images

ইসলাম

স্বর্ণের প্রতি অতি আকর্ষণ, কোরআনের সতর্কতা

ধর্ম ডেস্ক

০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:০৫ পিএম

স্বর্ণ একটি মূল্যবান ধাতু। মহান আল্লাহ এই ধাতু দিয়ে পৃথিবীকে সুশোভিত করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালোবাসা—নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রুপা, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যখেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোজ্যসামগ্রী। আর আল্লাহ—তাঁর কাছেই আছে উত্তম আশ্রয়স্থল।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৪)

আয়াতের সারমর্ম এই যে, আল্লাহ তাআলা মানুষের মনে এসব বস্তুর প্রতি স্বভাবগতভাবেই আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে যে, কে এগুলোর আকর্ষণে মত্ত হয়ে আখেরাতকে ভুলে যায় এবং কে এসবের আসল স্বরূপ ও ধ্বংসশীল হওয়ার বিষয় অবগত হয়ে শুধু যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু অর্জন করে এবং আখেরাতের কল্যাণে তার সুচারু ব্যবহার করে। 

অবৈধ পন্থায় সেগুলো ব্যবহার করলে অথবা বৈধ পন্থায় হলেও এগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত নিমজ্জিত হয়ে আখেরাত ভুলে গেলে ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়বে। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম ঠিকানা। সেখানে চিরকাল থাকতে হবে এবং যার নেয়ামত ধ্বংস হবে না, হ্রাসও পাবে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্থায়ী জান্নাতে তারা প্রবেশ করবে। যেখানে তাদের স্বর্ণ ও মুক্তার কঙ্কণে অলংকৃত করা হবে। যেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের।’ (সুরা ফাতির: ৩৩) অন্য আয়াতে আছে, ‘স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদের (জান্নাতবাসীদের) প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী। (সুরা আজ-জুখরুফ: ৭১)

আরও পড়ুন: জান্নাতের সবচেয়ে বড় নেয়ামত

রাসুল (স.) যখন মেরাজে যান, তখন মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুর সম্মানার্থে সিদরাতুল মুনতাহায় সোনার প্রজাপতির মেলা বসিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন কুলগাছটিকে যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল।’ (সুরা আন-নাজম: ১৬) অর্থাৎ যখন বদরিকা বৃক্ষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল আচ্ছন্নকারী বস্তু। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তখন বদরিকা বৃক্ষের ওপর স্বর্ণ নির্মিত প্রজাপতি চতুর্দিক থেকে এসে পতিত হচ্ছিল। (নাসায়ি: ৪৫১)

স্বর্ণ নিয়ে মহানবী (স.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী আছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে ফোরাত নদী তার ভূগর্ভস্থ সোনার খনি বের করে দেবে। সে সময় যারা উপস্থিত থাকবে তারা যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে।’ (বুখারি: ৭১১৯) 

আখেরাতে আল্লাহ তাআলা মুমিনের জন্য যে নেয়ামত রেখেছেন, তার তুলনা কোনোকিছু দিয়েই হয় না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দুনিয়া অভিশপ্ত এবং এতে যা কিছু আছে তা অভিশপ্ত। তবে যা আল্লাহর জিকির বা স্মরণে করা হয় ও তার সাথে সম্পৃক্ত হয় এবং দ্বীনি জ্ঞানে আলেম ও দ্বীনি জ্ঞান অর্জনকারী। (তিরমিজি: ২৩২২; ইবনে মাজাহ: ৪১১২)

gold

আরও পড়ুন: আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া কত ছোট?

সুতরাং স্বর্ণ-রৌপ্য, মনি-মুক্তাসহ দামি অলংকার ও যেকোনো দুনিয়াবি আকর্ষণের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা মুমিনের জন্য জরুরি। অন্যায়ভাবে তা ভক্ষণ করা এবং আল্লাহর পথে খরচ না করে পুঞ্জিভূত করার শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, নিশ্চয়ই পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, আর তারা আল্লাহর পথে বাধা দেয়। এবং যারা সোনা ও রুপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে সেগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে এবং সে সব দিয়ে তাদের কপাল, পাঁজর আর পিঠে দাগ দেওয়া হবে, বলা হবে, এগুলোই তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। কাজেই তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ ভোগ করো।’ (সুরা তাওবা: ৩৪-৩৫)

women-and-gold

পৃথিবীতে একসময় সোনা-রুপার মুদ্রার ব্যাপক প্রচলন ছিল, এখন মানুষ সরাসরি সেরকম মুদ্রা ব্যবহার না করলেও সোনা-রুপার ব্যবহার ও বেচাকেনার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এগুলোর বেচাকেনার ব্যাপারে ইসলামের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে, যদি কেউ সঠিক পদ্ধতিতে এগুলোর বেচাকেনা না করে, তবে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আবু বকর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, সমান সমান ছাড়া তোমরা সোনার বদলে সোনা বিক্রয় করবে না। অনুরূপ রুপার বদলে রুপা সমান সমান ছাড়া (বিক্রি করবে না)। রুপার বদলে সোনা ও সোনার বদলে রুপা যেভাবে ইচ্ছা, কেনাবেচা করতে পারো। (বুখারি: ২১৭৫)

এছাড়া পুরুষের জন্য স্বর্ণের অলংকার ব্যবহার করা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নাজরানের এক ব্যক্তি রাসুল (স.)-এর কাছে এলো, তার হাতে ছিল সোনার আংটি। তখন রাসুল (স.) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বলেন, তুমি আমার কাছে এসেছ, অথচ তোমার হাতে রয়েছে আগুনের অঙ্গার। (নাসায়ি: ৫১৮৮)

আরও পড়ুন: কোরআন-হাদিসে বর্ণিত ধনী হওয়ার ১০ উপায়

এবং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য স্বর্ণের তৈজসপত্র ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উম্মে সালামাহ (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে লোক স্বর্ণ বা রৌপ্য দ্বারা নির্মিত বাসনে পান করে সে শুধু তার পেটে জাহান্নামের অগ্নি প্রবেশ করায়।’ (মুসলিম: ৫২৮১)

অতএব, প্রতিটি মুমিনের উচিত, মহান আল্লাহর নেয়ামতগুলো আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে উপার্জন করা, ব্যবহার ও ব্যয় করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।