১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০৭ পিএম
রাতে নফল নামাজ, দোয়া দরুদ, জিকিরের গুরুত্ব বেশি। তাহাজ্জুদের মতো মহান ইবাদতও রাতে করতে হয়। এজন্যই পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই রাতে জাগরণ ইবাদতের জন্য গভীর মনোনিবেশ, হৃদয়ঙ্গম এবং স্পষ্ট উচ্চারণে অনুকূল।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল: ৬)
আবার রাতে সহজে আমল করার মতো কিছু ফজিলতপূর্ণ আয়াত পাঠ ও দোয়ার বর্ণনা এসেছে হাদিসে। এমন কিছু আমল নিচে তুলে ধরা হলো—
১. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
বদরি সাহাবি আবু মাসউদ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করে, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। (সহিহ বুখারি: ৫০৪০)
‘তার জন্য যথেষ্ট হবে’ বাক্যটির ব্যাখ্যায় একদল আলেম বলেন, এই দুই আয়াত তাহাজ্জুদের বিপরীতে যথেষ্ট হবে। অন্যরা বলেন, আয়াতদ্বয় রাতের বেলা শয়তান, জিন ও মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষায় যথেষ্ট হবে। (শরহুন নববি: ৬/৯১)
২. সুরা মুলক তেলাওয়াত
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, কোরআনে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে। যে সুরাটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো—তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক..(অর্থাৎ সুরা মুলক)। (সুনানে তিরমিজি: ২৮৯১)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাজি পাঠ করবে আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন। আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে এই সুরাকে ‘মানিআ’ (প্রতিহতকারী বা রক্ষাকারী) বলতাম। (সুনানে নাসায়ি: ১০৫৪৭)
আরও পড়ুন: কঠিন সময়ের বন্ধু ‘সুরা মুলক’
৩. সুরা ওয়াকেয়া পাঠ
উসমান (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকেয়া পাঠ করবে, সে কখনো উপবাস থাকবে না।’ (তাফসিরে মারেফুল কোরআন: ৮/১০৬; ইবনে কাসির: ৪/২৮১)
৪. আয়াতুল কুরসি পাঠ
রাসুল (স.) বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ (বুখারি: ২৩১১)
৫. ‘তিন কুল’ পাঠ
মুআজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে নামাজ পড়ার জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বলেন, বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, কী বলব? তিনি বলেন, তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সুরা ইখলাস, সুরা নাস ও ফালাক পড়বে। এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাবে। (আবু দাউদ: ৫০৮২)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব পুরো শরীরে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।’ (বুখারি: ৫০১৭)
৬. রাতে যত বেশি তেলাওয়াত তত বেশি মর্যাদা
রাতে কোরআন তেলাওয়াতের আয়াতসংখ্যার পরিমাণ অনুযায়ী তেলাওয়াতকারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে ১০টি আয়াত তেলাওয়াত করে সে গাফেল বলে গণ্য হবে না, আর যে ব্যক্তি ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করে সে আনুগত্যশীল বলে গণ্য হবে, আর যে ব্যক্তি এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করে তার জন্য সওয়াবের ভাণ্ডার লেখা হবে।’ (আবু দাউদ: ১৪০০)
আরও পড়ুন: প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত
৭. তিনবার সুরা ইখলাস পাঠ
মহানবী (স.) একবার সাহাবিদের বলেন, তোমরা কি এক রাতে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে? সাহাবিরা এ প্রস্তাবকে খুবই কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বলল, আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে? মহানবী (স.) তখন বলেন, সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারি: ৫০১৫)
৮. সাইয়িদুল ইস্তেগফার পাঠ
শাদ্দাদ ইবনুল আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এই ইস্তেগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে ব্যক্তি জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এই দোয়া পড়ে নেবে আর ভোর হওয়ার আগে মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে। আর সাইয়িদুল ইস্তেগফার হলো বান্দার এই দোয়া পড়া— اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ
(উচ্চারণ) ‘আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাকতানি, ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু। আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো। (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সবসময় কোরআন তেলাওয়াতের তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত আয়াত, সুরা ও দোয়া রাতে নিয়মিত পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।