images

রাজনীতি

প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপিতে ‘অগ্নিপরীক্ষা’

বোরহান উদ্দিন

২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রতাশীরা। অন্যদিকে যোগ্য প্রার্থী চূড়ান্ত করতে কঠিন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। এবার ধানের শীষের প্রার্থী হতে পার হতে হবে ছয়টি ধাপ। এসব ধাপ পার হওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদন দেবে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড।

বিএনপির হাইকমান্ড বলছে, এবার শুধুই পরিচিতি দিয়ে মনোনয়ন মিলবে না। প্রার্থী হতে হলে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় এবং রাজনৈতিক ত্যাগ ও তিতিক্ষা থাকতে হবে। কোনোনোভাবেই বিতর্কিত, নিষ্ক্রিয় কিংবা সুযোগসন্ধানীরা যেন প্রার্থী হতে না পারেন, সেজন্যই এমন প্রক্রিয়ায় তারা হাঁটছেন।

৫০টির বেশি আসনে একক প্রার্থী থাকায় সেগুলো নিয়ে অনেকটা নির্ভার বিএনপি। তবে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন এমন আসনের নেতাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। একক প্রার্থী নিশ্চিতের টার্গেট নিয়ে কাজ করা নেতারা ডাক পাওয়াদের দিচ্ছেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বার্তা। কোনোভাবেই দল মনোনীত প্রার্থীর বাইরে যাওয়া যাবে না- এমন কড়া নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

একইসঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংগ্রহ করছেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এসব দলের সংরক্ষণে রাখা হবে বলে জানা গেছে। সব প্রক্রিয়া শেষে অক্টোবরের মধ্যেই দলের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হতে পারে বলেও জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে প্রত্যেক দল আগ্রহীদের সঙ্গে কথা বলে। আমরাও সেভাবে সবার সঙ্গে কথা বলছি। স্বাভাবিকভাবেই দলের সিদ্ধান্ত যাতে সবাই মেনে নিয়ে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন, সেই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি যেহেতু বড় দল, ফলে এখানে আগ্রহীও বেশি থাকবেন, এটা স্বাভাবিক।’

আরও পড়ুন

প্রার্থী বাছাইয়ে ‘চমক’ দেখাতে চায় বিএনপি

অন্যদিকে বিএনপির এমন বাছাই প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাদের প্রত্যাশা, দল নিরপেক্ষভাবে বাছাই শেষে ত্যাগী, গ্রহণযোগ্য ও বিজয়ী হতে পারবেন এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে।

BNP2
সিলেট বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ-১০ আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আক্তারুজ্জামান বাচ্চু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দল যেটা ভালো মনে করবে, সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা তা মেনে নেব। আমরা চাই আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে যাতে কেউ মনোনয়ন পান। আমরা বিশ্বাস করি, দল জনপ্রিয়, ত্যাগী ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বেছে নেবে।’ 

প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ছয় ধাপে পরীক্ষা

বিএনপি এবার প্রার্থী বাছাইয়ে বহু স্তরের প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, মোট ছয়টি ধাপে প্রার্থীদের যাচাই করা হবে। প্রথম ধাপে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজ উদ্যোগে সারাদেশে জরিপ চালিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা ও কার্যকারিতা যাচাই করেছেন। দ্বিতীয় ধাপে দলের মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন এবং স্থানীয় নেতাদের মতামত সংগ্রহ করেছেন।

বর্তমানে তৃতীয় ধাপে প্রার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এরপর চতুর্থ ধাপে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও আবেদন গ্রহণ, পঞ্চম ধাপে মনোনয়ন বোর্ডের সামনে সাক্ষাৎকার ও চূড়ান্ত যাচাই এবং শেষ ষষ্ঠ ধাপে চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে।

আরও পড়ুন

হাইকমান্ডের ‘মনিটরিংয়ে’ বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে শুধু পরিচিত নাম বা অভিজ্ঞতা থাকলেই মনোনয়ন মিলবে না। বিগত দিনে তার আন্দোলনে ভূমিকা, গ্রহণযোগ্যতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রধান মানদণ্ড হবে। দল সেভাবেই এগোচ্ছে।’

একক প্রার্থীর লক্ষ্য ও বিভাগীয় প্রস্তুতি

বিএনপি এবার প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমানো, দলীয় ঐক্য দৃঢ় রাখা এবং মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় দ্বিধা-বিচলতা এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলতি অক্টোবরের মধ্যে প্রায় ২৫০ আসনে একক প্রার্থীকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হবে। বিভাগীয় প্রস্তুতিও ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

BNP3
প্রার্থী চূড়ান্ত করছে বিএনপির হাইকমান্ড। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভুঁইয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের বিভাগের ২২টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের এনআইডি ও ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। দলের নির্দেশনার আলোকে এটা করা হচ্ছে।’

অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দেওয়ার শঙ্কা

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রার্থী মনোনয়ন পারিবারিক পরিচিতি বা দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করবে না। বরং প্রতিটি প্রার্থীর যাচাই করা হচ্ছে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্য। একই সঙ্গে তারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডে কতটা সক্রিয় এবং দলের আন্দোলনে তারা কী ভূমিকা রেখেছেন সে বিষয়।

আরও পড়ুন

বিএনপির প্রার্থী হতে মাঠে ৫০ সাবেক ছাত্রনেতা

তবে বেশির ভাগ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রার্থী ঘোষণার পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিতে পারে সেই শঙ্কা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের মনে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে বেশি আগে প্রার্থী ঠিক করা হলে অনেকে মনোবল হারিয়ে ফেলবেন, পাশাপাশি তৃণমূল দ্বন্দ্ব ও বিভাজন বাড়বে, এটা অনেকটা নিশ্চিত।

সম্প্রতি সিলেট বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংঘাতে জড়িয়েছেন হবিগঞ্জের এক নেতার কর্মীরা। এক গ্রুপকে ভেতরে ডাকায় অন্য গ্রুপ বাইরে দরজায় লাথি মেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। যার ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকদের ওপর গুলশান কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটে।

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এখনই প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও দলীয় কার্যক্রমে প্রভাব পড়বে। এ কারণে প্রতিটি ধাপে সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা হচ্ছে।’

বিইউ/জেবি