images

ইসলাম

ফিলিস্তিনের বরকত নিয়ে কোরআন যা বলছে

১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:০২ পিএম

ফিলিস্তিনের ভূমিকে আল্লাহ তাআলা বরকতময় করেছেন। আমরা তা পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে দেখতে পাই। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘পবিত্র মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করালেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমরা দিয়েছি বরকত, যেন আমরা তাকে আমাদের নিদর্শন দেখাতে পারি; তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১)

এই আয়াতে আরবি আকসা শব্দ দিয়ে দূরত্ব বোঝানো হয়। বায়তুল মোকাদ্দাস ফিলিস্তিনের কুদস অথবা জেরুজালেম বা (পুরাতন নাম) ইলিয়া শহরে অবস্থিত। মক্কা থেকে কুদস চল্লিশ দিনের সফর। এদিক দিয়ে মসজিদে হারামের তুলনায় বায়তুল মাকদিসকে ‘মসজিদুল আকসা’ (দূরতম মসজিদ) বলা হয়েছে। এই অঞ্চল প্রাকৃতিক নদ-নদী, ফল-ফসলের প্রাচুর্য এবং নবীদের বাসস্থান ও কবরস্থান হওয়ার কারণে পৃথক বৈশিষ্ট্যের দাবি রাখে। তাই নিঃসন্দেহে এটি বরকতময় অঞ্চল।

পবিত্র কোরআনে এই আয়াত ছাড়াও আরও বেশ কটি আয়াতে ফিলিস্তিন সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। সুরা মায়েদার এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা সেই পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করো, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং নিজেদের পেছনের দিকে ফিরে যেয়ো না, তাহলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।’ (সুরা মায়েদা: ২১)

আরও পড়ুন: সিরিয়া সম্পর্কে মহানবী (স.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী 

এখানে পবিত্র ভূমি বলতে তাফসিরবিদদের কারও মতে বায়তুল মোকাদ্দাস, কারও মতে কুদস শহর ও ইলিয়া বোঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, আরিহা শহর, যা জর্ডান নদী ও বায়তুল মোকাদ্দাসের মধ্যস্থলে বিশ্বের একটি প্রাচীনতম শহর, যা আগেও ছিল এবং এখনো আছে। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে, পবিত্র ভূমি বলে দামেস্ক ও ফিলিস্তিনকে এবং কারও মতে জর্ডানকে বোঝানো হয়েছে। হজরত কাতাদাহ বলেন, সমগ্র শামই পবিত্র ভূমি। (ইবনে কাসির)

ফিলিস্তিনের বরকত প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘আর তাকে (হজরত ইবরাহিম আ.) ও লুতকে উদ্ধার করে সেই ভূখণ্ডের দিকে নিয়ে গেলাম, যেখানে বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখেছি।’ (সুরা আম্বিয়া: ৭১)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা বলেন, সেই ভূখণ্ড বলে শাম (বর্তমানে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন) দেশকে বোঝানো হয়েছে। যাকে শস্য-শ্যামলতা, ফলমূল, নদ-নদীর আধিক্য ও সেই সঙ্গে বহু নবীর বাসস্থান হওয়ার কারণে বরকতময় ও কল্যাণময় বলা হয়েছে।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর সোলায়মানের (অনুগত করে দিয়েছিলাম) ঝড়ো হাওয়াকে, যা তার হুকুমে সেই ভূখণ্ডের দিকে প্রবাহিত হত, যেখানে আমি বরকত রেখেছি। আর আমি সব বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮১)

এই আয়াতেও কল্যাণময় দেশ বলতে শামকে (ফিলিস্তিন ও সিরিয়া) বোঝানো হয়েছে।

সুরা আরাফে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হত, তাদের আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি এবং বনি ইসরাইল সম্বন্ধে আপনার প্রতিপালকের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হলো, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। (সূরা আরাফ: ১৩৭)

আরও পড়ুন: ইয়েমেনের মানুষ সম্পর্কে যা বলেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)

এই আয়াতেও কল্যাণপ্রান্ত রাজ্য বলতে শাম দেশের এলাকা ফিলিস্তিনকে বোঝানো হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘আর তাদের ও যেসব জনপদের মধ্যে আমরা বরকত দিয়েছিলাম, সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে আমরা দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং ওইসব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম। বলেছিলাম, তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ করো দিনে ও রাতে।’ (সুরা সাবা: ১৮)

এই আয়াতেও ‘যে সব জনপদে আমি প্রাচুর্য দান করেছিলাম’ বলে বরকতময় শাম দেশের জনপদকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফিলিস্তিনসহ পুরো শাম দেশের মর্যাদা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।