সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ইয়েমেনের মানুষ সম্পর্কে যা বলেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

ইয়েমেনের মানুষ সম্পর্কে যা বলেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)

আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের একটি ভূখণ্ডের নাম ইয়েমেন। আয়তন পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ৯৭০ বর্গ কিলোমিটার। যা বাংলাদেশের তুলনায় তিন গুণের চেয়েও বেশি। কিন্তু জনসংখ্যা কম। মাত্র ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস করে দেশটিতে।


বিজ্ঞাপন


নবী-রাসুল, সাহাবায়ে কেরাম ও বুজুর্গদের ভূখণ্ড হিসেবে প্রসিদ্ধ ইয়েমেন। হাদিসে এই দেশের অধিবাসীদের প্রশংসা করা হয়েছে। একবার রাসুলুল্লাহ (স.) আকাশের দিকে মুখ করে বললেন, ইয়েমেনের মানুষজন তোমাদের কাছে মেঘমালার মতো এসেছে, তারা বিশ্বাসীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (মুসনাদে আহমদ: ১৬৭৫৮)

হাদিসে রয়েছে, ইয়েমেনের মানুষ নম্র স্বভাবের এবং কোমল হৃদয়ের অধিকারী। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘..তারা অন্তরের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল। আর মনের দিক থেকে অত্যন্ত দয়াবান। ফিকহ হলো ইয়েমেনিদের, আর প্রজ্ঞা হলো ইয়েমেনিদের।’ (সহিহ বুখারি: ৪৩৯০)

রাসুলুল্লাহ (স.) নিজেকে ইয়েমেনের একজন দাবি করে ইয়েমেনকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ঈমান ইয়েমেনের এবং তারা আমার থেকে, আমার প্রতি সম্পৃক্ত অবস্থানের দিক থেকে তারা যত দূরেই হোক। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১৬৬২৪)


বিজ্ঞাপন


রাসুলুল্লাহ (স.) নিজেকে ইয়েমেনের দিকে সম্পৃক্ত করার কারণ এই যে ইয়েমেন হলো আরবদের পূর্বপুরুষ ‘কাহতান’ পুত্রের নাম। তিনি ছিলেন ইসমাঈল (আ.)-এর সন্তানদের একজন। এভাবে রাসুল (স.)-এর বংশপরম্পরা তার সঙ্গে মিলিত হয়। কিংবা হাদিসের অর্থ এই যে ইয়েমেনের অধিবাসীদের রীতিনীতি ও আচার-ব্যবহার আমার পছন্দনীয়, তাই আমিও যেন ইয়েমেনের অধিবাসী।

ভ্রাতৃত্বের বন্ধন মজবুত করতে দেখা-সাক্ষাতে মুসাফাহার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এই মুসাফাহার প্রচলন শুরু করেছিল ইয়েমেনবাসীরা। এ কথার প্রমাণ রয়েছে হাদিসে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, একদা ইয়ামানবাসীরা এসে উপস্থিত হলে রাসুল (স.) বললেন, তোমাদের কাছে ইয়েমেনবাসীরা এসেছে। আর এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা করেছে। (সুনানে আবু দাউদ: ৫২১৩)

ইয়েমেনবাসীদের জন্য নবীজি বরকতের দোয়া করেছেন। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, হে আল্লাহ, আমাদের শামে (সিরিয়া) ও ইয়েমেনে বরকত দান করুন। লোকেরা বলল, আমাদের নজদের। নবী (স.) বললেন, হে আল্লাহ, আমাদের শামদেশ ও ইয়েমেনে বরকত দান করুন। লোকেরা তখন বলল, আমাদের নজদের। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (স.) তখন বললেন, সেখানে তো আছে ভূমিকম্প ও ফিতনা-ফাসাদ। আর শয়তানের শিং সেখান থেকেই বের হবে (তার উত্থান ঘটবে)। (সহিহ বুখারি: ১০৩৭)

ইয়েমেনবাসীরা বিশ্বস্ত বলে ঘোষণা করেছেন মহানবী (স.)। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, রাজত্ব কুরাইশদের মধ্যে, বিচারবিধান আনসারদের মধ্যে, আজান (সুমধুর সুরে) হাবশিদের মধ্যে এবং আমানতদারি আজাদ অর্থাৎ ইয়েমেনবাসীদের মধ্যে। (জামে তিরমিজি: ৩৯৩৬)

কেয়ামতের দিনে সর্বপ্রথম ইয়েমেনবাসীরা হাউসে কাউসার থেকে পানি পান করবে। সাওবান (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেছেন, আমি আমার হাউসের পাশে থাকব। ইয়েমেনবাসীর জন্য সর্বসাধারণ লোককে সরিয়ে দেব। আমি আমার লাঠি দিয়ে হাউসের পানির ওপর আঘাত করব, যাতে তাদের ওপর তা প্রবাহিত হয়। (সহিহ মুসলিম: ৫৮৮৪)

এর অর্থ অন্য মানুষকে রাসুল (স.) সরিয়ে দেবেন। ইয়েমেনবাসীকে পানি পানে প্রাধান্য দেবেন। নিঃসন্দেহে এটা তাদের জন্য সম্মান ও গৌরবের। তারা ইসলামের জন্য যেভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন তারই বরকত এটি। (শরহে নববি) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন, ‘এই ইয়েমেনবাসীরাই মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং বিভিন্ন শহর জয় করেছে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের মাধ্যমেই নানা সমস্যা থেকে মুমিনদের উদ্ধার করেছেন। (মাজমুউল ফতোয়া: খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা-৩৯৮)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর