images

রাজনীতি

নারীদের মন জয়ে পাল্টা কৌশলে মাঠে নামছে বিএনপি

বোরহান উদ্দিন

০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৫ এএম

  • অপপ্রচার ঠেকিয়ে দলের বার্তা পৌঁছানো টার্গেট
  • নেতৃত্ব দেবে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’
  • ঘরে ঘরে ছুটবেন সাবেক নারী জনপ্রতিনিধিরা
  • জামায়াতের নীরব কৌশল ঠেকানোর ভাবনা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মাঠ। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ একাধিক রাজনৈতিক দল আন্দোলনে নামলেও তারা ভোটের প্রস্তুতি অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে প্রার্থী চূড়ান্তের পর জামায়াতের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। পুরুষদের পাশাপাশি জামায়াতের নারী কর্মীরাও যাচ্ছেন ঘরে ঘরে। এমন পরিস্থিতিতে আসছে নির্বাচনে বিএনপি শুধুই প্রচার বা প্রতিশ্রুতির পথে হাঁটছে না, তারা কৌশলগত পালাবদলও করছে। আর এই কৌশলে এবার ‘মৌন ভোটার’ হিসেবে পরিচিত নারী ভোটারদের মন জয় করতেই সরাসরি মাঠে নামাচ্ছে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’কে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় তৈরি করা হয়েছে এই কর্মসূচির রূপরেখা। খুলনা থেকে শুরু হয়ে সারাদেশে সাবেক ও বর্তমান নারী জনপ্রতিনিধিরা প্রচারে নামবেন। শুধু ভোট চাওয়ার জন্য নয়, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান, রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা এবং বিএনপির 'নারীবান্ধব' ভাবমূর্তি তুলে ধরাই এই প্রচারের মূল উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে।

দলের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের শীর্ষ দুই নেতা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঙ্গে ভাচুর্য়ালি কথা বলেন। পরে সংগঠনটির শীর্ষ এই দুই নেতাকে নারীদের কাছে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেন।

আরও পড়ুন

বিএনপির প্রার্থী হতে মাঠে ৫০ সাবেক ছাত্রনেতা

একইসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরকে সারাদেশের নির্বাচিত সাবেক ও বর্তমান নারী জনপ্রতিনিধির নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে বলা হয়। কেন্দ্রীয় দফতর বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের মাধ্যমে সেই তালিকা সংগ্রহ করে এরই মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেত্রীর কাছে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

BNP3
নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। ছবি: সংগৃহীত

এই উদ্যোগকে বিএনপির ভিন্নধর্মী কৌশল হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, জামায়াত ইতোমধ্যে প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু করলেও তা প্রকাশ্যে আনছে না। বিএনপি মনে করছে, জামায়াতের এ 'চুপিসারে প্রস্তুতি' আসলে একটি সক্রিয় নির্বাচনী কৌশল—যার পাল্টা জবাব দিতে নারীদের ফ্রন্টলাইন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

যেভাবে সাজানো হচ্ছে কর্মসূচি

জানা গেছে, নারীদের কাছে টানার কর্মসূচিকে সামনে রেখে দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচির রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। বিশেষত প্রথমত নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর তারা নারী ভোটার কাছে যাবেন। সাবেক ও বর্তমান নারী জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে দলের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরবেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীদের কাছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই কর্মসূচি খুলনা বিভাগ দিয়ে শুরু হবে। ১৪ অক্টোবর খুলনায় মতবিনিময় হবে। যেখানে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা জেলা ও মহানগর জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

পরদিন ১৫ অক্টোবর যশোরে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়ে যশোর ছাড়াও মাগুরা, নড়াইল ও ঝিনাইদহের জনপ্রতিধিরা অংশ নেবেন। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কুষ্টিয়ায় ১৬ অক্টোবর মতবিনিময় সভা হবে। পর্যায়ক্রমে একসঙ্গে দু-তিনটি জেলার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একেকটি জেলায় মতবিনিময় হবে।

আরও পড়ুন

প্রার্থী বাছাইয়ে ‘চমক’ দেখাতে চায় বিএনপি

পরিকল্পনা অনুযায়ী, মতবিনিময় শেষে সাবেক নারী জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের নির্বাচনী এলাকা ও সংরক্ষিত আসনভিত্তিক এলাকায় নারীদের সংগঠিত করবেন। স্থানীয় নারী নেত্রীদের সঙ্গে সমন্বয় করে টিম গঠনের মাধ্যমে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার চালাবেন। এর মাধ্যমে প্রত্যেক নারী ভোটারের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

প্রচারণায় ঘরে ঘরে নারীদের কাছে গিয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের পক্ষে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি নারীর অধিকার, বিএনপির ভাবনা ও রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নারীদের ঘিরে হিসাব-নিকাশ

২০১৯ সালে নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় বিএনপি 'নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম' গঠন করে। তখন এটি ছিল একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। তবে এখন তা রূপ নিচ্ছে নির্বাচনী রাজনৈতিক শক্তিতে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় কর্মসূচি পালন করা এই সংগঠনটিতে চিকিৎসক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, ব্যবসায়ী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। এবার তারা নির্বাচনের আগে বিএনপির মাঠ তৈরিতে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে।

BNP2
অপপ্রচার রুখতে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। ছবি: সংগৃহীত

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘জামায়াতের নারী কর্মীরা ফজরের পর থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলের পক্ষ থেকে ভোট চাইছেন। ছাত্রী সংস্থার মেয়েরাও কোথাও কোথাও এ কাজে যুক্ত আছেন। তারা বিএনপির বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক কথাবার্তাও ছড়াচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে তারা দ্রুত বাগে আনতে পারছেন। এখন বিএনপিকেও মাঠে নামতে হচ্ছে।’  

ধর্মের অপব্যবহার ও অপপ্রচার ঠেকানোর ভাবনা

বিএনপি মনে করছে, তাদের জনপ্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় রঙ মিশিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। এসবের জবাবে মাঠে থাকবে নারীদের বিশেষ দল। শুধু দলের বার্তা নয়, ‘সত্য তথ্য’ নিয়েই ভোটারদের সামনে যাবে তারা।

আরও পড়ুন

হাইকমান্ডের ‘মনিটরিংয়ে’ বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা!

কর্মসূচির বিষয়ে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের নানা ধরনের প্রস্তুতির মধ্যে এটিও একটি। কোটি কোটি নেতাকর্মীর পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক নারী বিএনপিকে পছন্দ করেন। তাদের কাছে আমাদের পৌঁছাতে হবে। আমরা ঘরে ঘরে তাদের কাছে দলের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরার চেষ্টা করব।’

নিপুণ রায় বলেন, ‘বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। নারী প্রতিনিধিরা এই অপপ্রচার নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে মাঠে থাকব।’

বিইউ/জেবি