ধর্ম ডেস্ক
২২ আগস্ট ২০২৩, ০৭:১৩ পিএম
সুরা বাকারার ২৪৫ নম্বর আয়াত নাজিলের পর ইহুদিরা মহান আল্লাহকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে লাগল। আয়াতটি ছিল- ‘এমন কে আছে যে আল্লাহকে কর্জ দেবে? উত্তম কর্জ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন...।’
এখানে কর্জ দ্বারা বোঝানো হয়েছে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা। খরচ করে জান্নাত কিনে নেওয়া। কিন্তু ইহুদিরা বুঝতে ভুল করল এবং না বুঝেই তিরস্কার করে বলতে লাগল- মুসলমানদের আল্লাহ দেখি বড় ফকির! আমাদের থেকে কর্জ চাচ্ছেন। তাদের রব আমাদের মুখাপেক্ষী; আমরা হলাম ধনী, বিত্তবান! একজন আরেকজনের কাছে কর্জ তখনই চায় যখন তার কাছে থাকে না। এভাবে ইহুদিরা মহান রবকে তিরস্কার করতে লাগল।
এক ইহুদির তিরস্কার শুনে ফেলেন আবু বকর (রা.)। তিনি এটা সহ্য করতে পারলেন না। রাগে-ক্ষোভে তাঁর চোখ লাল হয়ে গেলো। সজোরে ইহুদির গালে বসিয়ে দিলো এক চড়। এরপর আবু বকর (রা.) চলে গেলেন। চড় খেয়ে ইহুদি বিচার নিয়ে গেল নবীজি (স.)-এর কাছে। বিচার দিলো- আপনার সাহাবি আবু বকর আমাকে থাপ্পড় মেরেছে। নবীজি (স.) শুনে বললেন ‘তুমি হয়ত ভুল বলছো। আমার আবু বকর কখনো কাউকে থাপ্পড় দিতে পারে না। তোমাকে হয়ত ওমর থাপ্পড় দিয়েছে। কারণ, ওমর হলো রাগী।
আরও পড়ুন: যে পরিস্থিতিতে আবু বকরের সিদ্দিক উপাধি লাভ
ইহুদি নাছোড়বান্দা, ‘না, আমাকে আবু বকরই থাপ্পড় দিয়েছে। আমি আবু বকরকে চিনি।’ যখন ইহুদি এভাবে জোর দিয়ে বলে যাচ্ছিল—তখন নবীজি (স.) বললেন, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আবু বকরকে ডাকো।’ আবু বকর নবীজির খেদমতে উপস্থিত হলেন। নবীজি (স.) বললেন, হে আবু বকর! তুমি এই ব্যক্তিকে কেন থাপ্পড় মারলে?
আবু বকর (রা.) ভদ্রতার সঙ্গে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (স.)! এই ব্যক্তি আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে ফকির বলেছে তাই থাপ্পড় দিয়েছি।’ ইহুদি সাথে সাথে বলে উঠলো, ‘আবু বকর মিথ্যা বলছে। আমি এরকম বলিনি।’ নবীজি (স.) আবু বকর (রা.)-কে বললেন, তোমার পক্ষে সাক্ষী পেশ করো।
আবু বকর (রা.) বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (স.)! সেখানে শুধুমাত্র আমিই ছিলাম। সাক্ষী পাবো কোত্থেকে?’
রাসুল (স.) ন্যায়বিচারক ছিলেন। পক্ষপাতিত্ব করতেন না। রাসুল (স.) বললেন, যদি তুমি সাক্ষী পেশ করতে না পারো, তাহলে তুমি ইহুদিকে যেভাবে থাপ্পড় দিয়েছিলে ঠিক সেভাবে ইহুদিও তোমাকে একটা থাপ্পড় দেবে।
আরও পড়ুন: আবু বকর (রা.)-এর দান সম্পর্কে ওমর (রা.) বর্ণিত সুন্দর একটি হাদিস
সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা আবু বকর (রা.)-এর পক্ষে সাক্ষ্য হিসেবে আয়াত নাজিল করেন। আয়াতটি হলো- لَقَدۡ سَمِعَ اللّٰهُ قَوۡلَ الَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰهَ فَقِیۡرٌ وَّ نَحۡنُ اَغۡنِیَآءُ ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলেছে যে, আল্লাহ হচ্ছেন অভাবগ্রস্ত আর আমরা বিত্তবান!’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮১)
আয়াতটি নাজিলের পর স্বয়ং আল্লাহ তাআলার সাক্ষ্য পেয়ে রাসুল (স.) আবু বকর (রা.)-এর পক্ষে রায় দেন।
উল্লেখ্য, পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াতের তাফসিরে হজরত আবু বকর (রা.)-এর আলোচনা ওঠে এসেছে। যা আবু বকর (রা.)-এর মহান ব্যক্তিত্ব ও অবিচল ঈমানের প্রমাণ। যেমন—সুরা তাওবার ৪০ নম্বর আয়াত, সুরা আলে ইমরানের ১৫৯ নম্বর আয়াত, সুরা জুমারের ৩৩ নম্বর আয়াত, সুরা ফাতাহের ২৯ নম্বর আয়াত, সুরা লায়ল ৫-৭ আয়াত ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজরত আবু বকরের (রা.) জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।