ধর্ম ডেস্ক
১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:১৬ পিএম
মহানবী (স.) মুসলিম জাতির বেশ কয়েকটি বিজয়ের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা পরবর্তী সময়ে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কিছু ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে প্রমাণিত হওয়ার অপেক্ষায়। নবীজি (স.) যখন মুসলমানদের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করছিলেন তখন মুসলমানদের অবস্থা নাজুক ছিল। অবিশ্বাসীরা তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছিল। কিন্তু আল্লাহর নবীর ভবিষ্যদ্বাণী তো মিথ্যা হওয়ার নয়। পরে একে একে সবগুলো সত্যে পরিণত হতে লাগল।
আগেই বলে রাখা উচিত- নবী-রাসুলগণ গায়েব বা অদৃশ্যের সংবাদ জানতেন না। কোনো মানুষই তা জানে না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নবী-রাসুলদের অনাগত দিনের বিভিন্ন বিষয়ে অবগত করেছিলেন। তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল মোজেজাস্বরূপ। আল্লাহর নবী যা বলেন আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না, তাঁর মনোনীত রাসুল ছাড়া।’ (সুরা জিন: ২৬-২৭)
এখানে নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে প্রমাণিত হওয়া মুসলমানদের বিশেষ বিজয়গুলো তুলে ধরা হলো।
১. হিরা বিজয়: হিরা ইরাকের কুফা নগরীর নিকটবর্তী একটি প্রাচীন শহর। নবম হিজরিতে তাবুক যুদ্ধের পর রাসুলুল্লাহ (স.) সুসংবাদ দেন যে তাঁর সাহাবিরা হিরা জয় করবে। আদি বিন হাতিম (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেন, ‘আমার সামনে হিরাকে দৃশ্যমান করা হয়েছে। তার আকৃতি কুকুরের গজ দাঁতের মতো। তোমরা খুব শিগগির তা জয় করবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬৬৭৪) মুসলমানরা ১২ হিজরিতে আবু বকর (রা.)-এর শাসনামলে হিরা জয় করেন।
আরও পড়ুন: নবীদের মধ্যে মহানবী (স.)-এর বিশেষত্ব
২. মিসর বিজয়: রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবিদের মিসর বিজয়ের সুসংবাদ দেন এবং তিনি মিসরবাসীর প্রতি সম্মান জানানোর নির্দেশ দেন। কেননা তা নবী ইসমাইল (আ.)-এর মা হাজেরার জন্মভূমি। রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন ইসমাইল (আ.)-এর বংশধর। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘শিগগিরই তোমরা মিসর বিজয় লাভ করবে। সেটা এমন একটি দেশ, যেখানে ‘কিরাত’ নামে মুদ্রা প্রচলিত। তোমরা যখন সে দেশ বিজয় লাভ করবে তখন তার অধিবাসীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবে। কেননা তাদের জন্য দায়িত্ব ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৩৮৮)
৩. শাম বিজয়: আহজাব বা খন্দকের যুদ্ধের সময় সাহাবিরা প্রচণ্ড ক্ষুধা ও ভয়ংকর ঠাণ্ডার মুখোমুখি হন। তারা ছিলেন সংখ্যায় কম এবং শত্রুরা ছিল সংখ্যায় বেশি। পরিখা খননের সময় সাহাবিদের সামনে বিশাল একটি পাথর বের হয়, যা তারা ভাঙতে পারছিলেন না। বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জানালে তিনি নিজে কোদাল হাতে নেন এবং বিসমিল্লাহ বলে পাথরে আঘাত করেন। এতে পাথরের এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে যায়। তিনি বললেন, আল্লাহ মহান, তিনি আমাকে শামের (বর্তমান সিরিয়া, লিবিয়া ও ফিলিস্তিন অঞ্চল) চাবিগুলো (বিজয়) দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমি এখান থেকে তার লাল প্রাসাদগুলো দেখছি। (দালাইলুন নুবুওয়াহ: ৩/৪২১; সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি: ৮৮৫৮)
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন কি নবীজির ভবিষ্যদ্বাণীর দিকেই এগোচ্ছে?
৪. পারস্য বিজয়: এরপর তিনি বিসমিল্লাহ বলে দ্বিতীয় আঘাত করেন। এতে পাথরের আরো এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে যায়। তিনি বললেন, আল্লাহু আকবর, আমাকে পারস্যের চাবিগুলো দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই আমি মাদায়েন শহর দেখছি এবং এখান থেকে তার সাদা প্রাসাদ প্রত্যক্ষ করছি। (দালাইলুন নুবুওয়াহ: ৩/৪২১; সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি: ৮৮৫৮)
৫. ইয়েমেন বিজয়: অতঃপর রাসুলুল্লাহ (স.) বিসমিল্লাহ বলে আরেকটি আঘাত করেন। এতে পাথরের অবশিষ্টাংশ ভেঙে যায়। তিনি বললেন, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আমাকে ইয়েমেনের চাবিগুলো দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই আমি এখান থেকে সানা শহরের প্রবেশপথগুলো দেখছি। মাদায়েন শহর দেখছি এবং এখান থেকে তার সাদা প্রাসাদ প্রত্যক্ষ করছি। (দালাইলুন নুবুওয়াহ: ৩/৪২১; সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি: ৮৮৫৮) রাসুলুল্লাহ (স.) শাম, পারস্য ও ইয়েমেন বিজয়ের যে সুসংবাদ দান করেছিলেন তা আবু বকর ও ওমর (রা.)-এর যুগেই বিজিত হয়েছিল।
৬. ইরাক বিজয়: খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে সমগ্র ইরাক মুসলমানদের অধীনে আসে। এই অঞ্চল বিজয়ের ব্যাপারেও নবীজি (স.) সুসংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘শিগগির ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটবে, যখন আল্লাহর পথে যুদ্ধের জন্য তিনটি সেনাদল গঠিত হবে। তা হলো সিরিয়ার সেনাদল, ইয়েমেনের সেনাদল ও ইরাকের সেনাদল।’ (আবু দাউদ: ২৪৮৩)
৭. ইস্তাম্বুল বিজয় : মহানবী (স.) ইস্তাম্বুল বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। যা ছিল রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী ও প্রাণকেন্দ্র। উসমানীয় শাসক সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে ইস্তাম্বুল জয় করেন। এই শহর বিজয় করার ব্যাপারে নবীজি (স.) বলেন, ‘অবশ্যই ইস্তাম্বুল জয় করা হবে। আমি এই বিজয়ের সেনাপতি কে হবে জানি এবং এই বিজয় যে বাহিনী করবে তাদেরও জানি।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৮৮৫৯)
উল্লেখ্য, রাসুলুল্লাহ (স.) বিশ্বজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। যা অদূর ভবিষ্যতে সত্যে প্রমাণিত হবে। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পৃথিবীকে আমার জন্য সংকুচিত করে দিয়েছেন (নিকটবর্তী করে দেওয়ার অর্থে) এবং আমাকে এর পূর্ব ও পশ্চিম সীমানা দেখানো হয়েছে। আর যতটুকু আমার জন্য সংকুচিত করা হয়েছে, ততটুকুতে অচিরেই আমার উম্মতের রাজত্ব বিস্তার লাভ করবে।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪২৫২)
আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.)-সহ সব নবী-রাসুলদের প্রতি শান্তিবর্ষণ করুন। বিশ্বনবী (স.)-এর পরিবার ও তাঁর অনুসারীদের প্রতি শান্তিবর্ষণ করুন। আমিন