তা পেয়েছ। সুতরাং আজ আমার কাছে তোমাদের কোনো প্রাপ্য নেই।’ (সহিহ মুসলিম: ৩৫২৭)

গোপন দানের মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবে না, আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তাঁর আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে একজন হলো ওই ব্যক্তি, যে এতো গোপনে দান করত যে, তার ডান হাতের দান বাম হাতও টের পেত না। (বুখারি: ৬৬০, মুসলিম: ১০৩১)

সাহাবিদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল গোপনে নেক আমল করা। ইবনুল কায়্যিম (রহ) বলেন, পূর্বসূরি নেককারদের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ছিল যে, তারা অন্তত একটি বিশেষ নেক আমল এতটাই গোপন রাখতেন যে, তাদের স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যরাও জানতেন না। এর কারণ হলো, অন্তত এই একটি আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারে যাতে পুরোপুরি পরিতুষ্ট ও নিশ্চিন্ত থাকা যায়।

সালাফদের মতে, গুনাহকে যেভাবে গোপন রাখা হয়, সেভাবে নেক আমলগুলোকেও গোপন রাখা উচিত। বরং তা আরো বেশি গোপন রাখা উচিত। কারণ, গোপন নেক আমলের ওসিলায় ফেতনা ও পরীক্ষার সময় দ্বীনের ওপর অবিচল থাকা সহজ হয়। ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যু-যন্ত্রণা ও কেয়ামতের দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, সে যেন প্রকাশ্যে আমলের চেয়ে গোপনে অধিক আমল করে।’ (তারতিবুল মাদারিক ওয়া তাক্বরিবুল মাসালিক)

তাই আসুন! আমরা লোক দেখানো দান না করে প্রভুকে সন্তুষ্ট করার জন্য দান করি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।