ঢাকা মেইল ডেস্ক
২০ জুন ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
গেল বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, ঢাকায় তারেক রহমানের থাকার জন্য বাড়ির প্রস্তুতি চলছে। তবু প্রশ্ন থেকে গেছে, ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি কেন দেশে ফিরছেন না?
দীর্ঘ এই সময় বিশ্লেষণে দেখা গেছে— ৫ আগস্টের পর দ্রুত তারেক রহমান প্রায় সব মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ যেসব মামলায় সাজা হয়েছিল, সেসব থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, বর্তমানে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে আইনি কোনো বাধা নেই।
তবু দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা হয়নি। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর বিদেশে থাকা তারেক রহমান কবে আসবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিএনপির ঘনিষ্ঠরা বলছেন— তিনি দেশে ফিরেই দলকে নেতৃত্ব দেবেন। এই কারণে ২০২৫ সালের মধ্যেই দেশে আসার সম্ভাবনা বেশি।
তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন জানিয়েছেন, কোনো চূড়ান্ত তারিখ হয়নি, তবে নির্বাচনের আগে তিনি দেশে আসবেন। এই সিদ্ধান্ত তারেক নিজেই নেবেন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি খুব দ্রুতই, ইনশাআল্লাহ, আগামী বছরের রমজানের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। সে অনুযায়ী তারেক রহমানও অবশ্যই আসবেন। যথোপযুক্ত আইনি ও রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হলে তিনি নির্বাচনের আগে আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন।
সম্প্রতি লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমান নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখ করে যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে। বৈঠকে তারেক রহমানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবিরও ছিলেন।
হুমায়ুন কবির বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই তারেক দেশে ফিরে দলকে নেতৃত্ব দেবেন। তিনি বলেন, প্রথমে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে, তারপর ইনশাআল্লাহ তারেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে আসবেন। দেশের মানুষ তাকে এই বছরই পাবে।
তবে এত দিনেও দেশে না ফেরার এক বড় কারণ হলো— নিরাপত্তা। আইনি বাধা দূর হলেও তারেকের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। হুমায়ুন কবির বলেন, আইনি এবং নিরাপত্তার বিষয় আলাদা। বড় রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তার উদ্বেগ স্বাভাবিক। এশিয়া বা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এটি নতুন কিছু নয়। তিনি আরও বলেন, তারেক অবশ্যই আসবেন, তবে আসার আগে প্রস্তুতি দরকার। সরকারেরও নিশ্চিত করতে হবে একটি নিরাপদ পরিবেশ, যেখানে রাজনৈতিক নেতারা নিরাপদ থাকবেন।
বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে তারেক রহমানই প্রধান নেতা। আগামী নির্বাচনে তার নেতৃত্বে দল অংশ নেবে। ধারণা করা হয়, ক্ষমতায় এলে তিনিই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন।
নিরাপত্তাহীনতার কারণ সম্পর্কে হুমায়ুন কবির বলেন, গত পনের বছরে অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে। কাউকে তুলে নেওয়া হয়েছে বা হত্যার শঙ্কা রয়েছে। রাজনীতির সঙ্গে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী দলীয়করণ হয়েছে। এসব ঠিক করতে সরকারের স্পেস দরকার। আশা করি শিগগিরই সেটি হবে।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালে তিনি লন্ডনে যান এবং সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। বিএনপির মরহুম নেতা মওদুদ আহমদ লিখেছেন, খালেদা জিয়া হয়তো জেনারেলদের সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন যাতে তারেক রাজনীতিতে জড়াবেন না, তারেকও হয়তো সম্মতিপত্র দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, একাদশ সরকারের সময় তাকে বাধ্য করা হয়েছিল বিদেশে যেতে। চিকিৎসাও তার এক কারণ ছিল। তিনি বলেন, তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে খালেদার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এখন সেই সেনা নেতৃত্ব নেই, তাই সমস্যা কমে গেছে।
তবে রাজনীতির প্রতিহিংসাপরায়ণতা থেকে আশঙ্কা থেকে যায়। তার বিরুদ্ধে পূর্বে যে আচরণ হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো এতে জড়িত ছিল। তারা ভাবতে পারে তিনি ফিরে এলে প্রতিশোধ নিতে পারেন।
মহিউদ্দিন আরও বলেন, তারেকের ফেরাটা নির্বাচনের শোডাউনের অংশ হতে পারে। নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলে তিনি আসবেন। শোনা যাচ্ছে—লাখ লাখ মানুষ বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে পারে।
তিনি যোগ করেন, তারেক তখনই আসবেন, যখন দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হবেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নিশ্চয়তা পাবে। তিনি বলেন, যদি নির্বাচন ভালো না হয় বা তিনি প্রধানমন্ত্রী না হন, তাহলে আরাম-আয়েশের জীবন ছেড়ে আসার কারণ নেই।
দেশে ফেরার পর তিনি কোথায় থাকবেন, সেই বাড়ির প্রস্তুতি চলছে। সেখানে পুলিশ প্রহরা দিচ্ছে। দলীয় নেতারা বলছেন, দেশে ফেরার সময় ও স্থান চূড়ান্ত করবেন তারেক নিজেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশ ও দলের প্রয়োজন মেটাতে তারেকও সচেতন, আমরাও সচেতন। তবে টেকনিক্যাল কিছু বিষয় আছে, যা বলা যাচ্ছে না। সব বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সূত্র: বিবিসি
এইউ