images

ইসলাম

দোয়া ২ কারণে তাৎক্ষণিক কবুল হয় না 

২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০১:১৪ পিএম

ইসলামে দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। সাহাবি নোমান বিন বাশির (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (আবু দাউদ: ১৪৮১) হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)

দোয়া কখনো বিফলে যায় না। তাই দোয়ার ফল পেতে দেরি হলে হতাশ হওয়া অনুচিত। নিচে এমন দুটি কারণ তুলে ধরা হলো, যে কারণে দোয়া তাৎক্ষণিক কবুল হয় না।

আরো উত্তম কিছু দেবেন বলে
কখনো কখনো মহান আল্লাহ বহু গুণ উত্তম প্রতিদান দিয়ে দোয়া কবুল করেন। অর্থাৎ যে দোয়া করা হয়েছে, তার পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়ে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন। সে দোয়ার মধ্যে যা চেয়েছিল, তা হয়ত তাকে সাময়িক কষ্ট থেকে রক্ষা করত; কিন্তু মহান আল্লাহ তাকে সাময়িক সুখটুকু না দিয়ে স্থায়ী সুখের ব্যবস্থা করে দেন। আতা ইবনে আবু রাবাহ (রা.) বলেন, ইবনে আব্বাস (রা.) আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতি নারী দেখাব না? আমি বললাম, অবশ্যই। তখন তিনি বলেন, এই কালো রঙের নারী, সে নবী (স.)-এর কাছে এসেছিল। তারপর সে বলল, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। নবী (স.) বলেন, তুমি যদি চাও ধৈর্যধারণ করতে পারো। তোমার জন্য আছে জান্নাত। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তোমাকে আরোগ্য করেন। ওই নারী বলল, আমি ধৈর্যধারণ করব। সে বলল, ওই অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়, কাজেই আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমার লজ্জাস্থান খুলে না যায়। নবী (স.) তাঁর জন্য দোয়া করলেন। (বুখারি: ৫৬৫২)

আরও পড়ুন: বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা কেমন?

পরীক্ষা করার জন্য
দুনিয়া যেহেতু পরীক্ষাগার, তাই মানুষের ওপর বিভিন্ন বিপদাপদ, ফিতনা আসবেই। তাই এসব বিষয়ে কখনো কখনো মহান আল্লাহ তাৎক্ষণিক দোয়ার ফল দেন না। সাদ (রা.) তার পিতা সূত্রে বলেন, রাসুল (স.)...বলেন, আমি আমার প্রতিপালকের কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেছি। তন্মধ্যে তিনি আমাকে দুটি প্রদান করেছেন এবং একটি প্রদান করেননি। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করেছিলাম, যেন তিনি আমার উম্মতকে দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এই দোয়া কবুল করেছেন। তাঁর কাছে এ-ও প্রার্থনা করেছিলাম যে তিনি যেন আমার উম্মতকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এই দোয়াও কবুল করেছেন। আমি তাঁর কাছে এ মর্মেও দোয়া করেছিলাম যে যেন মুসলিমরা পরস্পর একে অপরের বিপক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে। তিনি আমার এই দোয়া কবুল করেননি। (মুসলিম: ৭৩৫২)

সুতরাং পরীক্ষা করার জন্যও অনেকসময় তাৎক্ষণিক দোয়া কবুল করা হয় না। যেহেতু পরীক্ষা থেকে কাউকে বাদ দেওয়া হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দিয়ে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা আম্বিয়া: ৩৫) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘আর আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পত্তি, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)

হাদিস শরিফে আছে, ‘যখন কোনো মুসলমান দোয়া করে, যদি তার দোয়ায় গুনাহের কাজ কিংবা সম্পর্কচ্ছেদের আবেদন না থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তিনটি প্রতিদানের যেকোনো একটি অবশ্যই দান করেন। সঙ্গে সঙ্গে দোয়া কবুল করেন এবং তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস দিয়ে দেন। দোয়ার কারণে কোনো অকল্যাণ বা বিপদ থেকে হেফাজত করেন অথবা আখিরাতের কল্যাণের জন্য তা জমা করে রাখেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ১১১৪৯)

আরও পড়ুন: বান্দার দুই গুণ আল্লাহর অনেক পছন্দ

দোয়া কবুল হতে বিলম্ব হলে কোনোভাবেই দোয়া বাদ দেওয়া যাবে না। এ অবস্থায় মুমিনের দায়িত্ব হলো- আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট এ ধৈর্যধারণ করা। কারণ একজন অনুগত বান্দা হিসেবে মাথায় রাখতে হবে যে, আল্লাহ কার দোয়া কবুল করবেন আর কার দোয়া কবুল করবেন না কিংবা কখন কবুল করবেন আর কখন করবেন না এটা সম্পূর্ণ তাঁরই ইচ্ছাধীন। তিনি সঙ্গেসঙ্গে কিছু দিলে সেটা যেমন হেকমতপূর্ণ, আবার সঙ্গেসঙ্গে না দিলে বা বঞ্চিত রাখলে তাও প্রজ্ঞাপূর্ণ। সুতরাং আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই তোমরা এমন বহু কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর অবশ্যই এমন বহু কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সব কিছু জানেন; কিন্তু তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা: ২১৬)

সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, বান্দাকে না দেওয়াটাও একটা দান। এটা এজন্য যে তিনি তাকে কৃপণতা ও অন্য খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন। মূলত, তিনি বান্দার কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রাখেন। অতঃপর তাকে না দেওয়াটাও কল্যাণকর বিষয়।’ (মাদারিজুস সালিকিন, পৃষ্ঠা-২/২১৫)