জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৫২ পিএম
জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে দেশে ‘অনেক গণ্ডগোল’ এর আশঙ্কা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে কিন্তু দেশে অনেক গণ্ডগোল হবে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে মাফিয়া নেত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে লন্ডভন্ড করার জন্যে, নির্বাচনকে বানচাল করার জন্যে অনেক সহিংস ঘটনার অবতারণা করবেন। আমাদের সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। আমরা দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই মাফিয়াদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করব আজকের দিনে এই হোক অঙ্গীকার।
তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচন হবে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যে, এবারের নির্বাচন হবে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করার জন্য, এবারের নির্বাচন হবে এই হাসিনা মার্কা-আওয়ামী লীগ মার্কা দুঃশাসনকে চিরতরে নির্বাসনে দেয়ার জন্যে। সরকারের কাছে আহ্বান রইল, আপনারা এমন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন যা নিয়ে দেশবাসী গর্ব করতে পারে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে, নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা সেখানে রয়েছেন। আমি আশা করব, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই গণরায় প্রতিফলিত হবে। এই নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে। অনেক মানুষ জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্যে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন পাওয়ার জন্যে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে ‘অগ্নি সোশ্যাল ফাউন্ডেশন’ ও ‘আমাদের নতুন বাংলাদেশ’ এর যৌথ উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘দ্রুত বিচার সম্পন্ন, মৌলিক সংস্কার ও সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, এ দেশের পুলিশ বাহিনী একটি পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল, বাংলাদেশ একটি পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু একবছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও পুলিশ বাহিনীতে কোনো সংস্কার হয়নি। এই বাহিনী সঠিকভাবে আসন্ন নির্বাচন করতে পারবে কিনা; এ নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন যে, র্যাবকে নির্বাচনের দায়িত্বে রাখা হবে। কিন্তু এই বাহিনীকে এখনও রাখা হলো কেনো? বিএনপি থেকে একটা পুলিশ সংস্কার কমিটি করা হয়েছিল, আমি সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলাম। আমরা এই র্যাবকে বিলুপ্ত করে দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলাম। এত কলঙ্ক তারা লেপন করেছে, এত অত্যাচার-নির্যাতন করেছে; এই বাহিনী সম্পর্কে উপযুক্ত কঠিন ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেই ধরনের কোনো ব্যবস্থা আমরা দেখতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, এই অন্তবর্তীকালীন সরকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য যারা আছেন তারা নিঃসন্দেহে ভালো লোক, কৃতি মানুষ। কিন্তু রাজনীতিতে একেবারেই অনভিজ্ঞ। অবশেষে তাদের বোধোদয় হয়েছে যে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া বাংলাদেশের জনগণের এইসব সমস্যার সমাধান কেউ করতে পারবে না। দেরিতে হলেও তারা উপলব্ধি করেছেন এবং প্রফেসর ইউনূস আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসে লন্ডনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্থে নির্বাচন হবে এই প্রতিশ্রুতি পালন করার জন্যে আমি প্রফেসর ইউনূসকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা আশা করব, তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন।
সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনে সাধারণ মানুষ এমন একজন ব্যক্তিকে ভোট দিতে চায়। যে দেশের নিপীড়িত মানুষের পাশে থাকবেন, যার কাছে গেলে পুলিশের অত্যাচার, সমাজপতিদের অত্যাচার, গ্রামাঞ্চলে বা শহরাঞ্চলে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার যেতে পারে এবং তিনি হবেন তাদের কাছে আপাতত প্রধান আশ্রয়স্থল। জনগণ এইভাবে সচেতন হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলো এতখানি পরিপক্কতার পরিচয় এতবছর দিতে পারে নাই যে, কেবলমাত্র প্রতীকে ভোট দিলেই তাদের সমস্যার সমাধান হবে। ফলে সরাসরি ভোটে নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তনে আমরা কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ দেখি না। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল ধরেই নিয়েছে যে, নির্বাচনে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, তাদের পক্ষে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়। এই নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য তারা পিআর সিস্টেমের কথা বলে।
জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকে অত্যন্ত গৌরবের সাথে উপস্থাপন করা হয়নি। তারা ভেবেছে, বাংলাদেশের মানুষের স্মরণ শক্তি খুবই দুর্বল। ১৯৭১ সালে আন্দোলনের সময়ে এই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল। আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে, ৮১ বছর বয়স। সুতরাং সেদিন কথা মনে হয়, আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল জামায়াতে ইসলামী, একাত্তর সালেও মহান মুক্তিযুদ্ধেও তারা বিরোধিতা করেছে। এখন তারা নতুন নতুন বাণী নিয়ে আর্বিভূত হয়েছে।
বিইউ/এফএ