নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম
দোর্দণ্ড প্রতাপে টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতা ধরে রাখা দেশের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ এখন যেন কোথাও নেই। গত এক বছরে দলটি তাদের অস্তিত্বের জানান দিতে পারেনি। এমনকি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও চলে যাচ্ছে অন্যদের দখলে। গত কয়েক দিন ধরেই গুলিস্তানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কার্যালয়টিতে নতুন ব্যানার ঝুলিয়ে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। তবে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে কারা দশ তলা এই ভবনটি দখলে নিচ্ছে সে ব্যাপারে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনো। সরকার বা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কেউই এটা নিয়ে মুখ খুলছেন না।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেল, ভবনের সামনেই ঝুলছে এক ব্যতিক্রমী ব্যানার। লেখা রয়েছে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’। তবে ভবনের ভেতর এখনো পরিত্যক্ত। দুর্গন্ধ ও নোংরা পরিবেশের কারণে ভেতরে দাঁড়ানোও দুষ্কর।
পুরো ভবন ঘুরে দেখা যায়, নিচ তলার ও প্রথম তলার বারান্দার ময়লা সরিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। সেখানেই চেয়ার পাতা রয়েছে। তবে সেখানে কোনো মানুষ দেখা যায়নি। আর ভবনের উপরের তলাগুলোর কোনোটি পাবলিক টয়লেট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, কোনোটিতে আবার বসছে জুয়া ও মাদকের আসর। ঘুমানো অবস্থায় দেখা যায় এক পথশিশুকেও।
প্রায় এক বছর পরিত্যক্ত থাকার পর সম্প্রতি অজ্ঞাত পরিচয় কিছু ব্যক্তি ভবনটির পরিষ্কার কাজ শুরু করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে কারা এই কাজ করছেন এবং ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’-এর উদ্যোগ কে নিচ্ছেন তা জানেন না স্থানীয়রা।
ভবন থেকে বের হয়ে দেখা গেল এক মধ্যবয়সী নারী। যিনি কার্যালয়টির দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন। জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, তার নাম মর্জিনা বেগম। তিনি আওয়ামী লীগ করতেন। তার অফিস পাশেই। তিনি একটি বিমা কোম্পানিতে কাজ করেন। ভবনটির কী অবস্থা, তা দেখতে এসেছেন। তিনিও জানেন না কে দখলে নিচ্ছে এই ভবন।
ভবনটি দেখতে এসেছিলেন আরও দুই যুবক। পরিচয় না দিলেও তারা জানান, এখানে কিছু একটা হোক আমরাও চাই। আমরা দেখতে এসেছি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় ভবনটিতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এরপর আরও কয়েক দফায় চলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট। ভবনের লিফট থেকে শুরু করে বাথরুমের বেসিন পর্যন্ত লুট হয়েছে। ভবনটি হয়ে ওঠে পরিত্যক্ত এক ধ্বংসস্তূপ।
স্থানীয়রা বলছেন, গত এক বছর ভবনটির নিচতলা ব্যবহৃত হয়েছে শৌচাগার হিসেবে। জমে থাকা মলমুত্রের গন্ধে পথচারীদের চলাচল ছিল দুর্বিষহ। এখন সেখানে ব্যানার টাঙানো ও পরিষ্কারের কার্যক্রম নতুন করে কৌতূহল তৈরি করেছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। তবে কারা কী করছেন জানেন না।
ভবনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন পথচারী মঈদ উদ্দিন। তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল যখন ফ্যাসিবাদে পর্যবসিত হয়, তখন তার ভবিষ্যৎ কী হয়, তা এই ভবনটি দেখলেই বোঝা যায়। দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া।
এমআই/জেবি