images

রাজনীতি

ভোট নিয়ে ছাড়ের ভাবনা বিএনপিতে

বোরহান উদ্দিন

১২ জুন ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতে আগামী ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট করে ডিসেম্বরের মধ্যেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি তোলা হয়। সবশেষ নিজেদের অনড় অবস্থান আরও পরিষ্কার হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে এমন বক্তব্যে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় অবস্থান বদলে সর্বোচ্চ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে জোর দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি।
 
অবশ্য সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলায় ভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে কিছুটা উত্তাপ্ত ছড়ায়। এমন কি বিএনপির পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন যাওয়ার কোনো কারণ নেই! কিন্তু সরকার ও বিএনপির মধ্যকার এমন বিপরীত অবস্থান হঠাৎ বদলে গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে বিরোধে না জড়ানোর নির্দেশনায় অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। নেতারাও নির্বাচন নিয়ে কিছুটা নরম সুরে কথা বলছেন।
 
অন্যদিকে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের আসন্ন বৈঠককে ঘিরে রাজনীতির ভেতরে-বাইরের আলোচনায় সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। নির্বাচন, সংস্কার ও আগামী দিনে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত আসবে এমন প্রত্যাশার কথা বলছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেখানে সর্বোচ্চ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনেরও প্রস্তাব সরকারকে দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র বলছে, বৈঠকে তারেক রহমান ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন। গণহত্যার বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে সরকারের কাছে দলের অবস্থান তুলে ধরবেন। বিষয়গুলো নিয়ে দ্রুত কীভাবে অগ্রসর হওয়া যায় তাও তিনি তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।

terek-rahman
যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি ‍যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। 

একাধিবার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে বারবার বক্তব্য দেওয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার (১০ জুন) নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের দল। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে চাই। যখন সবাই চাইবে, একমত হবে তখন নির্বাচন হবে তাতে তো অসুবিধা নেই।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিজেও জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। বিএনপিসহ একাধিক দলের পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরার পর সরকার নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে। ঈদের ঠিক আগের দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমন অবস্থায় অনড় অবস্থান থেকে সরে আসা উচিত বলে মনে করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামও এমনটা মনে করেন।
 
এমন পরিস্থিতিতে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে না জড়ানোর নির্দেশনা দেন বলে খরচ চাউর হয়। এরপরই পরিস্থিতিও অনেকটা বদলে যায়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাক্ষাৎকালে দেশের স্বার্থে ও দলের স্বার্থে নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি নেতাদের আলোচনার টেবিলে সমঝোতার দিক-নির্দেশনা দেন। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করে, সেই চেষ্টা করতে নেতাদের পরামর্শ দেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন এও বলেছেন যে, ‘আন্দোলন করলে হয়তো এ সরকার টিকবে না। সেটা হলে আবার কে আসবে। তার চেয়ে এ সরকার যাতে নির্বাচন দেয়, সবাই সেই চেষ্টা করেন।’ 

আরও পড়ুন-

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি চাইছে নির্বাচন যেকোনো মূল্যে ফেব্রুয়ারির মধ্যে হয়। শুক্রবার (১৩ জুন) যুক্তরাজ্য সফররত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হতে পারে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই সনদকে আলোচনার টেবিলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
 
নির্ধারিত সময় অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৯টায় লন্ডনের হোটেল ডোরচেস্টারে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এক ধরনের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে এটি। ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকের কথা শোনা গেলেও ইতিমধ্যে লন্ডন যাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও বৈঠকে থাকবেন এমন গুঞ্জন আছে। তবে এ বিষয় এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
 
জানা গেছে, মূলত বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে তাদের মধ্যে। একদিকে সরকারপ্রধান ও অন্যদিকে বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকে অনেক বিষয়ের সুরাহা হবে আশা করা যাচ্ছে।
 
বৈঠকের বিষয় নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন যদি ফেব্রুয়ারি মাসে হয় তা হলে আমাদের আপত্তি নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’

Untitled3
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

নির্বাচন ছাড়াও বৈঠকে সরকারের নিরপেক্ষতা, সংস্কার, আইনের শাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।
 
এরআগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকটিকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বড় ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে, অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে তিনি মনে করছেন। 
 
অন্যদিকে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে অনুষ্ঠেয় বৈঠক প্রসঙ্গে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘গোটা জাতি আজ লন্ডনের দিকে তাকিয়ে। বিশ্বাস করি, এটি হবে ঐতিহাসিক বৈঠক এবং এ বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে।’
 
নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে ডিসেম্বরে নির্বাচনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে বিএনপি। যৌক্তিক সময়েই নির্বাচন হবে বলে জাতি প্রত্যাশা করে। আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনসহ সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। 

বৈঠকে আলোচনায় সরকার জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে বলেও আলোচনা আছে।

প্রধান উপদেষ্টা গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে উল্লেখ করেছেন, আগামী জুলাই মাসেই সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করে আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব বলে আশা করছি।
 
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও বৈঠকের বিষয়ে জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনের তারিখ, জুলাই সনদ ও সংস্কারের মতো বিষয়গুলো মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনায় থাকতে পারে।

বিইউ/ইএ