images

রাজনীতি

যে কারণে কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি

মো. ইলিয়াস

১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৬:৪৯ পিএম

প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এজন্য বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার থাকলেও এখনই কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি।

চূড়ান্ত আন্দোলনের আগ পর্যন্ত জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ছাড়াও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে টানা কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায় বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে তৃণমূল ও রাজধানীর পর আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে গণসমাবেশ করছে দলটি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে সমাবেশ হয়েছে, ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই কর্মসূচি।

নিত্যপণ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে তৃণমূলে শুরু হওয়া কর্মসূচি ১০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। এরপর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় ১৬টি সমাবেশের মধ্যে দিয়ে প্রথম দফার আন্দোলন শেষে দলটি বিভাগীয় (সাংগঠনিক বিভাগ) কর্মসূচি ঘোষণা করে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে সমাবেশের পর উজ্জীবিত বিএনপি

বিএনপি নেতারা বলছেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়েই তারা মাঠে নেমেছেন। তাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। ধাপে ধাপে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হবে। যখন দলের সাথে সাধারণ জনগণ নেমে আসে তখনই গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেবে। সেই লক্ষ্যে সরকারবিরোধী দলগুলো আন্দোলন করছে, তারপর একটি পর্যায়ে গিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে অবস্থান নেবে।

bnp2

নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ত করার ওপর জোর দিচ্ছে দলটি। এজন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সোচ্চার রয়েছে বিএনপি।

সূত্র মতে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ছাড়াও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিসহ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার থাকবে বিএনপি। তবে দলটি এখনই হরতাল বা অবরোধের মতো বড় কর্মসূচিতে যাবে না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে এখনও বাকি ১৫ মাস। তাই এখনই বড় কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না। বড় কর্মসূচি দিলে সংঘাত হবে এবং সরকার মামলা-হামলা আরও বাড়াবে। তার চেয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রেখে নির্বাচনের কাছাকাছি গিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায় দলটি। 

জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন চলবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আগ পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

আরও পড়ুন: বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা কতদূর?

চূড়ান্ত আন্দোলন কবে নাগাদ হতে পারে জানতে চাই তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত আন্দোলন কখন হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছি, কিন্তু দিনক্ষণ বলা যাবে না। যেকোনো সময় সরকারের পতন হতে পারে। সরকারবিরোধী দলগুলো আন্দোলন করছে, তারপর একটি পর্যায়ে গিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে অবস্থান নেব। আন্দোলনের মধ্যেই এই সরকারের পতন ঘটবে।’

এই নেতা বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় ধাপে বিভিন্ন দলের সাথে আলোচনা করছি। এই সরকারের পতন ঘটানোর জন্য কী কী রূপরেখা করা যেতে পারে সবার সাথে সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় আমরা সেভাবে আগাচ্ছি; সরকারের পতন ঘটবে এটা নিশ্চিত। কারণ জনগণের মাঝে সরকারের কোনো অবস্থান নেই।’

bnp3

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আন্দোলনের দিন তারিখ তো আর বলা যায় না। ধাপে ধাপে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হবে। যখন দলের সাথে সাধারণ জনগণ নেমে আসে তখন গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং সেটাকেই চূড়ান্ত আন্দোলন বলে। সেটা দিন তারিখ দিয়ে বলা খুব কঠিন। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি রয়েছে, এরপরে আরও কর্মসূচি আসবে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে এবং করবে যদি সেটাকে সরকার বিপথগামী না করে।’

আরও পড়ুন: এবার ‘অগ্নিপরীক্ষায়’ বিএনপির ঢাকার নেতারা

চূড়ান্ত আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি রয়েছে (১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে মহাসমাবেশ)। ডিসেম্বরে সমাবেশ করে ওখান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা হবে। তখন সবকিছু জানতে পারবেন, এর আগে কিছু বলতে পারছি না। আমরা আন্দোলন করে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি আন্দোলন করেই এই সরকারের পতন ঘটাতে। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে দ্বিতীয় দফায় আমাদের আলোচনা চলমান রয়েছে। আলোচনা শেষ হলেই রূপরেখা এবং চূড়ান্ত আন্দোলনের বিষয়ে জানানো হবে।’

এমই/জেবি