ধর্ম ডেস্ক
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:১৭ পিএম
প্রিয়নবী (স.) গুনাহগার উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। উম্মতের জন্য তিনি এতটাই আবেগপ্রবণ ছিলেন যে, মহান আল্লাহর দরবারে তাদের মুক্তির জন্য কান্নাকাটি করতেন। এ প্রসঙ্গে সহিহ মুসলিমে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে আছে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) একদিন সমবেত সাহাবিদের সামনে আল্লাহ পাকের একটি বাণীটি পাঠ করলেন, যাতে নিজ উম্মত সম্পর্কে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর এই বক্তব্য উল্লেখ আছে: ‘হে আমার পরওয়ারদিগার! এই মূর্তিগুলো অসংখ্য মানুষকে বিপথগামী করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে কেবলমাত্র সে-ই আমার দলভুক্ত। আর কেউ আমার কথা অমান্য করলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ইবরাহিম: ৩৬)
তারপর নিজ উম্মত সম্পর্কে হজরত ঈসা (আ.)-এর এ বক্তব্য কোরআন থেকে পাঠ করলেন: ‘যদি তুমি তাদের শাস্তি দাও, তবে তারা তো তোমারই বান্দা। আর যদি তাদের ক্ষমা করে দাও তবে তা-ও তোমার অসাধ্য নয়। কারণ, তুমি তো মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী। (সুরা মায়েদা: ১১৮) এ দু’টি আয়াত পাঠ করার পর রাসুলুল্লাহ (স.) মহান আল্লাহর দরবারে দু’টি হাত উত্তোলন করে বললেন—
‘হে আল্লাহ, আমার উম্মত! আমার উম্মত! এবং অনেক কান্নাকাটি করলেন।’ তখন মহান আল্লাহ জিব্রাঈলকে বললেন, হে জিব্রাঈল! মুহাম্মদ (স.)-এর কাছে যাও। তাঁকে জিজ্ঞেস করো, সে কী কারণে কাঁদছে? অথচ আল্লাহপাকই সর্বাধিক জানেন, তিনি কেন কাঁদছেন। জিব্রাঈল (আ.) এসে তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। নবী (স.) তাঁকে সব কিছু জানালেন। অথচ আল্লাহ নিজেই সব কিছু জানেন। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন: মোহাম্মদ (স.)-এর কাছে ফিরে যাও। গিয়ে তাঁকে বলো- আমি অচিরেই তোমাকে তোমার উম্মতের ব্যাপারে সন্তুষ্ট করব। তোমার মনে ব্যথা দেবো না।’ (সহিহ মুসলিম: ২০২)
আরও পড়ুন: মহানুভবতার অনন্য উপমা যিনি
উম্মতের প্রতি প্রিয়নবী (স.)-এর ভালোবাসা পরিমাপ করে শেষ করা যাবে না। যে কারণে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেছেন এভাবে—لَقَدۡ جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ عَزِیۡزٌ عَلَیۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِیۡصٌ عَلَیۡکُمۡ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ অর্থ: ‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে একজন রাসুল এসেছেন; (তোমাদের জন্য তাঁর মায়া এতই বেশি যে) তোমাদেরকে যা কিছু কষ্ট দেয় তা তার কাছে খুবই কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা তাওবা: ১২৮)
গুনাহের কাজের দিকে সাধারণত মানুষের ঝোঁক বেশি। কারণ গুনাহকে আকর্ষণীয় করা হয়েছে। এই আকর্ষণ থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ ও সফলতা নিহিত। অন্যথায় গুনাহের বোঝা নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। প্রিয়নবী (স.) তাঁর প্রিয় উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য নেক আমলের শিক্ষা দিতেন এবং গুনাহের কাজ বর্জনের নসিহত করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার ও মানুষের উদাহরণ হলো ওই ব্যক্তির মতো, যে আগুন জ্বালিয়েছে। আগুন চারপাশ আলোকিত করলে কীট-পতঙ্গ এসে ভিড় জমাতে থাকে। পতঙ্গগুলো আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর ওই লোক তাদের সেখান থেকে তুলে ছুড়ে ফেলে। আবার তারা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করেন। আমি তোমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাধা দিই। আর মানুষ সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’ (বুখারি: ৬৪৮৩)
আরও পড়ুন: প্রিয়নবীর (স.) শুভাগমনকালে বিস্ময়কর যত ঘটনা
রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতের জন্য এতই ফলপ্রসূ চিন্তা করতেন যে, তাদের জন্য একটি দোয়া জমা রেখেছেন। যে দোয়া পরকালে করবেন। কারণ পরকালীন সফলতাই মানুষের আসল সফলতা, চিরস্থায়ী সফলতা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সব নবীর এমন কিছু দোয়া আছে, যা আল্লাহর কাছে কবুল হয়। সব নবী দ্রুত নিজেদের জন্য দোয়া করেছে। আমি তা কেয়ামতের দিন উম্মতের সুপারিশের জন্য গোপন করে রেখেছি। আমার উম্মতের মধ্যে যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ইনশাআল্লাহ আমার সুপারিশ লাভ করবে।’ (সহিহ মুসলিম: ১৯৯)
এমন দরদি নবী, এমন দরদি অভিভাবক-বন্ধুর জন্য আমাদের অনেক করণীয় রয়েছে। যদি আমরা তাঁর হক আদায় করতে না পারি, তাঁর সুন্নত পালন করতে না পারি, তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্যের সীমা থাকবে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নবীজি (স.)-এর সুন্নত মোতাবেক জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।