images

ইসলাম

গৃহহীনকে ঘর দেওয়া অনেক বড় ইবাদত

ধর্ম ডেস্ক

০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:১৯ পিএম

আল্লাহর রহমত ও দয়া লাভের একটি সহজ মাধ্যম হলো- আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করা। তাদের প্রতি যাবতীয় কল্যাণ ও উপকারের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যতক্ষণ একজন মানুষ অন্য মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে, আল্লাহ তাআলাও তার কল্যাণে রত থাকবেন।’ (মুসলিম: ৬৭৪৬) অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান!  তুমি ব্যয় করো, আমিও তোমার প্রতি ব্যয় করব।’ (বুখারি: ৫৩৫২)

বসবাসের জন্য ছোট হলেও ঘরবাড়ি মানুষের অতীব প্রয়োজন। যে ব্যক্তি কোনো গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে দেবে তার সওয়াব মৃত্যুর পরও সে কবরে পেতে থাকবে। এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুবরণের পর তার সঙ্গে যে আমলের সওয়াব সম্পৃক্ত থাকবে, তা হলো ইলম শিক্ষা দেওয়া ও কিতাব রচনা করা, নেক সন্তান রেখে যাওয়া, মসজিদ তৈরি করা, অভাবগ্রস্তদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া, পানি প্রবাহিত হওয়ার ব্যবস্থা করা এবং তার সম্পদ থেকে সদকা করা।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ২৪৯)

আরও পড়ুন: ১১ আমলের সওয়াব মৃত্যুর পরও জারি থাকে

মানুষকে যেকোনো রকম আর্থিক সহায়তার গুরুত্ব ইসলামে অনেক বেশি। মানুষের খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করাও বিরাট সওয়াবের কাজ। হাদিস অনুযায়ী, কূপ খনন করা সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। (আল বাহরুজ জাখখার: ১৩/৪৮৪) এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এক লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, তার পানির খুব পিপাসা পেল, পথিমধ্যে সে একটি কূপ পেল এবং সেখান থেকে পানি পান করল। অতঃপর দেখতে পেল একটি কুকুর পানির পিপাসায় ময়লা খাচ্ছে, সেখানে সে মোজা দিয়ে পানি ভরে কুকুরকে পানি পান করাল এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। এজন্য আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! প্রাণীকে পানি পান করালেও কি সওয়াব আছে? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, প্রত্যেক সজীব অন্তরকে পানি পান করানোর জন্য সওয়াব রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি: ৬০০৯)

দরিদ্রদের পোশাক দান করার ফজিলত সম্পর্কে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, হুজুর (স.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় বস্ত্র দিলে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরাবেন।’ (তিরমিজি: ২৮৩৫)

আসলে ইসলামে একজন মুমিনের সঙ্গে অন্য মুমিনের সম্পর্ক ভাইয়ের মতো। সে কখনও অন্য ভাইয়ের কষ্ট দেখে হাত গুটিয়ে রাখতে পারে না। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মুমিন মুমিনের জন্য ইমারতসদৃশ, যার একাংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি (হাতের) আঙুলগুলো (অন্য হাতের) আঙুলের (ফাঁকে) ঢোকালেন।’ (বুখারি: ৬০২৬) নুমান ইবনু বাশির বর্ণিত হাদিসে ‘রাসুল (স.) বলেছেন, মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের ন্যায়, যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ (মুসলিম: ৬৪৮০)

আরও পড়ুন: মৃত মা-বাবার জন্য সন্তানের করণীয়

তাই ভাইয়ের কল্যাণে এগিয়ে আসা মুমিনের দায়িত্ব। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটাবেন। একইভাবে যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (আবু দাউদ: ৪৮৯৩)

অসহায়-গরিবদের সাহায্য করা রাসুল (স.)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বপ্রথম যখন ওহির সংবাদ এবং ভয় পাওয়ার কথা খাদিজা (রা.)-কে জানান, তখন তিনি রাসুল (স.)-এর বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন। খাদিজা (রা.) রাসুল (স.)-এর গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।’ (বুখারি: ৩)

ইসলামের ইতিহাসে আনসার সাহাবিদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তাঁরা মুহাজির ভাইদের জন্য নিজের ঘর-বাড়ি, জায়গা-জমি ভাগাভাগি করেছিলেন। আল্লাহর রাসুল (স.) তাদের সামনে নিয়ে এ কথা বলেছেন যে- أللهم أنتم أحب الناس الي ‘হে আল্লাহ (সাক্ষী থাকো, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে আনসারদের প্রতি লক্ষ্য করে) তোমরা আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। এটা তিনি ৩ বার বলেছেন।’ (সহিহ বুখারি: ৩৫১৪) বুখারির অন্য বর্ণনায় আনসার সাহাবিদের নবীজি বলেছেন- وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنَّكُمْ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيَّ ‘ওই আল্লাহর কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, লোকদের মধ্যে তোমরাই আমার সবচেয়ে প্রিয়জন। কথাটি তিনি দু’বার বললেন। (সহিহ বুখারি: ৩৭৮৬)

অতএব, মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অভাবীদের যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা, সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। যাদের আল্লাহ তাআলা পর্যাপ্ত ধন-সম্পদ দিয়েছেন তারা অসহায় ও ঘরহীনদের ঘর করে দেবেন। যেখানে পানির সমস্যা, সেখানে পানির ব্যবস্থা করে দেবেন। এই শীতে যাদের জামাকাপড় নেই তাদের জামা-কাপড় দিয়ে জান্নাতের সবুজ জামা জমা করবেন। হাদিসের ভাষ্যমতে, এসবকিছুই সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। আর সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব মৃত্যুর পরও জারি থাকে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।