১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম
কান্না হচ্ছে দোয়া কবুলের বড় অস্ত্র। মহান আল্লাহ সেই ভাঙা হৃদয়ের দোয়া কবুল করেন, যে হৃদয় একমাত্র আল্লাহর দয়ার আকাঙ্ক্ষা করে। নবী-রাসুলরা নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর দরবারে এমনভাবে কেঁদে কেঁদে দোয়া করতেন, যেন তাদের চেয়ে বড় পাপী আর কেউ নেই! আমরা নিষ্পাপ নই, তাই আমাদের মোনাজাতগুলো হওয়া উচিত অনেক বেশি অশ্রুসিক্ত।
বিশেষ করে শেষ রাতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দোয়া করা অনেক ফজিলতের। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ প্রতি রাতের শেষ প্রহরে (যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে) দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। তিনি তখন বলেন, ‘আছ কি কোনো আহ্বানকারী? আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কোনো প্রার্থনাকারী কি আছো, আমি তোমাকে যা চাও তা দেব? কেউ কি ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব।’ (সহিহ মুসলিম: ৭৫৮)
আল্লাহর কাছে মুত্তাকির চোখের পানির অনেক মর্যাদা। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর নিকট দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্নের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কিছু নেই। এক. আল্লাহর ভয়ে নিঃসৃত অশ্রুফোঁটা। দুই. আল্লাহর রাস্তায় নির্গত রক্তের ফোঁটা।’ (তিরমিজি: ১৬৬৯)
আরও পড়ুন: দোয়া কবুলের কিছু সময়
তাই মুসলিম উম্মাহর উচিত চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে গুনাহ ক্ষমা চাওয়া। মাজলুম ভাইয়ের জন্য চোখের পানি ফেলে দোয়া করা। হাশরের কঠিন বিপদ থেকে রক্ষার জন্য অশ্রুসিক্ত হয়ে হাত তুলে দোয়া করা। যার চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি নির্গত হয়, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এমন অসম্ভব, যেমন দোহনকৃত দুধ পুনরায় ওলানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না।’ (তিরমিজি : ১৬৩৩)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, যে মুমিন বান্দার দুচোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি বের হয়, যদি তা মাছির মাথার পরিমাণও হয়, এবং তা চেহারা বেয়ে পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুজ জুহুদ: ৪১৯৭)
হাশরের কঠিন দিনে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জন্য বিশেষ ঘোষণার কথা রয়েছে হাদিসে। সেদিনের কঠিন পরিস্থিতিতে সাত শ্রেণির মুমিন আরশের নিচে আশ্রয় পাবেন। তাদের এক শ্রেণি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণের সময় তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে।’ (বুখারি: ৬৬০; মুসলিম: ৭১১)
আরও পড়ুন: ৪ আলামতে বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন
রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবিদের বেশি বেশি কান্না করার উপদেশ দিতেন। কেননা মহাপ্রতাপশালী আল্লাহ যেখানে গুনাহের শাস্তি হিসেবে বান্দাকে মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিতে পারেন, সেখানে রহমত করছেন, বান্দাকে দিয়ে যাচ্ছেন অবারিত সুযোগ-সুবিধা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—‘..আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব কম হাসতে, বেশি কাঁদতে এবং বিছানায় স্ত্রীদের উপভোগ করতে না, বাড়ী-ঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে এবং চিৎকার করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে যে- আল্লাহর শপথ! হায়, আমি যদি একটি গাছ হতাম এবং তা কেটে ফেলা হত!’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৯০; মেশকাত: ৫৩৪৭; সহিহাহ: ১৭২২)
অতএব আমাদের উচিত, মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে কৃত গুনাহর জন্য ইস্তেগফার করা, তওবা করা। ইনশাআল্লাহ, এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের সব পাপ সাফ করে দেবেন এবং জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর অন্তরে তাঁর ভয় জাগ্রত করে দিন। তাঁর আদেশ নিষেধ পুরোপুরি মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।