images

ইসলাম

আশুরা ও কারবালার স্বতন্ত্র শিক্ষা 

ধর্ম ডেস্ক

২৮ জুলাই ২০২৩, ১০:১৮ এএম

আশুরা ও কারবালা—দুটি আলাদা বিষয়। অনেকে এখনও দুই বিষয়কে একত্রে গুলিয়ে ফেলেন। মূলত আশুরার দিনেই কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা ঘটেছে। তাই দুই ঘটনার শিক্ষা আলাদা। নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। 

আশুরা আশুরা কারবালা
মহররম মাসের ১০ তারিখকে আরবিতে আশুরা বলা হয়। এই দিনে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুসা (আ.)-এর সম্প্রদায় মুক্তি পেয়েছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সমুদ্রের মাঝখানে রাস্তা বানিয়ে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছতে সাহায্য করেছিলেন। এর শুকরিয়াস্বরূপ তারা প্রতিবছর আশুরার দিনে রোজা রাখত। পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ (স.) হিজরতের পর যখন এ বিষয়ে অবগত হন, তখন তিনি বলেন, منكم بموسى احق نحن অর্থাৎ মুসা (আ.)-এর আদর্শ পালনে তোমাদের থেকে আমরা বেশি হকদার। তোমরা রোজা রাখলে আমরাও অবশ্যই রাখব। তাই ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্যতার দূরত্ব বজায় রেখে ১০ মহররমের সঙ্গে আগে-পরে আরো একটি রোজা রাখতে সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করেছেন। এ ছিল আশুরার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

আরও পড়ুন
আশুরার যে আমলে সারাবছর রিজিক প্রশস্ত থাকে
আশুরার দুই রোজা কবে রাখতে হবে?

আশুরার শিক্ষা
আশুরার এ ইতিহাস থেকে মৌলিকভাবে তিনটি শিক্ষা পাওয়া যায়। ১. পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের ওপর যে নেয়ামত দেওয়া হয়েছে, সে নেয়ামতগুলোকে আমাদের ওপর দেওয়া হয়েছে বলে সম্মান করা। ২. নেয়ামতের শোকর আদায় করা। ৩. বিধর্মীদের অনুরসরণ না করা। যেমন তারা একটি রোজা রাখত, তাদের বৈশাদৃশ্যের জন্য আমাদেরকে দুটি রোজা রাখার আদেশ করা হয়েছে।

কারবালা কারবালা আশুরা
কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। চরিত্রহীন ইয়াজিদের অন্যায়-অনাচারের প্রতি মাথানত না করে শাহাদাতকেই বেছে নিয়েছিলেন ইমাম হোসাইন (রা.)। ৬১ হিজরির ১০ মহররম পবিত্র আশুরার দিনে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেছিলেন নবী-দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)। শাহাদাতের আগের পুরোটা সময় তিনি কঠিন ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। ইয়াজিদের অন্যায় নিয়ে কথা বলতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিষ্ঠুর ইয়াজিদ বাহিনী কোনো কথা না শুনে কারবালা অবরোধ করে এবং অল্পসংখ্যক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে। প্রাণপণ লড়াইয়ের পর ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। শাহাদাতের পর তাঁর দেহ মোবারকে মোট ৩৩টি বর্শার এবং ৩৪টি তরবারির আঘাত ছাড়াও অসংখ্য তীরের জখমের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। অনুসন্ধানে জানা যায়, সেদিন কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর পক্ষের প্রায় ৭১-৭৩ জন শাহাদাতবরণ করেছিলেন। ashura karbala  ashura karbala

একজন ঈমানদার মাত্রই এই দিনে বড়ই শোকবিহ্বল ও ব্যথাতুর হয়ে পড়েন। এটি খুবই স্বাভাবিক। নবী পরিবারের জন্য অন্তরে ভালোবাসা পোষণ করা ঈমানের অন্যতম আলামত। এক হাদিসে নবীজি (স.) বলেন, ‘এরা (হাসান-হোসাইন) দুজন আমার পৌত্র (দৌহিত্র) এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ! আমি এদের দুজনকে ভালোবাসি। সুতরাং তুমি তাদের ভালোবাসো এবং যে ব্যক্তি এদের ভালোবাসবে, তুমি তাদেরও ভালোবাসো।’ (তিরমিজি: ৩৭৬৯)

আরও পড়ুন
কারবালার ময়দানে কী ঘটেছিল
নবীজির বাগানের দুই ফুল হজরত হাসান ও হোসাইন (রা.)

তবে মনে রাখতে হবে, হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত ইসলামি শরিয়ত পূর্ণ হওয়ার পরের ঘটনা। তাই শরিয়তে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনাকেন্দ্রিক কোনো আমল নেই। যেমন— শোক পালন করা, মাতম করা, নতুন নিয়মে নামাজ পড়া, তেল মালিশ, তাজিয়া মিছিল, পিটে চাবুকের আঘাতে রক্তাক্ত হওয়া, আতশবাজি, আলোকজসজ্জা, পুঁথি পাঠ, হালুয়া-রুটির হৈ-হুল্লোড় ইত্যাদি কাজ সুন্নাহবিরোধী ও বিদআত।

কারাবালার শিক্ষা আশুরা কারবালা
কারবালার ঘটনার মৌলিক শিক্ষাগুলো হলো— ১. অসৎ ব্যক্তির আনুগত্য করা যাবে না। ২. কঠিন বিপদে সবর করা ৩. আল্লাহর পথে অটল-অবিচল থাকা। ৪. আল্লাহর পথে জীবন দেওয়া। ৫. দ্বিধাবিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আশুরা ও কারবালার মর্যাদা রক্ষার তাওফিক দান করুন। আশুরা ও কারবালার পবিত্র শিক্ষাগুলো ধারণ করার তাওফিক দান করুন। বিদআত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।