আল্লাহ তাআলার দয়া অফুরান। তিনি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করেন। তাঁর কাছে বান্দাদের দোয়া ও প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)
তাই মুমিনের দায়িত্ব হলো—আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। আল্লাহ তাআলা মূলত মুমিন বান্দার দোয়া সবসময় কবুল করে থাকেন। তারপরও প্রিয়নবী (স.) সুনির্দিষ্ট কিছু সময়ের কথা হাদিসে উল্লেখ করেছেন। যে সময়গুলোতে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা নিশ্চিতভাবে বান্দার দোয়া কবুল করেন। সময়গুলো হলো—
বিজ্ঞাপন
রাতের শেষ তৃতীয়াংশের দোয়া
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমাদের রব প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। তিনি বলেন—কে আমাকে আহ্বান করবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব; কে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তাকে প্রদান করব; কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহিহ বুখারি: ১১৪৫)
আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দোয়া কবুল হয়। সুতরাং তোমরা দোয়া করো।’ (মেশকাত: ৬৭১)
জুমার দিনের শেষ মুহূর্তের দোয়া
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের ১২টি মুহূর্ত। তার একটি মুহূর্ত এমন, যখন কোনো মুসলিম কিছু চাইলে আল্লাহ তা তাকে দান করেন। তোমরা আসরের পরের শেষ মুহূর্তে তা অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি: ৬০৩৭)
সেজদার সময়ের দোয়া
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সেজদারত বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী। সুতরাং সে সময় বেশি বেশি দোয়া করো।’ (মুসলিম: ৪৮২)
বিজ্ঞাপন
ফরজ নামাজের পরের দোয়া
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি উত্তর দিলেন, ‘রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পর।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯৮)
কদরের রাতের দোয়া
রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার আগের (জীবনের) সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৩৭২)
আজানের সময়ের দোয়া
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন মুয়াজ্জিন আজান দেয়, আসমানের দুয়ার খুলে যায় ও দোয়া কবুল হয়।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১৮৮৪)
বৃষ্টির সময়ের দোয়া
রাসুল (স.) বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। আজানের সময়ের দোয়া ও বৃষ্টি বর্ষণের সময়ের দোয়া।’ (সুনানে আবু দাউদ, সহিহুল জামে: ৩০৭৮)
আরাফাতের দিনের দোয়া
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আরাফাতের দিনের দোয়াই শ্রেষ্ঠ দোয়া। দোয়া-জিকির হিসেবে সর্বোত্তম হলো ওই দোয়া, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন। তা হলো- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির।’ (জামে তিরমিজি: ৩৫৮৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩৭৭৮)
ইফতারের সময়ের দোয়া
‘তিন ব্যক্তির দোয়া অগ্রাহ্য করা হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।’ (বায়হাকি: ৩/৩৪৫; সিলসিলাতুস সহিহা, আলবানি : ১৭৯৭ )
উল্লেখ্য, দোয়া কবুলের জন্য সুন্নত পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিনীতিভাবে আশা নিয়ে তাড়াহুড়ো না করে দোয়া করতে হবে। শরীর ও কাপড় যেন পবিত্র হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া মনে রাখতে হবে কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে দোয়া এবং প্রত্যেক দোয়া টানা তিনবার করা সুন্নত। আর কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুকে ডাকো অশ্রুবিনীত হয়ে ও গোপনে।’ (সুরা আরাফ: ৫৫)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন এবং আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার মনের সদিচ্ছাগুলো পূরণ করে দিন। আমিন।