images

ইসলাম

মসজিদুল আকসা নিয়ে নবীজির মোজেজা

১০ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:২৮ পিএম

মেরাজের রাতে মহানবী (স.) মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা হয়ে প্রথম আসমানে গমন করেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ করে মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন। পাশাপাশি জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করে ৫ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

রাতে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটি সকালে নবীজি (স.) বর্ণনা দিচ্ছিলেন। কাফেররা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। অধিকাংশ লোক বলে উঠল, আল্লাহর কসম, এ তো এক আজব ও অবিশ্বাস্য ব্যাপার! আল্লাহর কসম! একটি কাফেলার শামে (সিরিয়া) যেতে একমাস ও আসতে একমাস লাগে। আর মুহাম্মদ কিনা এই রাতের মধ্যে সেখানে গিয়ে আবার ফিরে আসলেন! 

একদল লোক আবু বকর (রা.)-কে গিয়ে বলল, হে আবু বকর! আপনার বন্ধুর খবর রাখেন? তিনি নাকি গত রাতে মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে সপ্ত আকাশ পরিভ্রমণ করে এসেছেন! আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন?
আবু বকর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এমন কথা কি তিনি বলেছেন? মুশরিকরা সমস্বরে বলে উঠল, হ্যাঁ, হ্যাঁ সবার সামনেই বলেছেন। আবু বকর (রা.) দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, তাহলে আমি বিশ্বাস করি। কাফেররা বিস্ফোরিত চোখে বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, এমন অসম্ভব কথাও আপনি বিশ্বাস করেন? আবু বকর (রা.) জবাব দিলেন—‘আমি তাঁর জবানে এর চেয়েও আশ্চর্যজনক কথা বিশ্বাস করি।’ এই অকপট বিশ্বাসের দরুন চিরকালের জন্য তিনি ‘সিদ্দিক’ (অতি বিশ্বাসী) উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।

কাফেরা আবু বকরের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। কিন্তু থেমে নেই তাদের দৌড়ঝাঁপ। তারা মহানবী (স.)-কে ঘটনা প্রমাণ করার দাবি জানাল। কাফেররা বলল, আসমানের কথা আমরা জানি না, বলতেও পারব না। তবে বায়তুল মুকাদ্দাসে আমরা গিয়েছি। আপনি সেখানে গিয়ে থাকলে বলুন, তার দালান দেখতে কেমন? দরজা-জানালা কয়টি? সিঁড়ি কতগুলো? এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে।

অবিশ্বাসীদের এরকম প্রশ্নে তিনি পেরেশান হয়ে গেলেন। ভাবলেন, আজ যদি তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে না পারি, তাহলে ওরা আমাকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করবে। কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অসম্ভব। কেননা আল্লাহর রাসুলের রাত্রিকালীন এই ভ্রমণ ছিলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের ভ্রমণ। তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস দেখতে বা এর দরজা জানালা গুনতে সেখানে যাননি। আল্লাহর রাসুলের সেদিনের পেরেশানি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘তখন আমার এত বেশি পেরেশানি হলো যে, ওই রকম পেরেশানি আমার আর কখনো হয়নি। আল্লাহ তাআলা তখন নবী (স.)-এর সামনে কুদরতিভাবে বায়তুল মুকাদ্দাসকে তুলে ধরলেন, আর তিনি দেখে দেখে তাদের প্রশ্নের জবাব দিলেন। এ বিষয়ে নবীজি (স.) বলেন- فَجَلَّى اللهُ لِى بَيْتَ الْمَقْدسِ فَطَفِقْتُ اُخْبِرهُمْ عَنْ ايَاتِه وَ اَنَا اَنْظُرُ- مسلم অতঃপর আল্লাহ পাক বায়তুল মুকাদ্দাসকে আমার চোখের সামনে তুলে ধরলেন, আর তারা যা জিজ্ঞাসা করছিল, আমি দেখে দেখে গণনা করে করে তার উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম। (সুবহানাল্লাহ!)

আরও পড়ুন: সিরিয়া-ফিলিস্তিন-ইয়েমেনের জন্য যে দোয়া করেছেন নবীজি

আল্লাহর রাসুলের উত্তর দেওয়ার ভঙ্গিতে মনে হয়েছিলো, তিনি সরাসরি বায়তুল মুকাদ্দাস দেখে উত্তর দিচ্ছিলেন। কাফেরদের দলে একজনের বায়তুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে খুব জানাশোনা ছিল। নবীজির উত্তর শুনে সেই ব্যক্তি বললেন, আপনি সত্য বলেছেন, বায়তুল মুকাদ্দাসের সঠিক বিবরণ তুলে ধরেছেন আপনি। আবু বকর (রা)-ও এর আগে বায়তুল মুকাদ্দাস দেখেছিলেন, তখন তিনিও বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি সত্যবাদী। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর রাসুল।

এটা ছিল নবীজির মোজেজা। আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবী-রাসুলদেরকে এভাবে সাহায্য করেছেন এবং কাফেরদের প্রশ্নবানের বিরুদ্ধে জয়ী করেছেন। 

কিন্তু এরপরও কাফেরদের সন্দেহ দূরীভূত হয়নি। তারা বলল, আপনার এই ভ্রমণের কোনো সাক্ষী আছে কি? নবীজি বললেন, হ্যাঁ, সাক্ষী আছে। আমি যখন বায়তুল মুকাদ্দাস যাচ্ছিলাম, তখন ‘রওহা’ নামক স্থানে তোমাদের এক ব্যবসায়ী কাফেলা দেখতে পেয়েছি। তাদের একটি উট হারিয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের সালাম দিয়েছি এবং উটের সন্ধান বলে দিয়েছি।

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন নিয়ে কোরআন-হাদিসে যা এসেছে

প্রত্যাবর্তনের সময় আরেকটি কাফেলা দেখেছি, তাদের পাত্রের মুখ ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করা ছিল। আমি ঢাকনা খুলে পানিটুকু পান করে ফেলেছি। এই কাফেলাটি অগ্রসর হচ্ছে তানয়িম অভিমুখে। তাদের সম্মুখে আছে একটি খাঁকি রঙের উট, তার পিঠে রয়েছে কালো রঙের চট এবং দুটি কালো বস্তা।

তানয়িম মক্কা থেকে বেশি দূরে নয়। তাই তারা মহানবীর কথা সত্য কি না যাচাই করার জন্য সেদিকে ছুটে গেল। যথাস্থানে পৌঁছে কাফেলাকে পেয়ে গেল। নবীজির বর্ণনামতো সেই উটটিকেও দেখতে পেল। তাদেরকে পানির কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানাল, পাত্রখানি ঠিকমতো ঢাকাই ছিল। কিন্তু কেন জানি পানি পাওয়া গেল না। এদিকে প্রথম কাফেলাটি মক্কায় পৌঁছে গেছে। তাদেরকে উট হারানোর কথা জিজ্ঞেস করা হলে তারা স্বীকার করে বলল, এক অজ্ঞাতজনের ডাক তারা শুনেছে এবং সে আওয়াজ অনুসরণ করে তাদের হারানো উট ফিরে পেয়েছে। এভাবেই মেরাজ তথা মহানবী (সা.)-এর ঊর্ধ্বগমনের সত্যতা স্পষ্ট হয় সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে।  (সূত্র: মাহবুবে খোদা; সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া; তাফসিরে মারেফুল কোরআন: ৫ম-খণ্ড, ৪৩৩, তাফসিরে ইবনে কাসির: ১৩-খণ্ড, ২৬৭)