images

ইসলাম

মা-বাবা শিরক করলে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে?

ধর্ম ডেস্ক

২৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:২৪ পিএম

ইসলামে শিরক সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে শিরককে বড় জুলুম বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন লোকমান উপদেশ দিতে গিয়ে তার পুত্রকে বলল, হে বৎস, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা বড় জুলুম।’ (সুরা লোকমান: ১৩)

যারা শিরক করে তাদেরকে আরবি পরিভাষায় মুশরিক বলা হয়। ইসলামে ওজর ছাড়া মুশরিকের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক রাখা জায়েজ নেই। কিন্তু নিজের বাবা ও মা যদি কাফের বা মুশরিক হয়, তারপরও তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা আবশ্যক। কোনো অবস্থাতেই মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। তাদের কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের সঙ্গে ভালো ও উত্তম আচরণ করতে হবে। তাদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা উচিত হবে যেন তারা খারাপ পথ থেকে ফিরে আসেন।

তবে, তাদের শরিয়ত-বিরোধী কাজ মানা যাবে না। আমল করা যাবে না। তাদের হারাম বিষয়ের আদেশ মান্য করা যাবে না। খুবই সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি ম্যানেজ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরিক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে।’ (সুরা আনকাবুত: ৮)

আরও পড়ুন: স্ত্রী ও বাবা-মা’র হক আদায়ে ভারসাম্য রক্ষার উপায়

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরিক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো।’ (সুরা লুকমান: ১৫)

হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, সকল মুসলমানেরই নেতার কথা শোনা ও আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য, তা হোক তার পছন্দের বা অপছন্দের, তাকে যে পর্যন্ত গুনাহের কাজের নির্দেশ না দেওয়া হবে। যদি তাকে গুনাহের কাজের নির্দেশ দেওয়া হয় তাহলে তা না শোনা এবং না মানাই তার কর্তব্য। (সুনানে তিরমিজি: ১৭০৭) হজরত আলী (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের আনুগত্য করা জায়েজ নেই।’ (মুসনাদে আহমদ: ১০৯৫)

অতএব, শিরক-বিদআতে জড়িত মা-বাবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ও তাদের গুনাহের নির্দেশ মানা-না মানার ব্যাপারে ইসলামি শরিয়তের বিধান হলো- তারা যত খারাপই হোক তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। তাদের সঙ্গে সহাবস্থান ও সদ্ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবেই তাদের কষ্ট দেওয়া যাবে না। শরিয়তবিরোধী কাজের আদেশগুলো ছাড়া তাদের সব কথা মান্য করতে হবে।

আরও পড়ুন: মৃত মা-বাবার জন্য কোরআনে বর্ণিত তিন দোয়া

মুসআব ইবনু সা’দ (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁর সম্পর্কে কোরআনের কিছু আয়াত অবতীর্ণ হলো। তিনি বলেন, তাঁর মা শপথ করে ফেলেছে যে, যতক্ষণ তিনি (সন্তান) ইসলামকে অস্বীকার না করবেন ততক্ষণ তার সাথে কথা বলবে না খাবেও না, পানও করবে না। সে (মা) বলল, আল্লাহ তাআলা তোকে আদেশ করেছেন- পিতামাতার কথা মানতে আর আমি তোর মা, আমি তোকে এ আদেশ করছি। মা তিনদিন পর্যন্ত কিছু খেল না। কষ্টে সে বেহুশ হয়ে গেলে উমারাহ নামক তার এক ছেলে তাকে পানি পান করালো। মা সা’দর উপর বদদোয়া করতে লাগলো। তখন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন- আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তবে ওরা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে, আমার সাথে এমন কিছু শরিক করতে বলে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের মেনো না।’ ‘আর পৃথিবীতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ১৭৪৮)

আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে আমার আম্মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট এলেন। আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নিকট ফতোয়া চেয়ে বললাম, তিনি আমার প্রতি খুবই আকৃষ্ট, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ কর। (সহিহ বুখারি: ২৬২০)

উল্লেখিত কোরআন-হাদিসের দলিল থেকে এটি প্রমাণিত যে, মা-বাবা শিরক-বিদআতে লিপ্ত থাকলেও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না, বরং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে এবং আল্লাহর কাছে তাদের হেদায়াতের জন্য দোয়া করা উচিত হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সন্তানকে মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের তাওফিক দান করুন। ইসলামি নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।