নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২২ পিএম
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ১৭ বছরের প্রবাস জীবন কাটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে দল থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দিনটিকে অবিস্মরণীয় করে রাখতে চান তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটেই দেশে আসবেন তারেক রহমান। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সেই ফ্লাইটটি নামবে বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে।
আরও পড়ুন: ট্রাভেল পাস পেয়েছেন তারেক রহমান
দেশে ফিরে গুলশানের ১৯৬ নম্বরের বাড়িতে উঠবেন তারেক রহমান, যেটি ইতোমধ্যে পুরোপুরি প্রস্তুত। নিশ্চিত করা হয়েছে শতভাগ নিরাপত্তা। বাড়ির পুরো আঙ্গিনা ও সড়কেও বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, দেয়াল জুড়ে তারকাঁটা ও নিরাপত্তা রক্ষীদের কঠোর পাহারা।
রাজধানীতে ২০-২৫ লাখ নেতাকর্মী সমাগমের প্রস্তুতি
তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ২০-২৫ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম ঘটবে, তেমনটাই প্রস্তুতি বিএনপির। সারাদেশ থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা রাজধানীতে আসবেন। এক্ষেত্রে যেন রাজধানীরবাসী জনদুর্ভোগে না পড়েন, তাই জনসমাগমের জন্য তিনশ ফুট সড়কটিকে বেছে নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, ‘তারেক রহমান এত বছর পরে আসবেন, তাই দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তাকে স্বাগত জানাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন। একই সঙ্গে দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নিতে আলাপ-আলোচনা চলছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবীন বলেন, ‘সেদিন (২৫ ডিসেম্বর) লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থক তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে রাজধানীতে জড়ো হবেন। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
ঢাকা-৬ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, ‘তারেক রহমানের আগমন ঘিরে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের আমরা সংগঠিতভাবে বরণ করে নেব। এটি হবে ইতিহাসের একটি স্মরণীয় সংবর্ধনা। ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ অংশ নেবে।’
এদিকে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার সুবিধার্থে ইতোমধ্যে বিশেষ ট্রেন ও বগি রিজার্ভ চেয়েছে বিএনপি।
অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যসচিব বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরাটা হবে ঐতিহাসিক। তার দেশে ফেরা অবিস্মরণীয় করে রাখতে কাজ করছে কমিটি। সেদিন রেকর্ডসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি হবে।’
নিরাপত্তায় থাকবে প্রায় ২ হাজার পুলিশ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তনের দিনে তার নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত থাকবেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় ২ হাজার সদস্য। এছাড়া বিএনপির নিজস্ব ব্যবস্থায় দলের চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) মাধ্যমে সমন্বিত নিরাপত্তা দেওয়া হবে তারেক রহমানকে।
বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল ও গুলশানের বাসা পর্যন্ত এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বাসা, অফিস এলাকা ও তারেক রহমানের চলাচলের পথ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে এরইমধ্যে আইজিপিসহ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রাথমিকভাবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে নিরাপত্তাব্যবস্থার চূড়ান্ত নির্দেশনা এখনো ঠিক হয়নি। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত নির্দেশনা আসতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে তারেক রহমানের নিরাপত্তায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে সার্বিক নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে থাকছে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)। তারা পুলিশ ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ করছেন।
সরকারের ভূমিকা নিয়ে চিন্তিত বিশ্লেষকরা
তারেক রহমানের নিরাপত্তায় বিএনপি সব প্রস্তুতি নিলেও দুশ্চিন্তায় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি ওসমান হাদির ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ভূমিকাই সবচেয়ে মুখ্য বলে মনে করছেন তারা। এ ব্যাপারে কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ তাদের।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক কর্নেল মো. জগলুল আহসান বলছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এসএসএফের প্রটোকল দেওয়া হয়েছে, সেভাবে রাষ্ট্র চিন্তা করলে তারেক রহমানকেও এসএসএফ বা সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা প্রটোকল দেওয়া যেতে পারে।’
তিনি মনে করেন, ‘কিছু ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটির বিষয় থাকে, কিছু ইন্টারনাল সিকিউরিটির ব্যাপার থাকে, অর্গানাইজেশন থাকে- সেগুলোর মাধ্যমে কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সবভাবে আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতার পালাবদলের রাজনীতি যখন দৃশ্যমান, সর্বত্র দেশের নিরাপত্তা নিয়ে যখন নেতিবাচক প্রশ্ন, সেসময় বিএনপির প্রধান নেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত কতটা সম্ভব, সে প্রশ্নই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এদিকে জানা গেছে, ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) ১২টা নাগাদ ঢাকার বিমানবন্দরে নেমেই সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে অসুস্থ মা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে যাবেন তারেক রহমান। সেখান থেকে যাবেন গুলশানে তার জন্য প্রস্তুত করে রাখা বাড়িটিতে। পরদিন (২৬ ডিসেম্বর) যাবেন বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে।
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কারাগারে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয় তারেক রহমানের ওপর। ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি সবগুলো মামলা থেকে জামিন পান। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। আর ফেরেননি। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করছেন সেন্ট্রাল লন্ডনের এডমন্টনে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সবার একটাই প্রশ্ন ছিল, কবে তিনি দেশে ফিরবেন। বিএনপির শীর্ষ নেতারা যদিও বলছিলেন, শিগগিরই দেশে ফিরবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো তারিখ জানা যাচ্ছিল না।
অবশেষে গত ১২ ডিসেম্বর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে জানান, আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। এছাড়া বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ এবং মিডিয়া সেল থেকেও খবরটি জানানো হয়।
সেই থেকে ২৫ ডিসেম্বরের অপেক্ষায় বিএনপি। দলের ভেতর বাড়তি উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং প্রস্তুতি, দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন প্রিয় নেতা। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যেসব বাধা সৃষ্টি হয়েছিল, তারেক রহমান দেশে এলে সেসব দূর হয়ে যাবে।
এএইচ