রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বান্দার দুই গুণ আল্লাহর অনেক পছন্দ

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০১:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

বান্দার দুই গুণ আল্লাহর অনেক পছন্দ

বিশেষ দুই গুণের অধিকারী বান্দাকে আল্লাহ তাআলা অনেক ভালোবাসেন। গুণ দুটি হলো— এক. সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকা। দুই. দুনিয়ার আসক্তি না থাকা; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু করা। নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো। 

১. যারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট 
সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় যারা আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকেন, তারা আল্লাহ তাআলার পছন্দের বান্দা। বিশেষ করে দুঃখের সময় আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। শুধুমাত্র আল্লাহর বিশেষ বান্দারাই এই গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন। যেমন হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর অনেক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। এরপরও তিনি আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


যুগে যুগে আল্লাহর পছন্দের বান্দারা দুঃখ-কষ্টকে সাথে নিয়েই জীবন যাপন করেছেন। এতে তারা নাখোশ ছিলেন না। বরং আল্লাহর পরীক্ষাকে নিজেদের জন্য কল্যাণকর মনে করেছেন এবং ধৈর্যধারণ করেছেন। হাদিসে এসেছে এই গুণটির কারণে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়। রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর কোনো বান্দার মঙ্গল সাধনের ইচ্ছা করেন, তখন দুনিয়ায় তাকে তাড়াতাড়ি বিপদাপদের সম্মুখীন করেন। আর যখন তিনি কোনো বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন তার গুনাহের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অবশেষে কেয়ামতের দিন তাকে এর পরিপূর্ণ শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ তাআলা যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালবাসেন তখন তাদের তিনি পরীক্ষায় ফেলেন। যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে তাঁর জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি থাকে, আর যে তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি থাকে।’ (তিরমিজি: ২৩৯৬; সহিহাহ: ১২২০; মেশকাত: ১৫৬৫)

পবিত্র কোরআনে তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘তারা সে সব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা: ১৫৭)

আরও পড়ুন: আল্লাহ পছন্দের বান্দাদের পবিত্র করেন যেভাবে

ধৈর্যকে সর্বোত্তম নেয়ামত আখ্যা দিয়ে নবীজি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলতা দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোনো নেয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি।’ (বুখারি: ১৪৬৯)
আবু উমামা থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে বনি আদম, যদি তুমি ধৈর্যধারণ করো ও প্রথম দুঃখের সময় অধৈর্য না হয়ে তাতে সাওয়াবের আশা করো, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া কোনো প্রতিদানে সন্তুষ্ট হবো না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৯৭)


বিজ্ঞাপন


অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ তার শরীর, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্যধারণ করলে শেষ পর্যন্ত বরকতময় মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়। (আবু দাউদ: ৩০৯০)

২. যারা দুনিয়ার আসক্তি থেকে মুক্ত
দুনিয়ার ওপরে আখেরাতকে গুরুত্ব দিয়ে আমলে মনোযোগী হওয়া আল্লাহর পছন্দের বান্দার বিশেষ এক গুণ। এই গুণটি সবার থাকে না। আল্লাহ তাআলাই বিশেষ বান্দাদের এই গুণটি দিয়ে থাকেন। আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, তার মধ্য থেকে পদ-পদবী, অর্থ-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি—এসব দুনিয়াবি আকর্ষণ তুলে নেন। চাইলেও তাকে এসবকিছু দেওয়া হয় না। মূলত আল্লাহ তাআলা সেই বান্দাকে পরিকল্পিতভাবে দুনিয়াবি ফায়দা থেকে সরিয়ে রাখেন শুধুমাত্র ভলোবাসার কারণে। এবিষয়ে অনেক হাদিস পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে—

কাতাদা ইবনে নুমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তাকে দুনিয়া (প্রাচুর্য) থেকে বাঁচিয়ে রাখেন, যেমন তোমাদের কেউ তার রোগীকে (পানি স্পর্শ করলে যার অসুবিধা হবে, তাকে) পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখে।’ (তিরমিজি: ২০৩৬)

তবে, এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ কাউকে দুনিয়া দিলে তিনি আল্লাহর ঘৃণিত ব্যক্তি হয়ে যাবেন। প্রিয় বান্দাদের অনেককে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার প্রাচুর্যও দিয়েছেন। এসব ব্যক্তিদের মধ্যে ওসমান (রা.), সোলায়মান (আ.), দাউদ (আ.)সহ অনেকেই রয়েছেন। তবে তাঁদের কারো মধ্যেই দুনিয়াপ্রীতি ছিল না। এসব বান্দাদেরকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া দিয়েছেন, আবার ভালোবাসেনও। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার মতো আমল করার তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত দুই গুণের অধিকারী হওয়ার এবং আল্লাহর পছন্দের বান্দার তালিকাভূক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর