শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

স্ত্রী ও বাবা-মা’র হক আদায়ে ভারসাম্য রক্ষার উপায়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৩, ০৮:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

স্ত্রী ও বাবা-মা’র হক আদায়ে ভারসাম্য রক্ষার উপায়

স্ত্রীর হক আদায় ও একইসঙ্গে মা-বাবার সন্তুষ্টির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হয় একজন মুমিন পুরুষকে। কেননা মা-বাবাকে অসন্তুষ্ট রাখলে জাহান্নামে ঠিকানা করে নেওয়া হয়, অন্যদিকে মা-বাবার হক আদায় করতে গিয়ে স্ত্রীর ওপর অবিচার হলে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করা হয়। তাই স্ত্রী ও বাবা-মা’র হক আদায়ে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। বিষয়টি কিছুটা কঠিন হলেও ইসলামে এর সুন্দর নির্দেশনা রয়েছে।  

ছেলের জন্য সর্বাবস্থায় মা বাবার খেদমত ও তাদের মন খুশি রাখার চেষ্টা করা আবশ্যক। যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে যেন মা-বাবা কষ্ট না পান। তাদের ভরণপোষণে কমতি যেন না হয়। আল্লাহর রাসুল (স.) একদা তিনবার বললেন, তার ‘নাসিকা ধুলোয় ধূসরিত হোক!’ সাহাবায়ে-কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কার ব্যাপারে এসব বদদোয়া করছেন? রাসুল (স.) বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা যেকোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেল তবুও সে তাদের খেদমত করে জান্নাতের পথ সুগম করতে পারল না।’ (মুসলিম: ২৫৫১)


বিজ্ঞাপন


এমনকি মা-বাবা ফাসিক কিংবা কাফের হলেও তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা জায়েজ নেই। হজরত আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, কুরাইশদের সঙ্গে সন্ধির দিনে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার কাছে এলেন। আমি রাসুলুল্লাহকে (স.) জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করব? রাসুল (স.) উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, সদ্ব্যবহার করবে।’ (বুখারি: ৩১৮৩)

অন্য হাদিসে আছে, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি: ১৯০৪)

অতএব সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে মা-বাবা যেন সন্তুষ্ট থাকেন। এরপরও শরিয়ত বহির্ভূত কারণে তারা অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন ইনশাআল্লাহ। কেননা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি পিতা-মাতা তোমাকে এমন কাউকে আমার সঙ্গে শরিক করতে চাপ দেন, যার ব্যাপারে তোমার জানা নেই, তাহলে তাদের কথা মানবে না। তবে দুনিয়ায় তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে যাবে।’ (সুরা লোকমান: ১৫)

স্ত্রীরও হক রয়েছে স্বামীর ওপর। ইসলাম স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করার নির্দেশ দেয়। কেননা সে তার স্বজন ছেড়ে শুধু স্বামীর কাছে আসে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করো। যদি তোমরা তাদের অপছন্দ করো, (তবে হতে পারে) তোমরা এমন বস্তুকে অপছন্দ করছ, যার মধ্যে আল্লাহ প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন।’ (সুরা নিসা: ১৯)

স্বামীর ওপর কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করা। রাসুল (স.) বলেন, তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে; তোমার ওপর তোমার চোখের হক আছে এবং তোমার ওপর তোমার স্ত্রীরও হক আছে। (বুখারি: ১৯৭৫, ৫১৯৯)

সুতরাং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি পেতে চাইলে স্ত্রী ও মা-বাবা উভয়ের হক আদায়ে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। একজনকে বেশি প্রাধান্য দিতে গিয়ে অন্যজনের ওপর যেন অবিচার বা অসদাচরণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে শরিয়ত নির্দেশিত কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। যেমন—পুত্রবধূ শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করতে বাধ্য নয়। জরুরতের কারণে শ্বশুর ও শাশুড়ি থেকে আলাদা বাসস্থানে থাকার আবদার করাও তার হকের অন্তর্ভুক্ত। সামর্থ্য অনুযায়ী স্বামীকে সেই ব্যবস্থা করার তাগিদ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। ইরশাদ হয়েছে ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।’ (সুরা তালাক: ৬)

মধ্যবিত্ত পরিবার হলে স্ত্রী তার জন্য পৃথক কক্ষ, টয়লেট, গোসলখানা, রান্নাঘরসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস ভিন্ন করারও দাবি করতে পারবে। এক্ষেত্রেও স্বামীর পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রীকে বাধ্য করা যাবে না। আর নিম্নবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে টয়লেট, গোসলখানা, রান্নাঘর ইত্যাদির ভিন্ন ব্যবস্থা করতে বাধ্য না হলেও একটি পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে, যার হস্তক্ষেপ স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। ওই কক্ষে স্বামীর মা-বাবা, ভাই-বোন বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে না। স্ত্রীর এমন সংরক্ষিত কক্ষ দাবি করার অধিকার আছে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২৩, রদ্দুল মুহতার: ৩/৬০১)

এসব বিষয় মা-বাবাকে যদি কোনোভাবে বোঝানো সম্ভব না হয়, তাহলে শরিয়তের দিকেই ফিরতে হবে। 

শ্বশুর ও শাশুড়ির জন্য শরিয়ত নির্ধারিত বিষয়গুলোর প্রতি নমনীয় হওয়া উচিত। পুত্রবধূর ওপর অন্যায্য অভিযোগ ও দোষ তালাশ করা তাদের জন্য জায়েজ নেই। পুত্রবধূকে নিজের কন্যা মনে করলে অনেকাংশেই এ সমস্যা সমাধান সম্ভব। নিজের কন্যার দোষ তালাশে মা-বাবা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে না। তেমনি পুত্রবধূর দোষ তালাশে ব্যস্ত থাকা এবং তার আত্মীয়দের আগমনে বিরক্ত হওয়া শ্বশুর শাশুড়ির জন্য শোভনীয় নয়।

একইভাবে স্ত্রীকেও একথা বুঝাতে হবে যে সে যেন শ্বশুর-শাশুড়ির (আপনার মা-বাবার) সাথে সুন্দর ও উত্তম ব্যবহার করে। নিজের মা-বাবার মতো তাদের খেদমত করে। তাদেরকে খুশি রাখার চেষ্টা করে। কারণ, এমন একটি সময় তারও আসবে। যখন সে শাশুড়ি হবে, তখন তার পুত্রবধূর কাছ থেকে সে কেমন আচরণ আশা করে তা চিন্তা করে যেন সে তেমন সুন্দর আচরণ করার চেষ্টা করে।

মা-বাবা পুত্রবধু একসঙ্গে বসবসা করাই শ্রেয়—তাই আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত যেন মা-বাবাকে নিজের সাথে রাখা যায়। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ ও খেদমতের জন্য লোক রাখা সম্ভব হলে ব্যবস্থা করে দিলে আপনার দায়িত্ব যথাযথ পালন হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মা-বাবার সন্তুষ্টির সাথে সাথে স্ত্রীর হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। উভয় জগতে পেরেশানিমুক্ত রাখুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর