ধর্ম ডেস্ক
০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৩ পিএম
দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। দোয়া কবুলের মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো; আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’ (সূরা মুমিন: ৬০) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি: ২১৩৯)
দোয়া কবুলের জন্য আগে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়তে বলেছেন প্রিয়নবী (স.)। দরুদ না পড়ে দোয়া করা মানে তাড়াহুড়ো করা। ফলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। হাদিসে এর প্রমাণ রয়েছে। ফাজালা ইবনে উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) এক লোককে নামাজে প্রার্থনা করতে শুনলেন। সে কিন্তু তাতে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী কারিম (স.)-এর ওপর দরুদও পড়েনি। এটা দেখে রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘লোকটি তাড়াহুড়ো করল। অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন ও তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেন, যখন কেউ দোয়া করবে, তখন সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনাযোগে ও আমার প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করে দোয়া আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা (যথারীতি) প্রার্থনা করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৮১; তিরমিজি: ৩৪৭৬)
আরও পড়ুন:
দোয়া ২ কারণে তাৎক্ষণিক কবুল হয় না
দরুদের প্রতিদান বিস্ময়কর
আরেক হাদিসে এসেছে, ‘নবী (স.)-এর ওপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত যেকোনো দোয়া আটকে থাকে।’ (আল-মুজাম আল-আওসাত: ১/২২০), আলবানি ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৪৩৯৯) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন)
সুতরাং দোয়ার আগে আল্লাহর প্রশংসামূলক বাক্য পাঠ অথবা আল্লাহর সুন্দর নামের জিকির অথবা সুরা ফাতেহা পাঠ করা উচিত। এরপর নবীজির ওপর দরুদ পাঠ করা উচিত। আলেমদের মতে, দরুদ দোয়া কবুলে শক্ত ভূমিকা রাখে।
এমনকি দোয়ার শেষে এবং মাঝখানেও দরুদ পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা। এ বিষয়ে আবু সুলায়মান আদ-দারানি সুন্দর একটি কথা বলেছেন যে ‘নবীর প্রতি দরুদ এমনিতেই কবুল হয়। আর আল্লাহ কোনো দোয়ার শুরু এবং শেষ অংশ কবুল করবেন, মাঝখানের অংশ প্রত্যাখ্যান করবেন, এমনটি হতে পারে না।’ তাই কবুলের জন্য দোয়ার আগে ও পরে দরুদ পড়তে যেন আমরা ভুল না করি।
আরও পড়ুন: বান্দার দুই গুণ আল্লাহর অনেক পছন্দ
দরুদ পাঠ এমনিতেই খুব মর্যাদাপূর্ণ আমল। এর প্রতিদানও বিস্ময়কর। দুনিয়া-আখেরাতে অবারিত কল্যাণ লাভের উপায়। এক হাদিসে এসেছে, উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর জিকিরের খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা। আমি বললাম, চারভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরূদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি: ২/৭২) মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪৫)
আরও পড়ুন: ইবাদত কবুলের মৌলিক তিন শর্ত
মুমিনদের দরুদ পাঠের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ পাঠান, হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরাও নবীর ওপর দরুদ পাঠাতে থাকো এবং উত্তম অভিবাদন (সালাম) পেশ করো।’ (সুরা আহজাব: ৫৬)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দোয়ার আগে আল্লাহর প্রশংসার পাশাপাশি নবীজির প্রতি দরুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।